Ajker Patrika

‘এ অর্জন উত্তর জনপদের’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
‘এ অর্জন উত্তর জনপদের’

একুশে পদকের পর এবার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি), কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা এস এম আব্রাহাম লিংকন। তিনি এই অর্জনের কৃতিত্ব উত্তর জনপদের মানুষকে উৎসর্গ করেছেন।

স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আব্রাহাম লিংকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই অর্জন আমার নয়, এই অর্জন উত্তর জনপদের মানুষের, আমাদের পূর্বপুরুষদের। তাঁরা যে কাজগুলো করেছেন, সেগুলো সম্মান হয়ে আমার হাত ধরে এসেছে। কৃতিত্ব তাঁদের, আমার নয়।’

গতকাল শুক্রবার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত ১০ বিশিষ্টজনের নাম প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তালিকায় সমাজসেবা বা জনসেবার ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আব্রাহাম লিংকনের নাম রয়েছে। এর আগে একই ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০২২ সালে তাঁকে একুশে পদক দেয় সরকার। যদিও পরে ওই পদক ও অর্থ নিজ প্রতিষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে দান করেন তিনি।

আব্রাহাম লিংকনের বাড়ি জেলা শহরের নাজিরা ব্যাপারীপাড়ায়। সেই বসতবাড়িতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রহশালা ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’। দোতলা বাসভবনে বসার ঘর, খাবারের ঘর, এমনকি শোবার ঘরেও সাজিয়ে রাখা হয়েছে স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দুই হাজারেরও বেশি প্রামাণ্য দলিল ও উপকরণ। লিংকনের বাসভবনের পাশে তাঁরই দেওয়া ২০ শতাংশ জমিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া বরাদ্দে জাদুঘরের চারতলা ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

নিজের কর্ম প্রসঙ্গে এই সমাজসেবক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই দেশের জন্য মানুষের জন্য কাজ করছি, লড়াই-সংগ্রাম করেছি। উত্তরাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কাজ করেছি। এই অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে সংগ্রহশালা উত্তরবঙ্গ জাদুঘর গড়ে তুলেছি। কিন্তু সবকিছু হয়েছে এ জনপদের মানুষের রেখে যাওয়া কর্মের ওপর। তাই এ প্রাপ্তি আমার নয়, তাঁদের।’

আব্রাহাম লিংকন আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দেশে শহীদ আইনজীবীদের নিয়ে কাজ হয়নি। আমি সামগ্রিকভাবে সেটা তুলে আনার চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পর জেলখানাগুলোতে বিদ্রোহ হয়েছিল। এগুলো নিয়ে কাজ হয়নি। আমি করেছি। এ কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে রয়েছে। বাকিগুলো আপনারা মূল্যায়ন করবেন।’

আইন পেশা ও রাজনীতির বাইরে সমাজসেবায় আব্রাহাম লিংকনকে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগান তাঁর স্ত্রী নাজমুন নাহার সুইটি। স্বামীর এই অনন্য প্রাপ্তিতে নিজের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁদের প্রতি, যাঁরা এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্ত্রী হিসেবে আমি গর্বিত।’

নাজমুন নাহার সুইটি আরও বলেন, ‘প্রত্যন্ত একটি এলাকায় একজন মানুষ নিভৃতে কাজ করছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল যে সেটা দেখেছেন এবং মূল্যায়ন করেছেন, এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। যাঁরা লিংকনের কর্মকে মূল্যায়ন করেন, যাঁরা শুভাকাঙ্ক্ষী ও দর্শনার্থী হয়ে তাঁর কাজগুলো দেখেন, এই অর্জনে তাঁদের কৃতিত্ব সমান।’

সংসার জীবনের সময় থেকে সমাজ ও মানুষের জন্য স্বামীর সময় ব্যয় করা প্রসঙ্গে সুইটি বলেন, ‘আইন পেশার কাজ অল্প সময়ে শেষ করে লিংকন লেখালেখি ও সমাজসেবামূলক কাজেই বেশি সময় ব্যয় করেন। তিনি কাজপাগল মানুষ। বাইরে থেকে সেটা কেউ বুঝতে পারবেন না।’

আব্রাহাম কুড়িগ্রাম সীমান্তে ফেলানী হত্যাকাণ্ডে বিএসএফ গঠিত আদালতে ফেলানীর বাবার আইন পরামর্শক ছিলেন। মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে এই আইনজীবীর। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত