Ajker Patrika

আগুন লাগলে পানির জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তা

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আগুন লাগলে পানির জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তা

বগুড়ার শহরের সাতমাথায় অবস্থিত নিউমার্কেট ও হকার্স মার্কেট। মার্কেট দুটিতে আগুন লাগলে প্রাণহানির মতো বড় ঘটনার পাশাপাশি পুড়ে যেতে পারে কোটি টাকার সামগ্রী। কারণ, মার্কেট দুটির অবস্থান ঘিঞ্জি এলাকায়। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি মার্কেটের ভেতরে ঢুকতে পারবে না। এদিকে, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ঠনঠনিয়ায়। সেখান থেকে সাতমাথার দূরত্ব দুই কিলোমিটার। সেখানে পানি আনতে সময় লেগে যাবে প্রায় ২০ মিনিট। এমন ঝুঁকি মাথায় নিয়েই চলছে কেনাবেচা।

এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে মার্কেটের কাছাকাছি দুটি পানির রিজার্ভার স্থাপন করার পথ দেখিয়ে দিয়েছে বগুড়া ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স অফিস। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি ব্যবসায়ীরা। এমনটাই দাবি করেছেন বগুড়া ফায়ার সার্ভিস সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুল হালিম।

বগুড়া ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, স্টেশনে রয়েছে পানিবাহী দুটি গাড়ি। যার একটিতে ধরে সাড়ে ৬ হাজার লিটার, অন্যটিতে ধরে ৪ হাজার ৩০০ লিটার। একটি ট্যাংকে পানি ভরতে সময় লাগে প্রায় ১০ মিনিট। আর এই গাড়ি মার্কেটে পৌঁছাতে সময় লাগে আরও ১০ মিনিট। এভাবে প্রায় ২০ মিনিট পর পানি ছিটাতে গেলে ততক্ষণে পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে আগুন। আর মার্কেট থেকে বের হতে না পেরে ধোঁয়াতেই মারা যেতে পারে অনেক মানুষ।

ফাউন্ড্রি ওয়ার্কশপ, বস্ত্র, পোশাক, জুতা, জুয়েলারিসহ নানা রকম পণ্যের তিন হাজারের বেশি দোকান আছে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সর্ববৃহৎ মার্কেট নিউমার্কেট এবং রেলওয়ে হকার্স মার্কেটে। মার্কেট দুটিতে কাজ করেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার দোকান কর্মচারী। এ ছাড়া দৈনিক পাঁচ-সাত হাজার ক্রেতার সমাগম ঘটে এই মার্কেট দুটিতে। কিন্তু এখানে নেই অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো তথ্যমতে, শাপলা সুপার মার্কেট, আলামিন মার্কেট এবং হকার্স মার্কেট নিয়ে গড়ে উঠেছে রেলওয়ে মার্কেট। প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এই মার্কেটে দোকান আছে ৮০৫টি। আর সাড়ে চার বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা নিউমার্কেটে দোকান ও গুদামঘর আছে দুই হাজারের বেশি। মার্কেটে একতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত ভবন আছে। আগুন লাগলে জরুরি অবস্থায় মার্কেটের সরু সিঁড়ি বেয়ে মানুষের নিচে নামা কঠিন হয়ে পড়বে। এদিকে সরু গলি দিয়ে তড়িঘড়ি করে ছুটে বের হওয়াও সহজ নয়। অন্যদিকে পানির অভাবে তাৎক্ষণিক আগুন নেভাতেও পারবেন না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৷

নিউমার্কেটের বড় মসজিদ লেন দোকান মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক কামরুল বাতেন বলেন, ১৯৯০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চারটি বড় অগ্নিকাণ্ডে এই মার্কেটের ১১০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে চারটি অগ্নিকাণ্ডই রাতে সংঘটিত হওয়ায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। আশপাশে পানি না থাকায় করতোয়া নদী থেকে পানি এনে আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস।

এ থেকে রক্ষা পেতে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা মার্কেট দুটির কাছাকাছি দুটি পানির রিজার্ভার স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের মতে, নিউমার্কেটের জন্য সাতমাথার মুজিব মঞ্চ চত্বরে একটি এবং হকার্স মার্কেটের জন্য কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পানির রিজার্ভার তৈরি করলে আগুন নেভানোর কাজ সহজ হবে।

স্টেশনমাস্টার হালিম বলেন, ‘মার্কেটের কাছাকাছি দুটি পানির রিজার্ভার রাখলে খুব সহজেই মার্কেটের আগুন নেভাতে পারব আমরা। কিন্তু এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বারবার প্রস্তাব দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’

রেলওয়ে শাপলা সুপার মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান লিটন বলেন, ‘আমাদের মার্কেটটি দোতলা হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরু হলে তখন রিজার্ভার তৈরি করব।’

বগুড়া সদর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছর আগে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং হয়েছিল। কাঁঠালতলায় একটা রিজার্ভার করার বিষয়ে বলেছিলাম, কিন্তু তাতে পৌরসভার অনুমোদন দরকার। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বললেন, পৌরসভার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে আমাদের পরে জানাবেন। কিন্তু আর কিছু বলেননি।’

বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, শহরের হকার্স মার্কেট এবং নিউমার্কেট খুবই ঘিঞ্জি। ভেতরে গাড়ি ঢুকবে না। আগুন লাগলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের উচিত অল্প কিছু টাকা খরচ করে দুটি রিজার্ভার স্থাপন করা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত