Ajker Patrika

গাজীপুরেও মতিউরের রিসোর্ট-জমি

গাজীপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট ছাড়াও গাজীপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমান, তাঁর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নামে আরও জমি আছে। এর বেশির ভাগই পুবাইল থানার খিলগাঁও মৌজায়। এসব জমি মতিউর, তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি, প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়ের নামে। 

গাজীপুর জেলা প্রশাসন সূত্র ও স্থানীয় সূত্রে এসব জানা গেছে। খিলগাঁও মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। এখানেই আছে মতিউরের পরিবারের আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট নামের রিসোর্ট। স্থানীয় সূত্র জানায়, ৬০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা এই রিসোর্টের ৩৫ বিঘার মালিক তিনি ও তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ। 

আপন ভুবনের নামে ৫ একর ৭৭৭ শতাংশ জমি নামজারি ও জমাভাগ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজের অনেক আগে থেকে টঙ্গীতে যাতায়াত ছিল। পুবাইলের খিলগাঁওয়ের আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তাঁদের সখ্য হয়। সেই সূত্রে আমিনুলের বাড়ির আশপাশে তাঁদের নামে ৩৫ বিঘা জমি কেনেন। পরে আরও কিছু জমি কেনা হয়। এর সঙ্গে স্থানীয়দের কাছ থেকে আরও জমি বার্ষিক ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে ‘আপন ভুবন’ করা হয়। সেখানে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ১০০ টাকা।

আছে বিভিন্ন রাইডসহ অসংখ্য স্থাপনা, ১৮টি কটেজ। এক রাতের জন্য প্রতিটি কটেজের ভাড়া ৭ হাজার টাকা। রিসোর্টে সারা দিন কাটানো যায়। আছে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও। সেখানে শুটিংও হয়। পুবাইলেরই ভাদুন গ্রামটি নাটক-চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য বিখ্যাত।

আপন ভুবন রিসোর্ট ছাড়াও মতিউরের পরিবারের সদস্যদের নামে আরও জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খিলগাঁও মৌজায় ৩৬৫৬ নম্বর জোত নম্বরে মতিউর রহমানের নামে ২৭ শতাংশ এবং ৪২৪৯ নম্বর জোতে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ জমি নামজারি করা হয়েছে। একই মৌজায় তাঁর স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে ৩৪৫০ নম্বর জোতে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি খারিজ করা হয়েছে। 

খিলগাঁও মৌজাতেই মতিউর-লায়লা দম্পতির ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ৩৬৪৮ নম্বর জোতে ১৯ শতাংশ, ৪৪১৫ নম্বর জোতে ৭.২২ শতাংশ, ৪৪১৬ নম্বর জোতে ৫৫ শতাংশ, ৩৯৫০ নম্বর জোতে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি নামজারি ও জমাভাগ করা হয়েছে। একই মৌজায় মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে ৩৯২৫ নম্বর জোতে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৩৬৪৫ নম্বর জোতে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি খারিজ করা হয়েছে। এই চারজনের যৌথ নামে ৩৫৫৭ নম্বর জোতে ৪৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং প্রথম স্ত্রী ও অর্ণবের নামে ৩৬৫২ নম্বর জোতে ৪৫ শতাংশ জমি নামজারি ও জমাভাগ করা রয়েছে। 

লায়লা কানিজের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। 

স্থানীয় লোকজন জানান, এসব জমি মতিউরের পরিবারের দখলে রয়েছে। খিলগাঁও মৌজাতেই গ্লোবাল শুজের নামে ২১, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৯১, ৯২, ১১৪, ১২০, ১২১, ১২২, ১২৩ ও ১২৪ নম্বর জোতে শিল্প খারিজ করে জমাভাগ করা ৬৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এই গ্লোবাল শুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাইয়ুম হাওলাদার মতিউর রহমানের ভাই। ময়মনসিংহের ভালুকায় এই প্রতিষ্ঠানের বিশাল কারখানা রয়েছে। 

এ ছাড়া লায়লা কানিজের নামে-বেনামে গাজীপুরে পাঁচ কাঠা, পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। 

খিলগাঁও রেলগেটের কাছে আপন ভুবন পিকনিক স্পটে গতকাল মঙ্গলবার সকালে টিকিট কেটে ঢুকে দেখা যায়, সেখানে আছে বাঁশ ও বেতের ঘর, লাইটিং ঘর, কনফারেন্স হল, ডাইনিং স্পেস, আমবাগান, লেক, সঙ্গে সেতু, রেস্টুরেন্ট, ডলফিন এরিয়া, ক্রিকেট মাঠ, ফুটবল মাঠ, ব্যাডমিন্টন কোর্ট। উত্তর দিকে বাগান, কাচের মঞ্চ, গ্রিনহাউস, বক ফোয়ারা, বাংলো ঘর, মাছ ধরার পুকুর, কাঠের ঘর। আছে লতাপাতা, গাছে ঘেরা ছোট ছোট ঘর। এটি নাটক, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপনের শুটিং ও পিকনিকের জন্যও ব্যবহার হয়। 

আপন ভুবনে এক তত্ত্বাবধায়কসহ ১২ জন কর্মচারী রয়েছেন। এক কর্মচারী বলেন, ‘এখানে কয়েকজনের জমি আছে। মতিউর স্যারেরও আছে। সবার নাম আমি জানি না। অল্প দিন ধরে এখানে কাজ করছি।’ 

আপন ভুবনের তত্ত্বাবধায়ক মো. রাজিব মিয়া সেখানে ছিলেন না। পরে যোগাযোগ করলে মোবাইলে বলেন, স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তিনি বাইরে আছেন। রিসোর্টে প্রায় ৬০ বিঘা জমির মধ্যে ৩৫ বিঘা নিজস্ব। বাকি জমি ভাড়া নেওয়া। মতিউর রহমানের কথা জানতে চাইলে তিনি ‘অনেকেই আছেন’ বলে সংযোগ কেটে দেন। 

স্থানীয় দোকানদার শরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সবাই জানি আপন ভুবন কানিজ ম্যাডামের। এখন জানছি, এই ম্যাডাম মতিউরের বউ। আগে শুটিং হতো। এক বছর ধরে ১০০ টাকা করে টিকিট করেছে।’ 

জমির বিষয়ে মতিউর রহমান বা লায়লা কানিজের বক্তব্য জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত