Ajker Patrika

শুল্কছাড় চান গাড়ি ব্যবসায়ীরা

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ১০: ৪৯
Thumbnail image

২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশে গাড়ি আমদানি কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। এর প্রধান কারণ ডলার সংকট এবং দেশের বাইরে ডলার যাওয়া নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এর ফলে করোনার পর ঘুরে দাঁড়িয়েও ফের ধাক্কা খায় গাড়ির ব্যবসা।

এমতাবস্থায় আসন্ন জাতীয় বাজেটে কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার, ছাড়সহ নীতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন দেশের গাড়ি ব্যবসায়ীরা। গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বা বারভিডা ৯টি প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে।

বারভিডার অফিস সেক্রেটারি জাকারিয়া আল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হিসাব মতে, গত বছরের জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে দেশে গাড়ি আমদানি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কমেছে। এর মূলে রয়েছে ডলার সংকটের কারণে বিলাসজাত পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি। অনুরূপভাবে গাড়ি বিক্রির পরিমাণও কমেছে।’

বারভিডার সদস্য ‘অটো ডিসপ্লে’র স্বত্বাধিকারী আমিনুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যবসার বর্তমান অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। অনেকেই ব্যবসার বাইরে চলে এসেছেন। ডলার সংকটের কারণে এবং বিলাসজাত পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নীতির কারণে আমদানি অনেক কমেছে। আগে হয়তো যারা ৫০ ইউনিট আমদানি করতে পারত, তারা এখন ১০ ইউনিট আমদানি করছে।’

এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা চাঙা রাখতে বিদ্যুৎ চালিত বা ইলেকট্রিক ভেহিকেলের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বারভিডা, যা বর্তমানে ২০ শতাংশ হারে ধার্য করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে এর যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে বারভিডা বলছে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইলেকট্রিক ভেহিকেলকে সব ধরনের শুল্ক-কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া জরুরি।

গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত ১০ থেকে ১৫ আসনবিশিষ্ট মাইক্রোবাসের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক দিতে হয় ২০ শতাংশ। সেটিও প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। আর গণপরিবহনের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর পক্ষে বারভিডার যুক্তি, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কারণে জাপানি তৈরি বাসগুলোর মূল্য অনেক বেশি বলে বর্তমান রাজস্বনীতি সহায়ক না হওয়ায় তা আমদানি করা যাচ্ছে না। প্রস্তাব অনুযায়ী এসব বাস আমদানির সুযোগ হলে দেশে নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার ওঠানামার কারণে প্রতি মাসে শুল্ক-করের পরিমাণে ব্যাপক তারতম্য হয়। ফলে সারা বছরই গাড়ির বাজারে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে এবং গ্রাহক পর্যায়ে একই উৎপাদন সালের ভিন্ন ভিন্ন মাসের সমমানের গাড়ির মূল্য নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। সমস্যার সমাধানে সুনির্দিষ্ট শুল্ক-কর (স্পেসিফিক ডিউটি) আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে আমদানিকারকেরা। তাদের বক্তব্য, এতে স্থিতিশীল বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং অবচয় প্রদানের জন্য গাড়ির বয়স গণনা পদ্ধতির সংশোধনের সুপারিশ করেছে বারভিডা। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি হিসেবে বিবেচনা করার জন্য গাড়ির চেসিস তৈরির পরের সালের প্রথম দিন থেকে জাহাজীকরণের দিন পর্যন্ত গণনা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আর ইয়েলো বুকে উল্লিখিত এনপির (নিউ প্রাইস) গড় মূল্য থেকে ২০ শতাংশ ডিলার্স কমিশন বাদ দিয়ে ভিত্তিমূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে আমদানিকারকেরা। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কায়নের মানদণ্ড হিসেবে ডিলার্স কমিশনের পাওনা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করে বারভিডা।

এ ছাড়া হাইব্রিড গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কহার এবং ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কহার পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব করেছে বারভিডা।

জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত গাড়ির ব্যাপারে বারভিডা বলছে, বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার প্রক্রিয়ায় দেশের বিপুল সামর্থ্যবান ক্রেতার জন্য এসব গাড়ি বর্তমানে কোনো বিলাসদ্রব্য নয়। নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব গাড়ির চাহিদা বিশ্বব্যাপী ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তাই প্রস্তাবিত হারে সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা হলে তা শিল্পায়নে বিশেষ সহায়ক হবে।

বাজেট প্রস্তাবের বিষয়ে আমিনুল হক বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার স্বার্থেই এসব প্রস্তাব বিবেচনা করা জরুরি। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। শুল্ক কম হলে দাম কম হবে। দাম বেশি হলে ক্রেতাদের অসুবিধা। তাঁরা কিনতে অসুবিধায় পড়ে যান। এতে করে বিক্রি কম হয়। আমদানিও কম হয়। ফলে রাজস্ব আহরণ কমে আসে।

আমিনুল হক আরও বলেন, অনেক আগে থেকেই বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য এসব সুপারিশ করে আসছে বারভিডা। কিন্তু সব কার্যকর হয়নি। সময়ে সময়ে কিছু হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক বিষয়ই বাকি রয়ে গেছে। যদি প্রস্তাবিত শুল্ক প্রত্যাহার কার্যকর করা হয়, তবে সবার জন্যই তা ভালো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত