Ajker Patrika

জেলেজীবনে ‘দাদন-ফাঁস’

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১০: ৪৯
জেলেজীবনে ‘দাদন-ফাঁস’

নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ। তাই অনেকটা অলস সময় কাটছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা জেলেপাড়ার বাসিন্দা হীরালাল ও বাঞ্ছারাম জলদাসের। তবে কয়েক প্রজন্ম ধরে মাছ ধরার কারণে এই অবসর সময় কাজে লাগাচ্ছেন জাল বুনে। তবে গ্রাম্য সমিতি ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে জাল বুনতে হচ্ছে তাঁদের। আবার অনেকে কর্মহীন সময়ে ঋণ করে নেওয়া টাকা খরচ করছেন পরিবারের ভরন-পোষণে।

শুধু হীরালাল ও বাঞ্ছারাম জলদাসই নন, উপজেলার ১৩৩ জেলেপাড়ার প্রায় ৪ হাজার জেলে ফেঁসে আছেন গ্রাম্য সমিতি ও মহাজনের ঋণের ফাঁদে। জেলেরা জানান, তাঁদের বেশির ভাগই দরিদ্র। সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ এবং তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলে সংসার। তবে এবার ইলিশ মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত মাছ পাননি তাঁরা। তার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞায় সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে মহাজন-আড়তদারের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছেন। দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিশেষ শর্তে টাকা নিতে হচ্ছে তাঁদের।

জেলেরা জানান, দাদন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জেলেপাড়ায় গড়ে উঠেছে নামসর্বস্ব একাধিক সমিতি। ইলিশ মৌসুমের আগে দাদন দেওয়াই তাদের কাজ। শতকরা ১৫ থেকে ২০ টাকা হারে সুদে তারা জেলেদের টাকা দেয়।

কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া ও সলিমপুরের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইলিশের মৌসুমে মহাজন, ফড়িয়া ও দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এ কারণে জেলেরা যা মাছ পান তা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারেন না। জেলেদের সব সময় চাপে রাখেন মহাজন, ফড়িয়া ও দাদন ব্যবসায়ীরা।

কুমিরা জেলেপাড়ার হীরালাল জলদাশ বলেন, প্রতিনিয়ত দাদনদারের আতঙ্কে থাকতে হয়। যেসব জেলে সঠিক সময়ে সুদের টাকা পরিশোধ করতে পারেন, শুধু তাঁদের ঋণ দেন গ্রাম্য সমিতি ও মহাজনেরা। সুদে টাকা না পেয়ে অনেক জেলে পরিবার কষ্টে দিনযাপন করছেন।

বাড়বকুণ্ড জেলেপাড়ার বাসিন্দা প্রদীপ জলদাস ও সুজন জলদাস বলেন, সাগরে মাছ ধরা যখন বন্ধ থাকে, তখন পরিবারের খরচ চালাতে তাঁরা নিরুপায় হয়ে পড়েন। তখন দাদন ব্যবসায়ীদের সব শর্ত মেনে চড়া সুদে টাকা নেন। ইলিশের মৌসুমে মাছ বিক্রিতে দর-কষাকষির সুযোগ থাকে না তাঁদের। বাকিতে দাদন ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া দামে মাছ বিক্রি করতে হয়। তাঁরা টাকা দিতে গড়িমসি করেন। টাকা পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় তাঁদের। এ ছাড়া জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই আর ভোগান্তি তো আছেই।

শীতলপুর জেলেপাড়া জলদস্যুতা প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরি জলদাস বলেন, অধিকাংশ সময় জলদস্যুরা জেলেদের থেকে ইলিশ ছিনিয়ে নেয়। আর ঘাটে ইলিশ নিয়ে আসলেই ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দেন দাদন ব্যবসায়ীরা। যুগ যুগ ধরে দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে অসহায় জীবন পার করছে জেলেরা।

সুদ ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম ও দিদার বলেন, এই পৃথিবীতে কেউ তো এমনি কাউকে টাকা দেয় না। দাদন ব্যবসায়ীরা একজন বিপদে পড়া মানুষের জন্যই এসব করেন। চাওয়ামাত্রই দাদন ব্যবসায়ীরা টাকা দেন বলেই তো লোকজন বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত