মামুনুর রশীদ

ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানেও যাত্রীর চেয়ে বাইক বেশি।
কয়েক মাস আগে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও এমন বেড়ে গিয়েছিল যে তা শহরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণকে জটিল করে তুলেছিল। আসলে বাঙালি যখন যেখানে কাঁচা পয়সা দেখে, সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষিতে কাজ করা শ্রমিকেরা সে কাজটি ফেলে রেখে ঢাকা শহরে রিকশা চালাতে চলে এসেছেন। কারণ, এখানে কাঁচা নগদ টাকা আছে এবং সেই সঙ্গে উপার্জনও অনেক বেশি।
আমি যখন ঢাকা শহরে আসি, তখন রিকশা ভাড়া দুই আনা, চার আনাও ছিল। এখন ন্যূনতম রিকশা ভাড়া কুড়ি টাকায় পৌঁছেছে। রিকশাওয়ালাদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে তাঁরা রাজপথকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় তাঁরা যন্ত্রচালিত গাড়ির চালকদের নির্দেশ করে থাকেন। কখনো কখনো রিকশাওয়ালাদের দানবের মতো মনে হয়। অযৌক্তিক ভাড়া চেয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বচসা থেকে হাতাহাতি, মারামারি এগুলোও নিয়মিত ঘটে। পৃথিবীর কোনো রাজপথে একসঙ্গে এত ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায় না আর রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে তো নয়ই। বাস, ট্রাক, কনটেইনার, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা—সবকিছু চলছে। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ, সামলাতে পারছে না অথবা সামলানোর চেষ্টাও করছে না। সাধারণ মানুষ এগুলোতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদও শিথিল হয়ে পড়ছে। সব জায়গায় একই জবাব, যানজটে দেরি হয়ে গেল।
আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখন খোদ ঢাকা শহরে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলারই একটা প্রতিফলন। শহরে গণপরিবহন সংখ্যায় অপ্রতুল। মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদের আয়েশি ভ্রমণের একটা বড় যানবাহন হচ্ছে রিকশা, যেহেতু বাসের সিট পাওয়া যাবে না, সিএনজি, ট্যাক্সির ভাড়া দেওয়ার সাধ্য নেই এবং কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন থাকলে রিকশাই একমাত্র সহায়। রিকশা অবশ্য এখন দূরপাল্লার যাত্রীও বহন করে। সে ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়। যাত্রীরাও সেগুলো সহ্য করে।
ঢাকা শহরে বাসের ভাড়াও রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। আসছে মেট্রোরেল, তার ভাড়াও কম নয়। মেট্রোরেল দিয়েও শহরের যাতায়াতের সংকট কমবে না। যানজট কমার তো বিন্দুমাত্র কারণ নেই। যদি পাতালরেল হতো, তাহলে যানজট এবং যাত্রীদের সংকট হয়তো অনেকাংশেই কমে যেত। পাশের দেশ ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতায় ব্যাপকভাবে যাত্রী পরিবহনের উপায় করে দিয়েছে পাতালরেল। আর মুম্বাই শহরের রেল বহু বছর আগে থেকেই যাত্রী সহায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে সরকার রেলের ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু সামরিক শাসন এলে রেলের জায়গা দখল করে বাস, ট্রাক, সঙ্গে আসে স্কুটার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ঢাকা শহরের অলংকার রিকশা।
শুধু ঢাকা শহর নয়, অন্য জেলা শহরগুলোতেও রিকশা প্রবল প্রতাপে তার সংখ্যা বাড়িয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে একজনের ঘাড়ে করে দুজন যাত্রী কী আনন্দে যাতায়াত করছে, প্রেম-ভালোবাসার কথা বলছে আর তাদের সামনেই রিকশাওয়ালার গা থেকে পড়ছে ঘাম। কালক্রমে রিকশাভাড়া বেশি হয়ে গেছে, রিকশাওয়ালার ক্ষমতা বেড়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহারের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই চালকদের প্রতি যাত্রীদের মানবিক বোধটাও কমে গেছে। এই যে লাখ লাখ রিকশাওয়ালা, তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো ভাবনাও দেখা যায় না।
ওদিকে কৃষিতে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। ধান তোলার সময় হলে অনেক উচ্চমূল্যে শ্রমিকদের নিতে হয়। তাতে ফসলের যে দামটা বাড়ে, সেই দামে ফসল বিক্রি করা সম্ভব হয় না। রিকশা চলাচল হঠাৎ করে যে বন্ধ করে দেওয়া হবে, তারও উপায় নেই। কারণ তাঁদের জীবিকা কোথায়? নিশ্চয়ই এর একটা উপায় আছে, কিন্তু সে উপায় করবে কে? এই রিকশাওয়ালারা আবার একটা রাজনৈতিক শক্তি। রিকশার মালিকেরা একধরনের খুদে মালিকানা পরিচালনা করে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সামনে ভোট আসছে, ভোটে রিকশাওয়ালাদের লাগবে। ভোট একটি মূল্যবান বিষয়।
কিন্তু এই রিকশাওয়ালারা যেমন পরিশ্রমী, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী এবং সঞ্চয়হীন। নানা ধরনের বদভ্যাসে তাঁরা অভ্যস্ত। একাধিক বিবাহ, প্রতারণার সঙ্গেও কিছু কিছু রিকশাওয়ালা জড়িত থাকেন এবং বাংলা চলচ্চিত্রের প্রভাবে একটা ফ্যান্টাসির ঘোরে জীবন কাটান।
অনেক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাকেও দেখা যায়, যাঁরা জীবিকার জন্য মরণপণ করে রিকশা চালান। এইসব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সংবিধানে যেভাবে বর্ণিত আছে, সেভাবে সরকার কি ভেবেছে? হঠাৎ করে কোনো রাস্তাকে ভিআইপি আখ্যা দিয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলেও কিছু রিকশাকে হয়তো তুলে নিয়ে চালান দিয়ে দিল। কিন্তু দেখা গেল কিছুদিন পরেই আবার ওই রাস্তায়ই রিকশাগুলো চলতে শুরু করল। ভিআইপি রাস্তা বলে আর কিছু থাকল না। অবশ্য ঢাকা শহরটাই তো ভিআইপিদের শহর। যে শহরে আদিম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলে, শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই, কিন্তু ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে! পৃথিবীর কোথাও কোনো রাজধানী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। একমাত্র সুশৃঙ্খল ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, যেখানে কোনো যানজট নেই। কারণ সেখানে আইন কড়া। গতি লঙ্ঘন করলে, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানলে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা শহরে সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ প্রচুর পরিমাণে দৃশ্যমান। প্রাচীন পদ্ধতিতে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই অনভিজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশ শহরের গাড়িঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। বহু লেখালেখি, বহু দেনদরবার করেও এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় না। সরকার সম্ভবত এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন চায় না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা নেই। পুলিশের একটি বিভাগ এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু এর পেছনে কোনো সুদূরপ্রসারী ভাবনা নেই। প্রতিনিয়ত লক্ষকোটি মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, তা দেখারও কোনো লোক নেই। প্রতিদিন যেমন শত শত রিকশা নামছে, তেমনি নামছে বড় বড় গাড়ি। এই বড় বড় গাড়ি ছোট ছোট তিনটি গাড়ির সমান।
বিআরটিএ বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা গাড়ির লাইসেন্স, রুট পারমিট এগুলো দিয়ে থাকে। এদের বড় বড় অফিস আছে, কর্মকর্তা, কর্মচারী আছেন, কিন্তু কোনো আইনকানুন বা সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই। একটি শহরে রাস্তার আয়তন কতটুকু এবং সেই আয়তনের মধ্যে কতগুলো গাড়ি চলতে পারে, তা তাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। গাড়ি কিনলেই রাস্তায় চলার অধিকার পাওয়া যায়। সরকার রাস্তা প্রশস্ত করছে। ফোর লেন, সিক্স লেন রাস্তা হচ্ছে বটে, কিন্তু দুটি লেন থেকে যাচ্ছে প্রভাবশালী ট্রাকমালিক, বাসমালিকদের গ্যারেজ হিসেবে। কয়েক দিন আগেও টঙ্গীতে অবৈধভাবে ট্রাকগুলো পার্কিং করার কারণে পুলিশ যখন ব্যবস্থা নিচ্ছিল, তখন ট্রাকশ্রমিকেরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে পুলিশকে আহত করেছে। খবর নিয়ে দেখা যাবে, ওই ট্রাকমালিকেরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাস, ট্রাকের মালিকেরা গাড়ি কিনবেন কিন্তু তাঁদের গাড়ির গ্যারেজ নেই। রাজপথ দখল করাই তাঁদের একমাত্র উপায়।
যাকগে, রিকশাওয়ালাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম। তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কিছু জরুরি ভাবনার প্রয়োজন। কারণ, এই জনগোষ্ঠীর পরিবার আছে, সন্তানসন্ততি আছে এবং যদি এভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলেও একটা বড় সমস্যা অচিরেই তৈরি হবে। দেশে অনেক এনজিও আছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে যুক্ত থাকে। কিছু এনজিওকে যদি রিকশাওয়ালাদের পুনর্বাসন কাজে নিয়োগ করা যায়, তাহলে হয়তো একটা পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সরকারের হাতে দিলে কিছু অসৎ লোকের জন্য তা প্রবল দুর্নীতিতে এবং সময়ক্ষেপণে নিঃশেষিত হয়ে যেতে পারে।

ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানেও যাত্রীর চেয়ে বাইক বেশি।
কয়েক মাস আগে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও এমন বেড়ে গিয়েছিল যে তা শহরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণকে জটিল করে তুলেছিল। আসলে বাঙালি যখন যেখানে কাঁচা পয়সা দেখে, সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষিতে কাজ করা শ্রমিকেরা সে কাজটি ফেলে রেখে ঢাকা শহরে রিকশা চালাতে চলে এসেছেন। কারণ, এখানে কাঁচা নগদ টাকা আছে এবং সেই সঙ্গে উপার্জনও অনেক বেশি।
আমি যখন ঢাকা শহরে আসি, তখন রিকশা ভাড়া দুই আনা, চার আনাও ছিল। এখন ন্যূনতম রিকশা ভাড়া কুড়ি টাকায় পৌঁছেছে। রিকশাওয়ালাদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে তাঁরা রাজপথকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় তাঁরা যন্ত্রচালিত গাড়ির চালকদের নির্দেশ করে থাকেন। কখনো কখনো রিকশাওয়ালাদের দানবের মতো মনে হয়। অযৌক্তিক ভাড়া চেয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বচসা থেকে হাতাহাতি, মারামারি এগুলোও নিয়মিত ঘটে। পৃথিবীর কোনো রাজপথে একসঙ্গে এত ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায় না আর রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে তো নয়ই। বাস, ট্রাক, কনটেইনার, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা—সবকিছু চলছে। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ, সামলাতে পারছে না অথবা সামলানোর চেষ্টাও করছে না। সাধারণ মানুষ এগুলোতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদও শিথিল হয়ে পড়ছে। সব জায়গায় একই জবাব, যানজটে দেরি হয়ে গেল।
আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখন খোদ ঢাকা শহরে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলারই একটা প্রতিফলন। শহরে গণপরিবহন সংখ্যায় অপ্রতুল। মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদের আয়েশি ভ্রমণের একটা বড় যানবাহন হচ্ছে রিকশা, যেহেতু বাসের সিট পাওয়া যাবে না, সিএনজি, ট্যাক্সির ভাড়া দেওয়ার সাধ্য নেই এবং কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন থাকলে রিকশাই একমাত্র সহায়। রিকশা অবশ্য এখন দূরপাল্লার যাত্রীও বহন করে। সে ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়। যাত্রীরাও সেগুলো সহ্য করে।
ঢাকা শহরে বাসের ভাড়াও রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। আসছে মেট্রোরেল, তার ভাড়াও কম নয়। মেট্রোরেল দিয়েও শহরের যাতায়াতের সংকট কমবে না। যানজট কমার তো বিন্দুমাত্র কারণ নেই। যদি পাতালরেল হতো, তাহলে যানজট এবং যাত্রীদের সংকট হয়তো অনেকাংশেই কমে যেত। পাশের দেশ ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতায় ব্যাপকভাবে যাত্রী পরিবহনের উপায় করে দিয়েছে পাতালরেল। আর মুম্বাই শহরের রেল বহু বছর আগে থেকেই যাত্রী সহায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে সরকার রেলের ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু সামরিক শাসন এলে রেলের জায়গা দখল করে বাস, ট্রাক, সঙ্গে আসে স্কুটার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ঢাকা শহরের অলংকার রিকশা।
শুধু ঢাকা শহর নয়, অন্য জেলা শহরগুলোতেও রিকশা প্রবল প্রতাপে তার সংখ্যা বাড়িয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে একজনের ঘাড়ে করে দুজন যাত্রী কী আনন্দে যাতায়াত করছে, প্রেম-ভালোবাসার কথা বলছে আর তাদের সামনেই রিকশাওয়ালার গা থেকে পড়ছে ঘাম। কালক্রমে রিকশাভাড়া বেশি হয়ে গেছে, রিকশাওয়ালার ক্ষমতা বেড়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহারের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই চালকদের প্রতি যাত্রীদের মানবিক বোধটাও কমে গেছে। এই যে লাখ লাখ রিকশাওয়ালা, তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো ভাবনাও দেখা যায় না।
ওদিকে কৃষিতে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। ধান তোলার সময় হলে অনেক উচ্চমূল্যে শ্রমিকদের নিতে হয়। তাতে ফসলের যে দামটা বাড়ে, সেই দামে ফসল বিক্রি করা সম্ভব হয় না। রিকশা চলাচল হঠাৎ করে যে বন্ধ করে দেওয়া হবে, তারও উপায় নেই। কারণ তাঁদের জীবিকা কোথায়? নিশ্চয়ই এর একটা উপায় আছে, কিন্তু সে উপায় করবে কে? এই রিকশাওয়ালারা আবার একটা রাজনৈতিক শক্তি। রিকশার মালিকেরা একধরনের খুদে মালিকানা পরিচালনা করে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সামনে ভোট আসছে, ভোটে রিকশাওয়ালাদের লাগবে। ভোট একটি মূল্যবান বিষয়।
কিন্তু এই রিকশাওয়ালারা যেমন পরিশ্রমী, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী এবং সঞ্চয়হীন। নানা ধরনের বদভ্যাসে তাঁরা অভ্যস্ত। একাধিক বিবাহ, প্রতারণার সঙ্গেও কিছু কিছু রিকশাওয়ালা জড়িত থাকেন এবং বাংলা চলচ্চিত্রের প্রভাবে একটা ফ্যান্টাসির ঘোরে জীবন কাটান।
অনেক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাকেও দেখা যায়, যাঁরা জীবিকার জন্য মরণপণ করে রিকশা চালান। এইসব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সংবিধানে যেভাবে বর্ণিত আছে, সেভাবে সরকার কি ভেবেছে? হঠাৎ করে কোনো রাস্তাকে ভিআইপি আখ্যা দিয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলেও কিছু রিকশাকে হয়তো তুলে নিয়ে চালান দিয়ে দিল। কিন্তু দেখা গেল কিছুদিন পরেই আবার ওই রাস্তায়ই রিকশাগুলো চলতে শুরু করল। ভিআইপি রাস্তা বলে আর কিছু থাকল না। অবশ্য ঢাকা শহরটাই তো ভিআইপিদের শহর। যে শহরে আদিম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলে, শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই, কিন্তু ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে! পৃথিবীর কোথাও কোনো রাজধানী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। একমাত্র সুশৃঙ্খল ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, যেখানে কোনো যানজট নেই। কারণ সেখানে আইন কড়া। গতি লঙ্ঘন করলে, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানলে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা শহরে সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ প্রচুর পরিমাণে দৃশ্যমান। প্রাচীন পদ্ধতিতে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই অনভিজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশ শহরের গাড়িঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। বহু লেখালেখি, বহু দেনদরবার করেও এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় না। সরকার সম্ভবত এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন চায় না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা নেই। পুলিশের একটি বিভাগ এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু এর পেছনে কোনো সুদূরপ্রসারী ভাবনা নেই। প্রতিনিয়ত লক্ষকোটি মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, তা দেখারও কোনো লোক নেই। প্রতিদিন যেমন শত শত রিকশা নামছে, তেমনি নামছে বড় বড় গাড়ি। এই বড় বড় গাড়ি ছোট ছোট তিনটি গাড়ির সমান।
বিআরটিএ বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা গাড়ির লাইসেন্স, রুট পারমিট এগুলো দিয়ে থাকে। এদের বড় বড় অফিস আছে, কর্মকর্তা, কর্মচারী আছেন, কিন্তু কোনো আইনকানুন বা সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই। একটি শহরে রাস্তার আয়তন কতটুকু এবং সেই আয়তনের মধ্যে কতগুলো গাড়ি চলতে পারে, তা তাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। গাড়ি কিনলেই রাস্তায় চলার অধিকার পাওয়া যায়। সরকার রাস্তা প্রশস্ত করছে। ফোর লেন, সিক্স লেন রাস্তা হচ্ছে বটে, কিন্তু দুটি লেন থেকে যাচ্ছে প্রভাবশালী ট্রাকমালিক, বাসমালিকদের গ্যারেজ হিসেবে। কয়েক দিন আগেও টঙ্গীতে অবৈধভাবে ট্রাকগুলো পার্কিং করার কারণে পুলিশ যখন ব্যবস্থা নিচ্ছিল, তখন ট্রাকশ্রমিকেরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে পুলিশকে আহত করেছে। খবর নিয়ে দেখা যাবে, ওই ট্রাকমালিকেরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাস, ট্রাকের মালিকেরা গাড়ি কিনবেন কিন্তু তাঁদের গাড়ির গ্যারেজ নেই। রাজপথ দখল করাই তাঁদের একমাত্র উপায়।
যাকগে, রিকশাওয়ালাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম। তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কিছু জরুরি ভাবনার প্রয়োজন। কারণ, এই জনগোষ্ঠীর পরিবার আছে, সন্তানসন্ততি আছে এবং যদি এভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলেও একটা বড় সমস্যা অচিরেই তৈরি হবে। দেশে অনেক এনজিও আছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে যুক্ত থাকে। কিছু এনজিওকে যদি রিকশাওয়ালাদের পুনর্বাসন কাজে নিয়োগ করা যায়, তাহলে হয়তো একটা পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সরকারের হাতে দিলে কিছু অসৎ লোকের জন্য তা প্রবল দুর্নীতিতে এবং সময়ক্ষেপণে নিঃশেষিত হয়ে যেতে পারে।
মামুনুর রশীদ

ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানেও যাত্রীর চেয়ে বাইক বেশি।
কয়েক মাস আগে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও এমন বেড়ে গিয়েছিল যে তা শহরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণকে জটিল করে তুলেছিল। আসলে বাঙালি যখন যেখানে কাঁচা পয়সা দেখে, সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষিতে কাজ করা শ্রমিকেরা সে কাজটি ফেলে রেখে ঢাকা শহরে রিকশা চালাতে চলে এসেছেন। কারণ, এখানে কাঁচা নগদ টাকা আছে এবং সেই সঙ্গে উপার্জনও অনেক বেশি।
আমি যখন ঢাকা শহরে আসি, তখন রিকশা ভাড়া দুই আনা, চার আনাও ছিল। এখন ন্যূনতম রিকশা ভাড়া কুড়ি টাকায় পৌঁছেছে। রিকশাওয়ালাদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে তাঁরা রাজপথকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় তাঁরা যন্ত্রচালিত গাড়ির চালকদের নির্দেশ করে থাকেন। কখনো কখনো রিকশাওয়ালাদের দানবের মতো মনে হয়। অযৌক্তিক ভাড়া চেয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বচসা থেকে হাতাহাতি, মারামারি এগুলোও নিয়মিত ঘটে। পৃথিবীর কোনো রাজপথে একসঙ্গে এত ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায় না আর রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে তো নয়ই। বাস, ট্রাক, কনটেইনার, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা—সবকিছু চলছে। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ, সামলাতে পারছে না অথবা সামলানোর চেষ্টাও করছে না। সাধারণ মানুষ এগুলোতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদও শিথিল হয়ে পড়ছে। সব জায়গায় একই জবাব, যানজটে দেরি হয়ে গেল।
আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখন খোদ ঢাকা শহরে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলারই একটা প্রতিফলন। শহরে গণপরিবহন সংখ্যায় অপ্রতুল। মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদের আয়েশি ভ্রমণের একটা বড় যানবাহন হচ্ছে রিকশা, যেহেতু বাসের সিট পাওয়া যাবে না, সিএনজি, ট্যাক্সির ভাড়া দেওয়ার সাধ্য নেই এবং কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন থাকলে রিকশাই একমাত্র সহায়। রিকশা অবশ্য এখন দূরপাল্লার যাত্রীও বহন করে। সে ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়। যাত্রীরাও সেগুলো সহ্য করে।
ঢাকা শহরে বাসের ভাড়াও রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। আসছে মেট্রোরেল, তার ভাড়াও কম নয়। মেট্রোরেল দিয়েও শহরের যাতায়াতের সংকট কমবে না। যানজট কমার তো বিন্দুমাত্র কারণ নেই। যদি পাতালরেল হতো, তাহলে যানজট এবং যাত্রীদের সংকট হয়তো অনেকাংশেই কমে যেত। পাশের দেশ ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতায় ব্যাপকভাবে যাত্রী পরিবহনের উপায় করে দিয়েছে পাতালরেল। আর মুম্বাই শহরের রেল বহু বছর আগে থেকেই যাত্রী সহায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে সরকার রেলের ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু সামরিক শাসন এলে রেলের জায়গা দখল করে বাস, ট্রাক, সঙ্গে আসে স্কুটার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ঢাকা শহরের অলংকার রিকশা।
শুধু ঢাকা শহর নয়, অন্য জেলা শহরগুলোতেও রিকশা প্রবল প্রতাপে তার সংখ্যা বাড়িয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে একজনের ঘাড়ে করে দুজন যাত্রী কী আনন্দে যাতায়াত করছে, প্রেম-ভালোবাসার কথা বলছে আর তাদের সামনেই রিকশাওয়ালার গা থেকে পড়ছে ঘাম। কালক্রমে রিকশাভাড়া বেশি হয়ে গেছে, রিকশাওয়ালার ক্ষমতা বেড়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহারের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই চালকদের প্রতি যাত্রীদের মানবিক বোধটাও কমে গেছে। এই যে লাখ লাখ রিকশাওয়ালা, তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো ভাবনাও দেখা যায় না।
ওদিকে কৃষিতে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। ধান তোলার সময় হলে অনেক উচ্চমূল্যে শ্রমিকদের নিতে হয়। তাতে ফসলের যে দামটা বাড়ে, সেই দামে ফসল বিক্রি করা সম্ভব হয় না। রিকশা চলাচল হঠাৎ করে যে বন্ধ করে দেওয়া হবে, তারও উপায় নেই। কারণ তাঁদের জীবিকা কোথায়? নিশ্চয়ই এর একটা উপায় আছে, কিন্তু সে উপায় করবে কে? এই রিকশাওয়ালারা আবার একটা রাজনৈতিক শক্তি। রিকশার মালিকেরা একধরনের খুদে মালিকানা পরিচালনা করে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সামনে ভোট আসছে, ভোটে রিকশাওয়ালাদের লাগবে। ভোট একটি মূল্যবান বিষয়।
কিন্তু এই রিকশাওয়ালারা যেমন পরিশ্রমী, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী এবং সঞ্চয়হীন। নানা ধরনের বদভ্যাসে তাঁরা অভ্যস্ত। একাধিক বিবাহ, প্রতারণার সঙ্গেও কিছু কিছু রিকশাওয়ালা জড়িত থাকেন এবং বাংলা চলচ্চিত্রের প্রভাবে একটা ফ্যান্টাসির ঘোরে জীবন কাটান।
অনেক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাকেও দেখা যায়, যাঁরা জীবিকার জন্য মরণপণ করে রিকশা চালান। এইসব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সংবিধানে যেভাবে বর্ণিত আছে, সেভাবে সরকার কি ভেবেছে? হঠাৎ করে কোনো রাস্তাকে ভিআইপি আখ্যা দিয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলেও কিছু রিকশাকে হয়তো তুলে নিয়ে চালান দিয়ে দিল। কিন্তু দেখা গেল কিছুদিন পরেই আবার ওই রাস্তায়ই রিকশাগুলো চলতে শুরু করল। ভিআইপি রাস্তা বলে আর কিছু থাকল না। অবশ্য ঢাকা শহরটাই তো ভিআইপিদের শহর। যে শহরে আদিম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলে, শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই, কিন্তু ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে! পৃথিবীর কোথাও কোনো রাজধানী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। একমাত্র সুশৃঙ্খল ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, যেখানে কোনো যানজট নেই। কারণ সেখানে আইন কড়া। গতি লঙ্ঘন করলে, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানলে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা শহরে সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ প্রচুর পরিমাণে দৃশ্যমান। প্রাচীন পদ্ধতিতে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই অনভিজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশ শহরের গাড়িঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। বহু লেখালেখি, বহু দেনদরবার করেও এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় না। সরকার সম্ভবত এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন চায় না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা নেই। পুলিশের একটি বিভাগ এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু এর পেছনে কোনো সুদূরপ্রসারী ভাবনা নেই। প্রতিনিয়ত লক্ষকোটি মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, তা দেখারও কোনো লোক নেই। প্রতিদিন যেমন শত শত রিকশা নামছে, তেমনি নামছে বড় বড় গাড়ি। এই বড় বড় গাড়ি ছোট ছোট তিনটি গাড়ির সমান।
বিআরটিএ বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা গাড়ির লাইসেন্স, রুট পারমিট এগুলো দিয়ে থাকে। এদের বড় বড় অফিস আছে, কর্মকর্তা, কর্মচারী আছেন, কিন্তু কোনো আইনকানুন বা সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই। একটি শহরে রাস্তার আয়তন কতটুকু এবং সেই আয়তনের মধ্যে কতগুলো গাড়ি চলতে পারে, তা তাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। গাড়ি কিনলেই রাস্তায় চলার অধিকার পাওয়া যায়। সরকার রাস্তা প্রশস্ত করছে। ফোর লেন, সিক্স লেন রাস্তা হচ্ছে বটে, কিন্তু দুটি লেন থেকে যাচ্ছে প্রভাবশালী ট্রাকমালিক, বাসমালিকদের গ্যারেজ হিসেবে। কয়েক দিন আগেও টঙ্গীতে অবৈধভাবে ট্রাকগুলো পার্কিং করার কারণে পুলিশ যখন ব্যবস্থা নিচ্ছিল, তখন ট্রাকশ্রমিকেরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে পুলিশকে আহত করেছে। খবর নিয়ে দেখা যাবে, ওই ট্রাকমালিকেরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাস, ট্রাকের মালিকেরা গাড়ি কিনবেন কিন্তু তাঁদের গাড়ির গ্যারেজ নেই। রাজপথ দখল করাই তাঁদের একমাত্র উপায়।
যাকগে, রিকশাওয়ালাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম। তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কিছু জরুরি ভাবনার প্রয়োজন। কারণ, এই জনগোষ্ঠীর পরিবার আছে, সন্তানসন্ততি আছে এবং যদি এভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলেও একটা বড় সমস্যা অচিরেই তৈরি হবে। দেশে অনেক এনজিও আছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে যুক্ত থাকে। কিছু এনজিওকে যদি রিকশাওয়ালাদের পুনর্বাসন কাজে নিয়োগ করা যায়, তাহলে হয়তো একটা পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সরকারের হাতে দিলে কিছু অসৎ লোকের জন্য তা প্রবল দুর্নীতিতে এবং সময়ক্ষেপণে নিঃশেষিত হয়ে যেতে পারে।

ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানেও যাত্রীর চেয়ে বাইক বেশি।
কয়েক মাস আগে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও এমন বেড়ে গিয়েছিল যে তা শহরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণকে জটিল করে তুলেছিল। আসলে বাঙালি যখন যেখানে কাঁচা পয়সা দেখে, সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কৃষিতে কাজ করা শ্রমিকেরা সে কাজটি ফেলে রেখে ঢাকা শহরে রিকশা চালাতে চলে এসেছেন। কারণ, এখানে কাঁচা নগদ টাকা আছে এবং সেই সঙ্গে উপার্জনও অনেক বেশি।
আমি যখন ঢাকা শহরে আসি, তখন রিকশা ভাড়া দুই আনা, চার আনাও ছিল। এখন ন্যূনতম রিকশা ভাড়া কুড়ি টাকায় পৌঁছেছে। রিকশাওয়ালাদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে তাঁরা রাজপথকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় তাঁরা যন্ত্রচালিত গাড়ির চালকদের নির্দেশ করে থাকেন। কখনো কখনো রিকশাওয়ালাদের দানবের মতো মনে হয়। অযৌক্তিক ভাড়া চেয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বচসা থেকে হাতাহাতি, মারামারি এগুলোও নিয়মিত ঘটে। পৃথিবীর কোনো রাজপথে একসঙ্গে এত ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায় না আর রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে তো নয়ই। বাস, ট্রাক, কনটেইনার, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা—সবকিছু চলছে। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে অসহায় ট্রাফিক পুলিশ, সামলাতে পারছে না অথবা সামলানোর চেষ্টাও করছে না। সাধারণ মানুষ এগুলোতে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদও শিথিল হয়ে পড়ছে। সব জায়গায় একই জবাব, যানজটে দেরি হয়ে গেল।
আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখন খোদ ঢাকা শহরে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলারই একটা প্রতিফলন। শহরে গণপরিবহন সংখ্যায় অপ্রতুল। মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদের আয়েশি ভ্রমণের একটা বড় যানবাহন হচ্ছে রিকশা, যেহেতু বাসের সিট পাওয়া যাবে না, সিএনজি, ট্যাক্সির ভাড়া দেওয়ার সাধ্য নেই এবং কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন থাকলে রিকশাই একমাত্র সহায়। রিকশা অবশ্য এখন দূরপাল্লার যাত্রীও বহন করে। সে ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়। যাত্রীরাও সেগুলো সহ্য করে।
ঢাকা শহরে বাসের ভাড়াও রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। আসছে মেট্রোরেল, তার ভাড়াও কম নয়। মেট্রোরেল দিয়েও শহরের যাতায়াতের সংকট কমবে না। যানজট কমার তো বিন্দুমাত্র কারণ নেই। যদি পাতালরেল হতো, তাহলে যানজট এবং যাত্রীদের সংকট হয়তো অনেকাংশেই কমে যেত। পাশের দেশ ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতায় ব্যাপকভাবে যাত্রী পরিবহনের উপায় করে দিয়েছে পাতালরেল। আর মুম্বাই শহরের রেল বহু বছর আগে থেকেই যাত্রী সহায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে সরকার রেলের ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু সামরিক শাসন এলে রেলের জায়গা দখল করে বাস, ট্রাক, সঙ্গে আসে স্কুটার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ঢাকা শহরের অলংকার রিকশা।
শুধু ঢাকা শহর নয়, অন্য জেলা শহরগুলোতেও রিকশা প্রবল প্রতাপে তার সংখ্যা বাড়িয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে একজনের ঘাড়ে করে দুজন যাত্রী কী আনন্দে যাতায়াত করছে, প্রেম-ভালোবাসার কথা বলছে আর তাদের সামনেই রিকশাওয়ালার গা থেকে পড়ছে ঘাম। কালক্রমে রিকশাভাড়া বেশি হয়ে গেছে, রিকশাওয়ালার ক্ষমতা বেড়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহারের পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই চালকদের প্রতি যাত্রীদের মানবিক বোধটাও কমে গেছে। এই যে লাখ লাখ রিকশাওয়ালা, তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো ভাবনাও দেখা যায় না।
ওদিকে কৃষিতে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। ধান তোলার সময় হলে অনেক উচ্চমূল্যে শ্রমিকদের নিতে হয়। তাতে ফসলের যে দামটা বাড়ে, সেই দামে ফসল বিক্রি করা সম্ভব হয় না। রিকশা চলাচল হঠাৎ করে যে বন্ধ করে দেওয়া হবে, তারও উপায় নেই। কারণ তাঁদের জীবিকা কোথায়? নিশ্চয়ই এর একটা উপায় আছে, কিন্তু সে উপায় করবে কে? এই রিকশাওয়ালারা আবার একটা রাজনৈতিক শক্তি। রিকশার মালিকেরা একধরনের খুদে মালিকানা পরিচালনা করে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সামনে ভোট আসছে, ভোটে রিকশাওয়ালাদের লাগবে। ভোট একটি মূল্যবান বিষয়।
কিন্তু এই রিকশাওয়ালারা যেমন পরিশ্রমী, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী এবং সঞ্চয়হীন। নানা ধরনের বদভ্যাসে তাঁরা অভ্যস্ত। একাধিক বিবাহ, প্রতারণার সঙ্গেও কিছু কিছু রিকশাওয়ালা জড়িত থাকেন এবং বাংলা চলচ্চিত্রের প্রভাবে একটা ফ্যান্টাসির ঘোরে জীবন কাটান।
অনেক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাকেও দেখা যায়, যাঁরা জীবিকার জন্য মরণপণ করে রিকশা চালান। এইসব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সংবিধানে যেভাবে বর্ণিত আছে, সেভাবে সরকার কি ভেবেছে? হঠাৎ করে কোনো রাস্তাকে ভিআইপি আখ্যা দিয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলেও কিছু রিকশাকে হয়তো তুলে নিয়ে চালান দিয়ে দিল। কিন্তু দেখা গেল কিছুদিন পরেই আবার ওই রাস্তায়ই রিকশাগুলো চলতে শুরু করল। ভিআইপি রাস্তা বলে আর কিছু থাকল না। অবশ্য ঢাকা শহরটাই তো ভিআইপিদের শহর। যে শহরে আদিম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলে, শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই, কিন্তু ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে! পৃথিবীর কোথাও কোনো রাজধানী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। একমাত্র সুশৃঙ্খল ট্রাফিক সিগন্যাল আছে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, যেখানে কোনো যানজট নেই। কারণ সেখানে আইন কড়া। গতি লঙ্ঘন করলে, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানলে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা শহরে সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ প্রচুর পরিমাণে দৃশ্যমান। প্রাচীন পদ্ধতিতে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই অনভিজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশ শহরের গাড়িঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। বহু লেখালেখি, বহু দেনদরবার করেও এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় না। সরকার সম্ভবত এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন চায় না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা নেই। পুলিশের একটি বিভাগ এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু এর পেছনে কোনো সুদূরপ্রসারী ভাবনা নেই। প্রতিনিয়ত লক্ষকোটি মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, তা দেখারও কোনো লোক নেই। প্রতিদিন যেমন শত শত রিকশা নামছে, তেমনি নামছে বড় বড় গাড়ি। এই বড় বড় গাড়ি ছোট ছোট তিনটি গাড়ির সমান।
বিআরটিএ বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা গাড়ির লাইসেন্স, রুট পারমিট এগুলো দিয়ে থাকে। এদের বড় বড় অফিস আছে, কর্মকর্তা, কর্মচারী আছেন, কিন্তু কোনো আইনকানুন বা সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই। একটি শহরে রাস্তার আয়তন কতটুকু এবং সেই আয়তনের মধ্যে কতগুলো গাড়ি চলতে পারে, তা তাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। গাড়ি কিনলেই রাস্তায় চলার অধিকার পাওয়া যায়। সরকার রাস্তা প্রশস্ত করছে। ফোর লেন, সিক্স লেন রাস্তা হচ্ছে বটে, কিন্তু দুটি লেন থেকে যাচ্ছে প্রভাবশালী ট্রাকমালিক, বাসমালিকদের গ্যারেজ হিসেবে। কয়েক দিন আগেও টঙ্গীতে অবৈধভাবে ট্রাকগুলো পার্কিং করার কারণে পুলিশ যখন ব্যবস্থা নিচ্ছিল, তখন ট্রাকশ্রমিকেরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে পুলিশকে আহত করেছে। খবর নিয়ে দেখা যাবে, ওই ট্রাকমালিকেরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাস, ট্রাকের মালিকেরা গাড়ি কিনবেন কিন্তু তাঁদের গাড়ির গ্যারেজ নেই। রাজপথ দখল করাই তাঁদের একমাত্র উপায়।
যাকগে, রিকশাওয়ালাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম। তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের কিছু জরুরি ভাবনার প্রয়োজন। কারণ, এই জনগোষ্ঠীর পরিবার আছে, সন্তানসন্ততি আছে এবং যদি এভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলেও একটা বড় সমস্যা অচিরেই তৈরি হবে। দেশে অনেক এনজিও আছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে যুক্ত থাকে। কিছু এনজিওকে যদি রিকশাওয়ালাদের পুনর্বাসন কাজে নিয়োগ করা যায়, তাহলে হয়তো একটা পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সরকারের হাতে দিলে কিছু অসৎ লোকের জন্য তা প্রবল দুর্নীতিতে এবং সময়ক্ষেপণে নিঃশেষিত হয়ে যেতে পারে।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানে
০৬ অক্টোবর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানে
০৬ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানে
০৬ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ঢাকা শহরটাকে এখন রিকশার শহর বলাই ভালো। পরিবহনের এই প্রাচীন যন্ত্রটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং বাড়তে বাড়তে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে যে অনেক রিকশাতেই যাত্রী দেখা যায় না। তার মানে যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে রিকশার সংখ্যাই বেড়ে গেছে! জেলা শহরগুলোতে যেমন ব্যাটারিচালিত বাইকের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে, সেখানে
০৬ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫