Ajker Patrika

ঘোষণাতেই নদের দখল উচ্ছেদ

আনিসুল ইসলাম, কাপাসিয়া (গাজীপুর)
Thumbnail image

গাজীপুরে কাপাসিয়ায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের অবৈধ দখলে এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদের ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি ছয় মাসেও। বহালতবিয়তে রয়েছে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঘিঘাট গ্ৰামের ধাঁধারচর এলাকায় নদের অনেকটা জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা দুটি ইটভাটা।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে নদের পাড় বাঁধাই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পাড়ের প্রকৃত সীমানার অন্তত ২০০ মিটার নদের ভেতরে গিয়ে বাঁধাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদী সংগঠন। উপজেলা প্রশাসন বলছে, দুই উপজেলার সীমান্ত হওয়ায় অবৈধ দখল উচ্ছেদে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। 
এর আগে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে ব্রহ্মপুত্র নদের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খননের নির্দেশ দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পাউবো, পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান গাজীপুরের কাপাসিয়ার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, বানার ও শীতলক্ষ্যা নদীর সংযোগস্থলের ধাঁধারচরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে নদ ও নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। ওই অনুষ্ঠানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান, পাউবোর পরিচালক বজলুর রশিদ, কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল হুসাইন উপস্থিত ছিলেন।

সেদিন অতিথিরা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের দখল হওয়া স্থান পরিদর্শন করেন। পরে সেখানকার দখল এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করে খননের জন্য পাউবো কর্মকর্তাসহ অন্যদের মৌখিক নির্দেশ দেন জ্যেষ্ঠ সচিব। এরপর ছয় মাস পার হয়ে গেলেও সে ঘোষণার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে গত সোমবার আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে নদের অবৈধ দখল উচ্ছেদের বিষয়টি আবার সামনে আসে।

সম্প্রতি উচ্ছেদের আওতায় থাকা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বিশাল এলাকা দখল করে গড়ে উঠেছে বিবিএল নামের একটি ইটভাটা। নরসিংদীর শিবপুর ও গাজীপুরের কাপাসিয়ার সীমান্তসংলগ্ন ওই অংশে পাড় থেকে নদের ভেতর অন্তত ২৫০ মিটার জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ভাটাটি। এদিকে পাউবোর উদ্যোগে শিবপুরের লাখপুর বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে নদের পাড় বাঁধাই করা অংশ অজ্ঞাত কারণেই বিবিএল ইটভাটার কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে। ভাটার মালিক জাকির হোসেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

এদিকে লাখপুর বাজার থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে নদের প্রায় মধ্যখানে আরও একটি পরিত্যক্ত ইটভাটা রয়েছে। এই দুটি ইটভাটার জন্য নদের বিশাল জায়গাজুড়ে মাটি ভরাট করা হয়েছে। এতে নদের পানিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।

পাউবোর নদীর পাড় বাঁধাইয়ের কাজটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নদীর প্রকৃত সীমানার অন্তত ২০০ মিটার ভেতরে গিয়ে পাড় বাঁধাই করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কয়েকজন।

কাপাসিয়ার ঘিঘাট গ্রামের মো. সামসুল আলম ও মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের যেখানে বর্তমানে বাঁধাই করা হয়েছে, তা থেকে অন্তত ৩০০ মিটার পূর্ব দিকে বিস্তৃত ছিল নদ। বাঁধাই করা পাড় থেকে নদীর মাঝখান বরাবর অনেকখানি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে ইটভাটা। এতে নদীর প্রকৃত জলধারা মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করা হলে অনেকেই নদ দখলে উৎসাহিত হতে পারেন বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, ‘ধাঁধারচরের পূর্ব পাশের নদের জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে অনেক বছর ধরে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করার কথা, কিন্তু তা হয়নি। প্রশাসন ও পাউবো এ ক্ষেত্রে অবহেলা দেখাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবারও কথা বলব। নদী না বাঁচলে আমাদের সভ্যতা টিকবে না।’

জানতে চাইলে কাপাসিয়ার ইউএনও এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ‘ধাঁধারচর এলাকায় দুই উপজেলার সীমানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। আমাদের সীমানায় থাকা স্থাপনা আমরা উচ্ছেদ করেছি। শিবপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার এসি ল্যান্ডকে পাঠিয়ে সীমানা নিশ্চিত হয়ে অবৈধ দখল করাদের উচ্ছেদ করে নদ উদ্ধার করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত