Ajker Patrika

সরকারের মেয়াদ

সম্পাদকীয়
সরকারের মেয়াদ

কোটা সংস্কার আন্দোলন যে এত দ্রুত সরকার পতনের এক দফায় রূপ নিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করবে, সেটা অনেকেরই ভাবনার বাইরে ছিল। বাংলাদেশে এর আগেও একাধিকবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু সরকারপ্রধানের পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের ঘটনা ঘটল এবারই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন ৫ আগস্ট। পরদিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তিন দিন দেশ ছিল সরকারবিহীন। এরপর ৮ আগস্ট রাতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা।

এখন প্রশ্ন উঠেছে এই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল নিয়ে। সংবিধানে এ-সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় কেউ বলতে পারছেন না যে এই নতুন সরকার ঠিক কত দিন ক্ষমতায় থাকবে। শনিবার আজকের পত্রিকায় ‘দীর্ঘ হবে সরকারের মেয়াদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার কত দিন থাকবে, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সরকারের মেয়াদ নিয়ে উপদেষ্টারা সুস্পষ্ট কিছু বলছেন না। তাঁরা বলছেন, নির্বাচনের আগে দরকার রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সংস্কার, রাষ্ট্র রূপান্তর। গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচন দাবি করলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংবিধানে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হলেও এই সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই ‘দীর্ঘায়িত’ মানে ঠিক কত দীর্ঘ? এটা কি মাসের হিসাবে, না বছরের হিসাবে? যেসব কথা বাতাসে ভাসছে, তা থেকে মনে হয়, মাসের নয়, বছরের হিসাবেই সরকারের মেয়াদ ঠিক হবে। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কথা বলার মতো কোনো নেতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আওয়ামী লীগ কী চায়, তা এই মুহূর্তেই জানা সম্ভব নয়। তবে দেশের অন্যতম একটি বড় দল এবং দীর্ঘদিন ধরে যে দলটি ক্ষমতাপ্রত্যাশী সেই বিএনপি কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চাইছে এবং সেটা অবশ্যই মাসের হিসাবে।

অন্যদিকে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থান এবং আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের প্রধান কাজ নির্বাচন নয়। এর প্রধান কাজ হলো যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোর সমাধান করা। নির্বাচন তার মধ্যে একটা। সময়মতো এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি এখন বহুল আলোচিত। আর এটা ঠিক যে রাতারাতি কোনো কিছু সংস্কার করা সম্ভব নয়। কোথায় কোথায় ঠিক কী কী সংস্কার করতে হবে, সেটা আগে নির্ধারণ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হলেও সংস্কারের বিষয়ে উদাসীন। তাই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করলেও নতুন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া সরকার তাড়াহুড়া করে যে নির্বাচনের পথে হাঁটবে না, এটা জোর দিয়েই বলা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত