Ajker Patrika

সেতু মানে শুধু দুই পাড়কে জোড়া নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১৭: ৩৯
Thumbnail image

পদ্মা সেতুর আগে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু ছিল যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু। সেখানে নদীশাসনের জন্য নদীর ম্যাপিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া মানচিত্র। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) প্রযুক্তি। শুধু নদীশাসন নয়, পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

যেকোনো বড় নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেই নদীশাসন খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। কারণ, এটি ঠিকমতো করা না গেলে দেখা যাবে সেতুটি অকার্যকর হয়ে গেছে। কীভাবে? নদীর স্বভাবই হলো গতিপথ বদল। ফলে নদীশাসন ঠিকমতো না হলে দেখা যাবে সেতুটি যে স্থানে ছিল, সেখানেই আছে। কিন্তু নদী পথ বদলে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক প্লাবিত করে বা ভেঙে অন্যদিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই সেতু তৈরি মানে নদীর দুই পাড়কে সংযুক্ত করা নয় শুধু। একই সঙ্গে নদীর পানিপ্রবাহ ঠিক রাখাও এক বড় চ্যালেঞ্জ। কতটা?

শোনা যাক প্রয়াত অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী কী বলছিলেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাবেক প্রধান এ প্রকৌশলী সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের নদীগুলো আবার ভিন্ন প্রকৃতির সমস্যার জন্য বিখ্যাত। এগুলো যেমন তীব্র স্রোতে এগিয়ে চলে, তেমনি পাড় ভাঙার (ইরোশন) কারণে প্রতিবছর নদীর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। অধিকাংশ নদী তাদের অবস্থান খুব অল্প সময়েই পরিবর্তন করে ফেলে। নদীগুলোর প্রকৃতিও আলাদা। কিছু নদী সর্পিলাকার, এঁকেবেঁকে চলাচল করে। এদের বলে মিয়েন্ডারিং। এগুলো আঁকাবাঁকা হয়ে বহুদূর পর্যন্ত যায়। একই চ্যানেল অনেক দূর পর্যন্ত যেতে যেতে একসময় শর্টকাট পথ বের করে ফেলে। ফলে অশ্বখুরাকৃতির বাঁওড় সৃষ্টি করে। আরেক ধরনের নদী হলো ব্রেডেড।

এটাকে মেয়েদের চুলের বিনুনির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এ ধরনের নদীর একাধিক চ্যানেল থাকে, যেগুলো একটি অপরটির ওপর দিয়ে ক্রমে এগিয়ে যেতে থাকে। যমুনা ব্রেডেড জাতীয় নদী। তবে পদ্মা একটি মিয়েন্ডারিং নদী।’

পদ্মা সেতু করার সময় নদীশাসন করতে গিয়ে যে পন্থা অবলম্বন করা হয়, তার নাম গাইড বান্ড উইথ ফলিং অ্যাপ্রোন। এ ক্ষেত্রে নদী পাড় থেকে যত দূর খনন করা যায়, তা করে রাখা হয়। আধুনিক ড্রেজার ব্যবহার করে ২০-২৫ মিটার পর্যন্ত খনন করে ঢাল তৈরি করা হয়। এর ওপর ভারী পাথর ফেলে রাখা হয়। কিংবা অনেক সময় জিও টেক্সটাইলের বালুভর্তি ভারী ব্যাগ ফেলে রাখা হয়। ফলে ওই অংশের নরম মাটি যদি কোনো কারণে ভেঙে নিচে সরেও যায়, তাহলে ওই ভারী পাথর বা ব্যাগ আরও নিচে পড়ে গিয়ে শক্ত স্তর সৃষ্টি করে, যা নদীর গতিপথ পরিবর্তনে বাধার সৃষ্টি করবে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

এখন এই নদীশাসন ইচ্ছামাফিক করলেই তো আর হবে না। এ জন্য নদীর গতিপথ হিসাব করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। এই গতিপথ হিসাবের জন্যই পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে জিপিএস প্রযুক্তি। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় নদীর গতিপথের মানচিত্র কিনে আনা হয়েছিল সুইজারল্যান্ড থেকে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে জিপিএস মানচিত্র। এ ছাড়া সেতুর নকশা তৈরির ক্ষেত্রে নদীর গতিপথ বদলের চিত্র পেতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া চিত্রের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত