মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: নতুন শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে আদৌ কি শিক্ষার্থীরা এসব অর্জন করতে পারবে?
ড. কামরুল হাসান মামুন: শুনতে ভালো শোনায়। কাদের দিয়ে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসার কথা সরকার ভাবছে? কাদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জনের কথা বলা হচ্ছে? এগুলো অর্জনের প্রাথমিক শর্ত হলো আলোকিত এবং মেরুদণ্ডওয়ালা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। তার জন্য শিক্ষকদের বেতন ও সম্মানের মাধ্যমে সমাজে উচ্চাসনে বসানো। অন্য সব ঠিক আছে ধরে নিলেও বর্তমান মানের শিক্ষক, তাঁদের বেতন ও এই মানের সম্মান দিয়ে এসব অর্জনের কথা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে অন্য সবই তো ঠিক নেই। আদর্শটা হলো, আমরা একসময় চাইতাম একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের দেশে চার ধারার শিক্ষাব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান। মাদ্রাসা, বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন এবং ইংলিশ মিডিয়াম। একসময় আমি, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনু মুহাম্মদসহ আরও অনেকে চাইতাম এত ধারা না রেখে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। বর্তমান সরকার নতুন যে শিক্ষাক্রম করল, এটা কিন্তু বিএনপিও করতে চেয়েছিল। আমরা সেই সময় প্রতিবাদ করায় তারা সেটা করতে পারেনি। কিন্তু এই সরকার করতে পেরেছে। কারণ, যারা বাধা দিয়েছিল, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের চিন্তার লোক বলে প্রতিবাদ হয়নি। কে করছে তার ওপর নির্ভর করে আমরা প্রতিবাদ করব, না করব না। এটাই হলো আমার একটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
এই একমুখী শিক্ষার নামে বর্তমান সরকার বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাকে এক করে ফেলেছে। এভাবে এক করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আর তা যদি করতেই হয়, যেমন ইংলিশ মিডিয়ামে যেভাবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাকে বাদ দিয়ে সব বিষয় ওপেন করে দেওয়া হয়েছে। যার যে বিষয় পছন্দের সে তার ইচ্ছেমতো তা নেবে। এখন কী করা হলো বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়কে একত্র করা হলো। যে শিক্ষার্থী গণিতের ভয়ে মানবিক বিভাগে যেত, সে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবে। এতে সবাই একটু করে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা পড়বে। তার বিনিময়ে যারা একসময় বিজ্ঞান পড়ত, তাদের একটা বিশেষ বিষয় ছিল উচ্চতর গণিত। এটাকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান আগে যতটুকু পড়তে হতো তার চেয়ে কম পড়তে হবে। তার কারণ হলো, যারা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, তাদের জ্ঞানোপযোগী বিজ্ঞান বই তৈরি করা হয়েছে। একদিক থেকে কিছু নামালাম আর অন্যদিকে কিছু উঠালাম। উঠিয়ে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এলাম; মানে জোর করে সবাইকে সব বিষয়ে পড়াতে বাধ্য করা হলো।
বৈচিত্র্যের কারণেই পৃথিবীটা সুন্দর। চারুকলা, সংগীত যেমন প্রয়োজন, তেমনি সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও বিজ্ঞান প্রয়োজন। কোনো বিষয়ই গুরুত্বহীন নয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় ‘ভালো থাকি’ নামে একটা বিষয় যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে; মানে উদ্দেশ্যটা হলো এসএসসি পাস করার পর যেন আমি কিছু কাজ করে খেতে পারি। তাৎক্ষণিক কিছু করতে পারার জন্য মাধ্যমটির নাম কারিগরিবিদ্যা হওয়ার কথা ছিল।
পৃথিবীর সব দেশে প্রবহমান মূল নদীর কিছু শাখানদী থাকে, তেমনি একটি দেশের শিক্ষারও একটা মূল ধারা থাকবে এবং তার কিছু শাখাও থাকবে।
শাখাগুলো হবে কারিগরি, ভোকেশনাল ইত্যাদি। এখানে মূল শিক্ষার ধারাকে কারিগরির পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আমার ধারণা, বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে আমাদের সরকার এসব কাজ করছে। এই শিক্ষাব্যবস্থা হলো উন্নত দেশগুলোর বাজারে পরিণত হওয়ার একটা ফর্মুলা। এটা একটা অনুৎপাদনশীল কাজ হবে। এই শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞানের বইয়ে কিছু কিছু ভালো কনটেন্ট থাকলেও বড় সমস্যা হলো, দার্শনিক সমস্যা।
এই দার্শনিক জায়গাটা যত দিন শুদ্ধ করা হবে না, তত দিন ভালো কিছু আশা করা ঠিক হবে না।
আজকের পত্রিকা: নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। শতভাগ মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। এটা কতটুকু সফল হবে?
ড. কামরুল হাসান: আবারও একই কথা বলতে হবে। পরীক্ষা ছাড়াও আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা অর্জন সম্ভব। কিন্তু তার জন্য এই ব্যবস্থা চালুর আগে কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের অনুকূলে নয়। নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা দরকার ছিল। আমাদের সামাজিক অবস্থায় কোনো উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সন্তানকে কম নম্বর দেওয়ার সাহস কোনো স্কুলের শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দেশে শিক্ষকদের যে বেতনকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাতে কোনো শিক্ষকের মেরুদণ্ড শক্ত হতে পারে না।
মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক দিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মধ্যে যাওয়া মানেই হলো, এটা একটা বিপর্যয় ঘটাবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকেরা যেহেতু কম বেতন পান (প্রাইমারির একজন শিক্ষক বেতন পান ১৩তম গ্রেডে, আর সরকারি অফিসের গাড়ির চালক ১২তম গ্রেডে বেতন পান। তিনি আবার অষ্টম শ্রেণি পাস), সেহেতু কম বেতন দিয়ে মেধাবীদের এ পেশায় আনা সম্ভব নয়। যেহেতু শিক্ষকদের নম্বর দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু কোনো শিক্ষার্থী তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে কম নম্বর দেওয়ার হুমকি তিনি দিতে পারেন। আর শিক্ষক নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমাজের ক্ষমতাবান পিতা-মাতার কথা চিন্তা করতে বাধ্য থাকবেন।
এখন নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে যে পরিমাণ হোমওয়ার্ক এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার ছিল, সেটা করা হয়নি। যেহেতু আগে এসব কাজ করা হয়নি, সেহেতু এর ফলাফল ক্ষতি বয়ে আনবে।
আজকের পত্রিকা: এনসিটিবির একেকটি বইয়ের একাধিক লেখক থাকেন। বই প্রকাশের আগে বিশেষজ্ঞের কাছেও পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয়। এরপরও কীভাবে ভুল থেকে গেল?
ড. কামরুল হাসান: যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকত তারাও পাঠ্যপুস্তক রচনাসহ যেকোনো বিষয়ে কমিটি গঠন করার আগে যোগ্যতার বাইরে আগে দলীয় বিবেচনায় করত। আওয়ামী লীগও একই কাজ করেছে। তাই দলীয় ভিত্তিতে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ থাকবে না। তাঁরা মূলত টাকার কারণে এসবে থাকতে চান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা ভালো বই লিখবেন, জাতি গঠনে কনট্রিবিউট করবেন, সে বিবেচনা থাকে না। বিবেচনায় থাকে দলের কথা।
এমনটা না হলে পাঠ্যপুস্তকে অসংখ্য ভুল থাকার কথা নয়। আমার ধারণা, শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা এসব কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে যে মোরাল দায়িত্ববোধ থাকার কথা, সেই বোধ নিয়ে তাঁরা কাজটি করেননি। এসব কারণে পাঠ্যপুস্তকে এত ভুল থেকে গেছে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষামন্ত্রী পাঠ্যবইয়ের ভুল যাঁরা ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের সাধুবাদ না জানিয়ে এটাকে সরকার হটানোর ইস্যু বলেছেন। এভাবে কথা বলা কতটা যৌক্তিক?
ড. কামরুল হাসান: সব সরকারই মনে করে যেসব সংগঠন, সংস্থা তাদের সমালোচনা করে, তারা এটা করে একটা দুরভিসন্ধি নিয়ে। যেকোনো ধরনের সমালোচনা আসলে আমলে নেওয়া উচিত। সমালোচনা নেওয়ার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেটা আমরা পাইনি। তারা চায় সবাই তাদের তোয়াজ, তোসামোদি করবে। সবাই সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা বন্ধ করে দিয়ে তোয়াজ করলে কি দেশ সামনের দিকে এগোবে?
যাঁরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা করেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানানো উচিত ছিল। উল্টো সমালোচনা করে, তাঁদের থামিয়ে দিয়ে কোন পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা হলো।
আমাদের দেহের রক্তের মধ্যে শ্বেতকণিকার কাজ হলো জীবাণু ও রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। একটা সমাজও তাই। সমগ্র জনগণের মধ্য থেকে কিছু মানুষ থাকা উচিত শ্বেতকণিকার মতো। তাঁরা সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। আশঙ্কার কথা, তাঁদের সংখ্যা ক্রমে কমে যাচ্ছে। যখন শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যায়, তখন দেহে ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে আমাদের সমাজ এখন ক্যানসারে আক্রান্ত।
আজকের পত্রিকা: একটা গ্রহণযোগ্য শিক্ষাব্যবস্থা এবং নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়নে আপনার পরামর্শ কী?
ড. কামরুল হাসান: স্বাধীনতার পরে কুদরাত-এ-খুদা থেকে এ পর্যন্ত সম্ভবত ১২ কি ১৩টি শিক্ষা কমিশন হয়েছে। যে সরকারের আমলে যে শিক্ষা কমিশন হয়েছে, সেই সরকারই কমিশনের রিপোর্ট মানেনি। এই সরকারের আমলে কবীর চৌধুরী শিক্ষা কমিশনে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মতামত কি বর্তমান শিক্ষাক্রমের সঙ্গে যায়? কমিটি করে, কমিশন গঠন করে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়, সেটা তালাবদ্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। এসব কাজ করেন মূলত আমলারা। আমলারা যখন শিক্ষাবিদ হয়ে যান, তখন যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে আরকি।
আমাদের দেশে চারটি মাধ্যম চালু আছে।
এতে সমাজের মধ্যে প্রচণ্ড বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চবিত্তদের সঙ্গে মাদ্রাসার কোনো সম্পর্কই নেই। সরকারের উচিত, গবেষণা করে দেখা এই বিভাজনটা কীভাবে কমানো যায়। এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা উচিত, যেখানে কীভাবে আমাদের দেশের মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
বর্তমানে যেটা চালু করা হয়েছে, তাতে ধনী-গরিবের ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে এবং ইংরেজি মিডিয়াম আরও বেশি জনপ্রিয় হবে।
শুধু শিক্ষা কমিশন করলেই হবে না, এর সঙ্গে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং তাঁদের সন্তোষজনক বেতন দিতে হবে। যাতে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে আগ্রহী হন।
সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চালু করলাম ঘোড়ার আগে গাড়ি লাগিয়ে দেওয়ার মতো করে। কারণ, সৃজনশীল শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে আমরা পদ্ধতি চালু করে দিলাম। ফলে সেটা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাক্রমেও একই ঘটনা ঘটবে। কারণ, শিক্ষকদের এখানে মেরুদণ্ড সোজা রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই এটাও ব্যর্থ হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
ড. কামরুল হাসান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: নতুন শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে আদৌ কি শিক্ষার্থীরা এসব অর্জন করতে পারবে?
ড. কামরুল হাসান মামুন: শুনতে ভালো শোনায়। কাদের দিয়ে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসার কথা সরকার ভাবছে? কাদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জনের কথা বলা হচ্ছে? এগুলো অর্জনের প্রাথমিক শর্ত হলো আলোকিত এবং মেরুদণ্ডওয়ালা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। তার জন্য শিক্ষকদের বেতন ও সম্মানের মাধ্যমে সমাজে উচ্চাসনে বসানো। অন্য সব ঠিক আছে ধরে নিলেও বর্তমান মানের শিক্ষক, তাঁদের বেতন ও এই মানের সম্মান দিয়ে এসব অর্জনের কথা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে অন্য সবই তো ঠিক নেই। আদর্শটা হলো, আমরা একসময় চাইতাম একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের দেশে চার ধারার শিক্ষাব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান। মাদ্রাসা, বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন এবং ইংলিশ মিডিয়াম। একসময় আমি, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনু মুহাম্মদসহ আরও অনেকে চাইতাম এত ধারা না রেখে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। বর্তমান সরকার নতুন যে শিক্ষাক্রম করল, এটা কিন্তু বিএনপিও করতে চেয়েছিল। আমরা সেই সময় প্রতিবাদ করায় তারা সেটা করতে পারেনি। কিন্তু এই সরকার করতে পেরেছে। কারণ, যারা বাধা দিয়েছিল, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের চিন্তার লোক বলে প্রতিবাদ হয়নি। কে করছে তার ওপর নির্ভর করে আমরা প্রতিবাদ করব, না করব না। এটাই হলো আমার একটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
এই একমুখী শিক্ষার নামে বর্তমান সরকার বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাকে এক করে ফেলেছে। এভাবে এক করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আর তা যদি করতেই হয়, যেমন ইংলিশ মিডিয়ামে যেভাবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাকে বাদ দিয়ে সব বিষয় ওপেন করে দেওয়া হয়েছে। যার যে বিষয় পছন্দের সে তার ইচ্ছেমতো তা নেবে। এখন কী করা হলো বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়কে একত্র করা হলো। যে শিক্ষার্থী গণিতের ভয়ে মানবিক বিভাগে যেত, সে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবে। এতে সবাই একটু করে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা পড়বে। তার বিনিময়ে যারা একসময় বিজ্ঞান পড়ত, তাদের একটা বিশেষ বিষয় ছিল উচ্চতর গণিত। এটাকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান আগে যতটুকু পড়তে হতো তার চেয়ে কম পড়তে হবে। তার কারণ হলো, যারা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, তাদের জ্ঞানোপযোগী বিজ্ঞান বই তৈরি করা হয়েছে। একদিক থেকে কিছু নামালাম আর অন্যদিকে কিছু উঠালাম। উঠিয়ে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এলাম; মানে জোর করে সবাইকে সব বিষয়ে পড়াতে বাধ্য করা হলো।
বৈচিত্র্যের কারণেই পৃথিবীটা সুন্দর। চারুকলা, সংগীত যেমন প্রয়োজন, তেমনি সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও বিজ্ঞান প্রয়োজন। কোনো বিষয়ই গুরুত্বহীন নয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় ‘ভালো থাকি’ নামে একটা বিষয় যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে; মানে উদ্দেশ্যটা হলো এসএসসি পাস করার পর যেন আমি কিছু কাজ করে খেতে পারি। তাৎক্ষণিক কিছু করতে পারার জন্য মাধ্যমটির নাম কারিগরিবিদ্যা হওয়ার কথা ছিল।
পৃথিবীর সব দেশে প্রবহমান মূল নদীর কিছু শাখানদী থাকে, তেমনি একটি দেশের শিক্ষারও একটা মূল ধারা থাকবে এবং তার কিছু শাখাও থাকবে।
শাখাগুলো হবে কারিগরি, ভোকেশনাল ইত্যাদি। এখানে মূল শিক্ষার ধারাকে কারিগরির পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আমার ধারণা, বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে আমাদের সরকার এসব কাজ করছে। এই শিক্ষাব্যবস্থা হলো উন্নত দেশগুলোর বাজারে পরিণত হওয়ার একটা ফর্মুলা। এটা একটা অনুৎপাদনশীল কাজ হবে। এই শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞানের বইয়ে কিছু কিছু ভালো কনটেন্ট থাকলেও বড় সমস্যা হলো, দার্শনিক সমস্যা।
এই দার্শনিক জায়গাটা যত দিন শুদ্ধ করা হবে না, তত দিন ভালো কিছু আশা করা ঠিক হবে না।
আজকের পত্রিকা: নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। শতভাগ মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। এটা কতটুকু সফল হবে?
ড. কামরুল হাসান: আবারও একই কথা বলতে হবে। পরীক্ষা ছাড়াও আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা অর্জন সম্ভব। কিন্তু তার জন্য এই ব্যবস্থা চালুর আগে কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের অনুকূলে নয়। নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা দরকার ছিল। আমাদের সামাজিক অবস্থায় কোনো উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সন্তানকে কম নম্বর দেওয়ার সাহস কোনো স্কুলের শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দেশে শিক্ষকদের যে বেতনকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাতে কোনো শিক্ষকের মেরুদণ্ড শক্ত হতে পারে না।
মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক দিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মধ্যে যাওয়া মানেই হলো, এটা একটা বিপর্যয় ঘটাবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকেরা যেহেতু কম বেতন পান (প্রাইমারির একজন শিক্ষক বেতন পান ১৩তম গ্রেডে, আর সরকারি অফিসের গাড়ির চালক ১২তম গ্রেডে বেতন পান। তিনি আবার অষ্টম শ্রেণি পাস), সেহেতু কম বেতন দিয়ে মেধাবীদের এ পেশায় আনা সম্ভব নয়। যেহেতু শিক্ষকদের নম্বর দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু কোনো শিক্ষার্থী তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে কম নম্বর দেওয়ার হুমকি তিনি দিতে পারেন। আর শিক্ষক নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমাজের ক্ষমতাবান পিতা-মাতার কথা চিন্তা করতে বাধ্য থাকবেন।
এখন নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে যে পরিমাণ হোমওয়ার্ক এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার ছিল, সেটা করা হয়নি। যেহেতু আগে এসব কাজ করা হয়নি, সেহেতু এর ফলাফল ক্ষতি বয়ে আনবে।
আজকের পত্রিকা: এনসিটিবির একেকটি বইয়ের একাধিক লেখক থাকেন। বই প্রকাশের আগে বিশেষজ্ঞের কাছেও পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয়। এরপরও কীভাবে ভুল থেকে গেল?
ড. কামরুল হাসান: যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকত তারাও পাঠ্যপুস্তক রচনাসহ যেকোনো বিষয়ে কমিটি গঠন করার আগে যোগ্যতার বাইরে আগে দলীয় বিবেচনায় করত। আওয়ামী লীগও একই কাজ করেছে। তাই দলীয় ভিত্তিতে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ থাকবে না। তাঁরা মূলত টাকার কারণে এসবে থাকতে চান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা ভালো বই লিখবেন, জাতি গঠনে কনট্রিবিউট করবেন, সে বিবেচনা থাকে না। বিবেচনায় থাকে দলের কথা।
এমনটা না হলে পাঠ্যপুস্তকে অসংখ্য ভুল থাকার কথা নয়। আমার ধারণা, শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা এসব কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে যে মোরাল দায়িত্ববোধ থাকার কথা, সেই বোধ নিয়ে তাঁরা কাজটি করেননি। এসব কারণে পাঠ্যপুস্তকে এত ভুল থেকে গেছে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষামন্ত্রী পাঠ্যবইয়ের ভুল যাঁরা ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের সাধুবাদ না জানিয়ে এটাকে সরকার হটানোর ইস্যু বলেছেন। এভাবে কথা বলা কতটা যৌক্তিক?
ড. কামরুল হাসান: সব সরকারই মনে করে যেসব সংগঠন, সংস্থা তাদের সমালোচনা করে, তারা এটা করে একটা দুরভিসন্ধি নিয়ে। যেকোনো ধরনের সমালোচনা আসলে আমলে নেওয়া উচিত। সমালোচনা নেওয়ার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেটা আমরা পাইনি। তারা চায় সবাই তাদের তোয়াজ, তোসামোদি করবে। সবাই সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা বন্ধ করে দিয়ে তোয়াজ করলে কি দেশ সামনের দিকে এগোবে?
যাঁরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা করেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানানো উচিত ছিল। উল্টো সমালোচনা করে, তাঁদের থামিয়ে দিয়ে কোন পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা হলো।
আমাদের দেহের রক্তের মধ্যে শ্বেতকণিকার কাজ হলো জীবাণু ও রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। একটা সমাজও তাই। সমগ্র জনগণের মধ্য থেকে কিছু মানুষ থাকা উচিত শ্বেতকণিকার মতো। তাঁরা সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। আশঙ্কার কথা, তাঁদের সংখ্যা ক্রমে কমে যাচ্ছে। যখন শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যায়, তখন দেহে ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে আমাদের সমাজ এখন ক্যানসারে আক্রান্ত।
আজকের পত্রিকা: একটা গ্রহণযোগ্য শিক্ষাব্যবস্থা এবং নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়নে আপনার পরামর্শ কী?
ড. কামরুল হাসান: স্বাধীনতার পরে কুদরাত-এ-খুদা থেকে এ পর্যন্ত সম্ভবত ১২ কি ১৩টি শিক্ষা কমিশন হয়েছে। যে সরকারের আমলে যে শিক্ষা কমিশন হয়েছে, সেই সরকারই কমিশনের রিপোর্ট মানেনি। এই সরকারের আমলে কবীর চৌধুরী শিক্ষা কমিশনে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মতামত কি বর্তমান শিক্ষাক্রমের সঙ্গে যায়? কমিটি করে, কমিশন গঠন করে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়, সেটা তালাবদ্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। এসব কাজ করেন মূলত আমলারা। আমলারা যখন শিক্ষাবিদ হয়ে যান, তখন যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে আরকি।
আমাদের দেশে চারটি মাধ্যম চালু আছে।
এতে সমাজের মধ্যে প্রচণ্ড বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চবিত্তদের সঙ্গে মাদ্রাসার কোনো সম্পর্কই নেই। সরকারের উচিত, গবেষণা করে দেখা এই বিভাজনটা কীভাবে কমানো যায়। এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা উচিত, যেখানে কীভাবে আমাদের দেশের মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
বর্তমানে যেটা চালু করা হয়েছে, তাতে ধনী-গরিবের ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে এবং ইংরেজি মিডিয়াম আরও বেশি জনপ্রিয় হবে।
শুধু শিক্ষা কমিশন করলেই হবে না, এর সঙ্গে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং তাঁদের সন্তোষজনক বেতন দিতে হবে। যাতে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে আগ্রহী হন।
সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চালু করলাম ঘোড়ার আগে গাড়ি লাগিয়ে দেওয়ার মতো করে। কারণ, সৃজনশীল শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে আমরা পদ্ধতি চালু করে দিলাম। ফলে সেটা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাক্রমেও একই ঘটনা ঘটবে। কারণ, শিক্ষকদের এখানে মেরুদণ্ড সোজা রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই এটাও ব্যর্থ হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
ড. কামরুল হাসান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: নতুন শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে আদৌ কি শিক্ষার্থীরা এসব অর্জন করতে পারবে?
ড. কামরুল হাসান মামুন: শুনতে ভালো শোনায়। কাদের দিয়ে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসার কথা সরকার ভাবছে? কাদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জনের কথা বলা হচ্ছে? এগুলো অর্জনের প্রাথমিক শর্ত হলো আলোকিত এবং মেরুদণ্ডওয়ালা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। তার জন্য শিক্ষকদের বেতন ও সম্মানের মাধ্যমে সমাজে উচ্চাসনে বসানো। অন্য সব ঠিক আছে ধরে নিলেও বর্তমান মানের শিক্ষক, তাঁদের বেতন ও এই মানের সম্মান দিয়ে এসব অর্জনের কথা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে অন্য সবই তো ঠিক নেই। আদর্শটা হলো, আমরা একসময় চাইতাম একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের দেশে চার ধারার শিক্ষাব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান। মাদ্রাসা, বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন এবং ইংলিশ মিডিয়াম। একসময় আমি, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনু মুহাম্মদসহ আরও অনেকে চাইতাম এত ধারা না রেখে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। বর্তমান সরকার নতুন যে শিক্ষাক্রম করল, এটা কিন্তু বিএনপিও করতে চেয়েছিল। আমরা সেই সময় প্রতিবাদ করায় তারা সেটা করতে পারেনি। কিন্তু এই সরকার করতে পেরেছে। কারণ, যারা বাধা দিয়েছিল, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের চিন্তার লোক বলে প্রতিবাদ হয়নি। কে করছে তার ওপর নির্ভর করে আমরা প্রতিবাদ করব, না করব না। এটাই হলো আমার একটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
এই একমুখী শিক্ষার নামে বর্তমান সরকার বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাকে এক করে ফেলেছে। এভাবে এক করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আর তা যদি করতেই হয়, যেমন ইংলিশ মিডিয়ামে যেভাবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাকে বাদ দিয়ে সব বিষয় ওপেন করে দেওয়া হয়েছে। যার যে বিষয় পছন্দের সে তার ইচ্ছেমতো তা নেবে। এখন কী করা হলো বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়কে একত্র করা হলো। যে শিক্ষার্থী গণিতের ভয়ে মানবিক বিভাগে যেত, সে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবে। এতে সবাই একটু করে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা পড়বে। তার বিনিময়ে যারা একসময় বিজ্ঞান পড়ত, তাদের একটা বিশেষ বিষয় ছিল উচ্চতর গণিত। এটাকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান আগে যতটুকু পড়তে হতো তার চেয়ে কম পড়তে হবে। তার কারণ হলো, যারা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, তাদের জ্ঞানোপযোগী বিজ্ঞান বই তৈরি করা হয়েছে। একদিক থেকে কিছু নামালাম আর অন্যদিকে কিছু উঠালাম। উঠিয়ে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এলাম; মানে জোর করে সবাইকে সব বিষয়ে পড়াতে বাধ্য করা হলো।
বৈচিত্র্যের কারণেই পৃথিবীটা সুন্দর। চারুকলা, সংগীত যেমন প্রয়োজন, তেমনি সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও বিজ্ঞান প্রয়োজন। কোনো বিষয়ই গুরুত্বহীন নয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় ‘ভালো থাকি’ নামে একটা বিষয় যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে; মানে উদ্দেশ্যটা হলো এসএসসি পাস করার পর যেন আমি কিছু কাজ করে খেতে পারি। তাৎক্ষণিক কিছু করতে পারার জন্য মাধ্যমটির নাম কারিগরিবিদ্যা হওয়ার কথা ছিল।
পৃথিবীর সব দেশে প্রবহমান মূল নদীর কিছু শাখানদী থাকে, তেমনি একটি দেশের শিক্ষারও একটা মূল ধারা থাকবে এবং তার কিছু শাখাও থাকবে।
শাখাগুলো হবে কারিগরি, ভোকেশনাল ইত্যাদি। এখানে মূল শিক্ষার ধারাকে কারিগরির পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আমার ধারণা, বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে আমাদের সরকার এসব কাজ করছে। এই শিক্ষাব্যবস্থা হলো উন্নত দেশগুলোর বাজারে পরিণত হওয়ার একটা ফর্মুলা। এটা একটা অনুৎপাদনশীল কাজ হবে। এই শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞানের বইয়ে কিছু কিছু ভালো কনটেন্ট থাকলেও বড় সমস্যা হলো, দার্শনিক সমস্যা।
এই দার্শনিক জায়গাটা যত দিন শুদ্ধ করা হবে না, তত দিন ভালো কিছু আশা করা ঠিক হবে না।
আজকের পত্রিকা: নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। শতভাগ মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। এটা কতটুকু সফল হবে?
ড. কামরুল হাসান: আবারও একই কথা বলতে হবে। পরীক্ষা ছাড়াও আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা অর্জন সম্ভব। কিন্তু তার জন্য এই ব্যবস্থা চালুর আগে কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের অনুকূলে নয়। নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা দরকার ছিল। আমাদের সামাজিক অবস্থায় কোনো উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সন্তানকে কম নম্বর দেওয়ার সাহস কোনো স্কুলের শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দেশে শিক্ষকদের যে বেতনকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাতে কোনো শিক্ষকের মেরুদণ্ড শক্ত হতে পারে না।
মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক দিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মধ্যে যাওয়া মানেই হলো, এটা একটা বিপর্যয় ঘটাবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকেরা যেহেতু কম বেতন পান (প্রাইমারির একজন শিক্ষক বেতন পান ১৩তম গ্রেডে, আর সরকারি অফিসের গাড়ির চালক ১২তম গ্রেডে বেতন পান। তিনি আবার অষ্টম শ্রেণি পাস), সেহেতু কম বেতন দিয়ে মেধাবীদের এ পেশায় আনা সম্ভব নয়। যেহেতু শিক্ষকদের নম্বর দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু কোনো শিক্ষার্থী তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে কম নম্বর দেওয়ার হুমকি তিনি দিতে পারেন। আর শিক্ষক নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমাজের ক্ষমতাবান পিতা-মাতার কথা চিন্তা করতে বাধ্য থাকবেন।
এখন নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে যে পরিমাণ হোমওয়ার্ক এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার ছিল, সেটা করা হয়নি। যেহেতু আগে এসব কাজ করা হয়নি, সেহেতু এর ফলাফল ক্ষতি বয়ে আনবে।
আজকের পত্রিকা: এনসিটিবির একেকটি বইয়ের একাধিক লেখক থাকেন। বই প্রকাশের আগে বিশেষজ্ঞের কাছেও পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয়। এরপরও কীভাবে ভুল থেকে গেল?
ড. কামরুল হাসান: যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকত তারাও পাঠ্যপুস্তক রচনাসহ যেকোনো বিষয়ে কমিটি গঠন করার আগে যোগ্যতার বাইরে আগে দলীয় বিবেচনায় করত। আওয়ামী লীগও একই কাজ করেছে। তাই দলীয় ভিত্তিতে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ থাকবে না। তাঁরা মূলত টাকার কারণে এসবে থাকতে চান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা ভালো বই লিখবেন, জাতি গঠনে কনট্রিবিউট করবেন, সে বিবেচনা থাকে না। বিবেচনায় থাকে দলের কথা।
এমনটা না হলে পাঠ্যপুস্তকে অসংখ্য ভুল থাকার কথা নয়। আমার ধারণা, শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা এসব কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে যে মোরাল দায়িত্ববোধ থাকার কথা, সেই বোধ নিয়ে তাঁরা কাজটি করেননি। এসব কারণে পাঠ্যপুস্তকে এত ভুল থেকে গেছে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষামন্ত্রী পাঠ্যবইয়ের ভুল যাঁরা ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের সাধুবাদ না জানিয়ে এটাকে সরকার হটানোর ইস্যু বলেছেন। এভাবে কথা বলা কতটা যৌক্তিক?
ড. কামরুল হাসান: সব সরকারই মনে করে যেসব সংগঠন, সংস্থা তাদের সমালোচনা করে, তারা এটা করে একটা দুরভিসন্ধি নিয়ে। যেকোনো ধরনের সমালোচনা আসলে আমলে নেওয়া উচিত। সমালোচনা নেওয়ার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেটা আমরা পাইনি। তারা চায় সবাই তাদের তোয়াজ, তোসামোদি করবে। সবাই সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা বন্ধ করে দিয়ে তোয়াজ করলে কি দেশ সামনের দিকে এগোবে?
যাঁরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা করেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানানো উচিত ছিল। উল্টো সমালোচনা করে, তাঁদের থামিয়ে দিয়ে কোন পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা হলো।
আমাদের দেহের রক্তের মধ্যে শ্বেতকণিকার কাজ হলো জীবাণু ও রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। একটা সমাজও তাই। সমগ্র জনগণের মধ্য থেকে কিছু মানুষ থাকা উচিত শ্বেতকণিকার মতো। তাঁরা সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। আশঙ্কার কথা, তাঁদের সংখ্যা ক্রমে কমে যাচ্ছে। যখন শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যায়, তখন দেহে ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে আমাদের সমাজ এখন ক্যানসারে আক্রান্ত।
আজকের পত্রিকা: একটা গ্রহণযোগ্য শিক্ষাব্যবস্থা এবং নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়নে আপনার পরামর্শ কী?
ড. কামরুল হাসান: স্বাধীনতার পরে কুদরাত-এ-খুদা থেকে এ পর্যন্ত সম্ভবত ১২ কি ১৩টি শিক্ষা কমিশন হয়েছে। যে সরকারের আমলে যে শিক্ষা কমিশন হয়েছে, সেই সরকারই কমিশনের রিপোর্ট মানেনি। এই সরকারের আমলে কবীর চৌধুরী শিক্ষা কমিশনে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মতামত কি বর্তমান শিক্ষাক্রমের সঙ্গে যায়? কমিটি করে, কমিশন গঠন করে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়, সেটা তালাবদ্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। এসব কাজ করেন মূলত আমলারা। আমলারা যখন শিক্ষাবিদ হয়ে যান, তখন যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে আরকি।
আমাদের দেশে চারটি মাধ্যম চালু আছে।
এতে সমাজের মধ্যে প্রচণ্ড বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চবিত্তদের সঙ্গে মাদ্রাসার কোনো সম্পর্কই নেই। সরকারের উচিত, গবেষণা করে দেখা এই বিভাজনটা কীভাবে কমানো যায়। এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা উচিত, যেখানে কীভাবে আমাদের দেশের মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
বর্তমানে যেটা চালু করা হয়েছে, তাতে ধনী-গরিবের ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে এবং ইংরেজি মিডিয়াম আরও বেশি জনপ্রিয় হবে।
শুধু শিক্ষা কমিশন করলেই হবে না, এর সঙ্গে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং তাঁদের সন্তোষজনক বেতন দিতে হবে। যাতে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে আগ্রহী হন।
সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চালু করলাম ঘোড়ার আগে গাড়ি লাগিয়ে দেওয়ার মতো করে। কারণ, সৃজনশীল শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে আমরা পদ্ধতি চালু করে দিলাম। ফলে সেটা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাক্রমেও একই ঘটনা ঘটবে। কারণ, শিক্ষকদের এখানে মেরুদণ্ড সোজা রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই এটাও ব্যর্থ হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
ড. কামরুল হাসান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: নতুন শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে আদৌ কি শিক্ষার্থীরা এসব অর্জন করতে পারবে?
ড. কামরুল হাসান মামুন: শুনতে ভালো শোনায়। কাদের দিয়ে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসার কথা সরকার ভাবছে? কাদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জনের কথা বলা হচ্ছে? এগুলো অর্জনের প্রাথমিক শর্ত হলো আলোকিত এবং মেরুদণ্ডওয়ালা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। তার জন্য শিক্ষকদের বেতন ও সম্মানের মাধ্যমে সমাজে উচ্চাসনে বসানো। অন্য সব ঠিক আছে ধরে নিলেও বর্তমান মানের শিক্ষক, তাঁদের বেতন ও এই মানের সম্মান দিয়ে এসব অর্জনের কথা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে অন্য সবই তো ঠিক নেই। আদর্শটা হলো, আমরা একসময় চাইতাম একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের দেশে চার ধারার শিক্ষাব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান। মাদ্রাসা, বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন এবং ইংলিশ মিডিয়াম। একসময় আমি, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনু মুহাম্মদসহ আরও অনেকে চাইতাম এত ধারা না রেখে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। বর্তমান সরকার নতুন যে শিক্ষাক্রম করল, এটা কিন্তু বিএনপিও করতে চেয়েছিল। আমরা সেই সময় প্রতিবাদ করায় তারা সেটা করতে পারেনি। কিন্তু এই সরকার করতে পেরেছে। কারণ, যারা বাধা দিয়েছিল, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের চিন্তার লোক বলে প্রতিবাদ হয়নি। কে করছে তার ওপর নির্ভর করে আমরা প্রতিবাদ করব, না করব না। এটাই হলো আমার একটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
এই একমুখী শিক্ষার নামে বর্তমান সরকার বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাকে এক করে ফেলেছে। এভাবে এক করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আর তা যদি করতেই হয়, যেমন ইংলিশ মিডিয়ামে যেভাবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাকে বাদ দিয়ে সব বিষয় ওপেন করে দেওয়া হয়েছে। যার যে বিষয় পছন্দের সে তার ইচ্ছেমতো তা নেবে। এখন কী করা হলো বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়কে একত্র করা হলো। যে শিক্ষার্থী গণিতের ভয়ে মানবিক বিভাগে যেত, সে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবে। এতে সবাই একটু করে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা পড়বে। তার বিনিময়ে যারা একসময় বিজ্ঞান পড়ত, তাদের একটা বিশেষ বিষয় ছিল উচ্চতর গণিত। এটাকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান আগে যতটুকু পড়তে হতো তার চেয়ে কম পড়তে হবে। তার কারণ হলো, যারা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, তাদের জ্ঞানোপযোগী বিজ্ঞান বই তৈরি করা হয়েছে। একদিক থেকে কিছু নামালাম আর অন্যদিকে কিছু উঠালাম। উঠিয়ে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এলাম; মানে জোর করে সবাইকে সব বিষয়ে পড়াতে বাধ্য করা হলো।
বৈচিত্র্যের কারণেই পৃথিবীটা সুন্দর। চারুকলা, সংগীত যেমন প্রয়োজন, তেমনি সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও বিজ্ঞান প্রয়োজন। কোনো বিষয়ই গুরুত্বহীন নয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় ‘ভালো থাকি’ নামে একটা বিষয় যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে; মানে উদ্দেশ্যটা হলো এসএসসি পাস করার পর যেন আমি কিছু কাজ করে খেতে পারি। তাৎক্ষণিক কিছু করতে পারার জন্য মাধ্যমটির নাম কারিগরিবিদ্যা হওয়ার কথা ছিল।
পৃথিবীর সব দেশে প্রবহমান মূল নদীর কিছু শাখানদী থাকে, তেমনি একটি দেশের শিক্ষারও একটা মূল ধারা থাকবে এবং তার কিছু শাখাও থাকবে।
শাখাগুলো হবে কারিগরি, ভোকেশনাল ইত্যাদি। এখানে মূল শিক্ষার ধারাকে কারিগরির পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আমার ধারণা, বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে আমাদের সরকার এসব কাজ করছে। এই শিক্ষাব্যবস্থা হলো উন্নত দেশগুলোর বাজারে পরিণত হওয়ার একটা ফর্মুলা। এটা একটা অনুৎপাদনশীল কাজ হবে। এই শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞানের বইয়ে কিছু কিছু ভালো কনটেন্ট থাকলেও বড় সমস্যা হলো, দার্শনিক সমস্যা।
এই দার্শনিক জায়গাটা যত দিন শুদ্ধ করা হবে না, তত দিন ভালো কিছু আশা করা ঠিক হবে না।
আজকের পত্রিকা: নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। শতভাগ মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। এটা কতটুকু সফল হবে?
ড. কামরুল হাসান: আবারও একই কথা বলতে হবে। পরীক্ষা ছাড়াও আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা অর্জন সম্ভব। কিন্তু তার জন্য এই ব্যবস্থা চালুর আগে কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের অনুকূলে নয়। নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা দরকার ছিল। আমাদের সামাজিক অবস্থায় কোনো উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সন্তানকে কম নম্বর দেওয়ার সাহস কোনো স্কুলের শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দেশে শিক্ষকদের যে বেতনকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাতে কোনো শিক্ষকের মেরুদণ্ড শক্ত হতে পারে না।
মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক দিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মধ্যে যাওয়া মানেই হলো, এটা একটা বিপর্যয় ঘটাবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকেরা যেহেতু কম বেতন পান (প্রাইমারির একজন শিক্ষক বেতন পান ১৩তম গ্রেডে, আর সরকারি অফিসের গাড়ির চালক ১২তম গ্রেডে বেতন পান। তিনি আবার অষ্টম শ্রেণি পাস), সেহেতু কম বেতন দিয়ে মেধাবীদের এ পেশায় আনা সম্ভব নয়। যেহেতু শিক্ষকদের নম্বর দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু কোনো শিক্ষার্থী তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে কম নম্বর দেওয়ার হুমকি তিনি দিতে পারেন। আর শিক্ষক নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমাজের ক্ষমতাবান পিতা-মাতার কথা চিন্তা করতে বাধ্য থাকবেন।
এখন নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে যে পরিমাণ হোমওয়ার্ক এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার ছিল, সেটা করা হয়নি। যেহেতু আগে এসব কাজ করা হয়নি, সেহেতু এর ফলাফল ক্ষতি বয়ে আনবে।
আজকের পত্রিকা: এনসিটিবির একেকটি বইয়ের একাধিক লেখক থাকেন। বই প্রকাশের আগে বিশেষজ্ঞের কাছেও পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয়। এরপরও কীভাবে ভুল থেকে গেল?
ড. কামরুল হাসান: যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকত তারাও পাঠ্যপুস্তক রচনাসহ যেকোনো বিষয়ে কমিটি গঠন করার আগে যোগ্যতার বাইরে আগে দলীয় বিবেচনায় করত। আওয়ামী লীগও একই কাজ করেছে। তাই দলীয় ভিত্তিতে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ থাকবে না। তাঁরা মূলত টাকার কারণে এসবে থাকতে চান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা ভালো বই লিখবেন, জাতি গঠনে কনট্রিবিউট করবেন, সে বিবেচনা থাকে না। বিবেচনায় থাকে দলের কথা।
এমনটা না হলে পাঠ্যপুস্তকে অসংখ্য ভুল থাকার কথা নয়। আমার ধারণা, শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা এসব কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে যে মোরাল দায়িত্ববোধ থাকার কথা, সেই বোধ নিয়ে তাঁরা কাজটি করেননি। এসব কারণে পাঠ্যপুস্তকে এত ভুল থেকে গেছে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষামন্ত্রী পাঠ্যবইয়ের ভুল যাঁরা ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের সাধুবাদ না জানিয়ে এটাকে সরকার হটানোর ইস্যু বলেছেন। এভাবে কথা বলা কতটা যৌক্তিক?
ড. কামরুল হাসান: সব সরকারই মনে করে যেসব সংগঠন, সংস্থা তাদের সমালোচনা করে, তারা এটা করে একটা দুরভিসন্ধি নিয়ে। যেকোনো ধরনের সমালোচনা আসলে আমলে নেওয়া উচিত। সমালোচনা নেওয়ার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেটা আমরা পাইনি। তারা চায় সবাই তাদের তোয়াজ, তোসামোদি করবে। সবাই সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা বন্ধ করে দিয়ে তোয়াজ করলে কি দেশ সামনের দিকে এগোবে?
যাঁরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা করেছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানানো উচিত ছিল। উল্টো সমালোচনা করে, তাঁদের থামিয়ে দিয়ে কোন পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা হলো।
আমাদের দেহের রক্তের মধ্যে শ্বেতকণিকার কাজ হলো জীবাণু ও রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। একটা সমাজও তাই। সমগ্র জনগণের মধ্য থেকে কিছু মানুষ থাকা উচিত শ্বেতকণিকার মতো। তাঁরা সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। আশঙ্কার কথা, তাঁদের সংখ্যা ক্রমে কমে যাচ্ছে। যখন শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যায়, তখন দেহে ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে আমাদের সমাজ এখন ক্যানসারে আক্রান্ত।
আজকের পত্রিকা: একটা গ্রহণযোগ্য শিক্ষাব্যবস্থা এবং নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়নে আপনার পরামর্শ কী?
ড. কামরুল হাসান: স্বাধীনতার পরে কুদরাত-এ-খুদা থেকে এ পর্যন্ত সম্ভবত ১২ কি ১৩টি শিক্ষা কমিশন হয়েছে। যে সরকারের আমলে যে শিক্ষা কমিশন হয়েছে, সেই সরকারই কমিশনের রিপোর্ট মানেনি। এই সরকারের আমলে কবীর চৌধুরী শিক্ষা কমিশনে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মতামত কি বর্তমান শিক্ষাক্রমের সঙ্গে যায়? কমিটি করে, কমিশন গঠন করে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়, সেটা তালাবদ্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। এসব কাজ করেন মূলত আমলারা। আমলারা যখন শিক্ষাবিদ হয়ে যান, তখন যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে আরকি।
আমাদের দেশে চারটি মাধ্যম চালু আছে।
এতে সমাজের মধ্যে প্রচণ্ড বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চবিত্তদের সঙ্গে মাদ্রাসার কোনো সম্পর্কই নেই। সরকারের উচিত, গবেষণা করে দেখা এই বিভাজনটা কীভাবে কমানো যায়। এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা উচিত, যেখানে কীভাবে আমাদের দেশের মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
বর্তমানে যেটা চালু করা হয়েছে, তাতে ধনী-গরিবের ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে এবং ইংরেজি মিডিয়াম আরও বেশি জনপ্রিয় হবে।
শুধু শিক্ষা কমিশন করলেই হবে না, এর সঙ্গে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং তাঁদের সন্তোষজনক বেতন দিতে হবে। যাতে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে আগ্রহী হন।
সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চালু করলাম ঘোড়ার আগে গাড়ি লাগিয়ে দেওয়ার মতো করে। কারণ, সৃজনশীল শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে আমরা পদ্ধতি চালু করে দিলাম। ফলে সেটা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাক্রমেও একই ঘটনা ঘটবে। কারণ, শিক্ষকদের এখানে মেরুদণ্ড সোজা রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই এটাও ব্যর্থ হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
ড. কামরুল হাসান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

নতুন শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে আদৌ কি শিক্ষার্থীরা এসব অর্জন করতে পারবে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

নতুন শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে আদৌ কি শিক্ষার্থীরা এসব অর্জন করতে পারবে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

নতুন শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে আদৌ কি শিক্ষার্থীরা এসব অর্জন করতে পারবে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

নতুন শিক্ষাক্রমে মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সূক্ষ্ম চিন্তা এবং সৃজনশীলতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে আদৌ কি শিক্ষার্থীরা এসব অর্জন করতে পারবে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫