Ajker Patrika

মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থী আছে কাগজে, বাস্তবে নেই

আপডেট : ৩০ মে ২০২২, ২৩: ১৮
মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থী আছে কাগজে, বাস্তবে নেই

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার এমপিওভুক্ত পূর্ব ইন্দ্রকুল ফিরোজা কামাল বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় ১৯ বছর ধরে কোনো শিক্ষার্থী নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ খাতা-কলমে ২৫০ শিক্ষার্থী আছে বলে দাবি করছে। শিক্ষকেরা নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা তুলছেন।  

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ইন্দ্রকুল ফিরোজা কামাল বালিকা দাখিল মাদ্রাসা ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় আব্দুল মোতালেব মিয়া নামের এক ব্যক্তি। এরপর ২০০৪ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠাতা মোতালেব মিয়া শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে আছেন। মাদ্রাসার সুপার হিসেবে আছেন তাঁর পুত্রবধূ মাহফুজা আক্তার এবং মেয়ে নুরজাহার রাঢ়ি ইবতেদায়ির শিক্ষক, অপর দুই ছেলে খাইরুল ইসলাম অফিস সহকারী ও সিদ্দিকুর রহমান নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত আছেন।

ইবতেদায়ি ও দাখিল ১০ম পর্যন্ত মাদ্রাসার দায়িত্বে আছেন ১৩ জন। এর মধ্যে ইবতেদায়িতে ৪ জন, দাখিলে ৫ জন শিক্ষক, অফিস সহকারী, আয়া, নৈশপ্রহরী ও দপ্তরিসহ ১ জন করে মোট ১৩ জন শিক্ষক ও কর্মচারী প্রতি মাসে ২ লাখ ৮ হাজার টাকা বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।

গত বুধবার বেলা তিনটার দিকে মাদ্রাসায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসেন মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতি। এক প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, বুধবার শিক্ষার্থীদের একটু তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হয়েছে।

মাদ্রাসার সুপারের কক্ষে একটি টেবিল ও চারটি চেয়ার দেখা গেছে। নেই কোনো আলমারি কিংবা খাতাপত্র। কক্ষে টাঙানো ছিল না জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ছবি। জাতীয় পতাকা মুড়িয়ে রাখা হয়েছে একটি বাঁশের সঙ্গে। এরপর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। ব্ল্যাকবোর্ড, ডাস্টার ও চকসহ কোনো শিক্ষা উপকরণও পাওয়া যায়নি।  

পর দিন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায় পাঁচজন শিক্ষক উপস্থিত আছেন। তবে কোনো শিক্ষার্থীর হদিস পাওয়া যায়নি। আইরিন বেগম নামের একজন 
শিক্ষক ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর শেষ উপস্থিতি স্বাক্ষর করেছেন।

এরপর গত ৭ মাস শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাঁর স্বাক্ষর নেই। অথচ বেতন ভাতা সঠিক সময়ে তুলেছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার মাহফুজা বেগম বলেন, ‘আগে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। ২০০৯ সালের পর শিক্ষকদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থী এ মাদ্রাসায় ভর্তি হয় না। দূরের কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করে এখান থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়ে মাদ্রাসা টিকিয়ে রাখছি। শিক্ষকেরা নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকতে পারে না। আমরা তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠাব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত