Ajker Patrika

লাজনী যেন আরেক ‘আসমানী’

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০৭
লাজনী যেন আরেক ‘আসমানী’

‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।’ পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের ওই আসমানীর মতো লাজনীকে দেখতে হলে যেতে হবে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুরের লতাবর গ্রামে।

লাজনী খাতুনের ঘর বলতে খেতের মাঝখানে বাঁশের বেড়া আর ওপরে টিন দিয়ে ছাওয়া একটি ঝুপড়ি। আসবাব বলতে বাঁশের চৌকি, রান্নার দু-একটা বাসনকোসন। নেই শীত নিবারণের গরম কাপড় বা লেপ। এই ঝুপড়িতেই দিনযাপন লাজলীর।

লাজলী (২৮) ওই গ্রামের মৃত আব্দুস সালাম সালুর তৃতীয় সন্তান। পরিবারের কারোর সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ নেই। কেউ তাঁর খোঁজও নেয় না। ফলে খেয়ে-না খেয়ে দিন দিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন তিনি।

এলাকাবাসী জানান, আট বছর আগে লাজলীর বাবা সালু মারা গেলে পরিবারে খারাপ অবস্থা তৈরি হয়। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে লাজলী তৃতীয়। তিন বোনের বিয়ে হলে তাঁরা স্বামীর সংসারে চলে যান। বিদেশ যাওয়ার কথা বলে বড়ভাই গ্রামের ঘরবাড়ি জায়গা-জমি বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। লাজলী এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। একসময় গ্রামে একটি ছেলেকে ভালোবেসে না পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। একপর্যায়ে লালমনিরহাট শহরে পুলিশ তাঁকে সন্দেহবশত আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এক বছর হাজতে থাকার পর পরিবারের লোকজন খোঁজ পেয়ে তাঁকে বাড়িতে এনে চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ করে তোলেন।

লাজলীর মা আয়শা বেগমও একসময় কাজের সন্ধানে ছোট ছেলে ও লাজলীকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে গিয়ে আয়শা বিভিন্ন বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন আর লাজলী নেন গার্মেন্টসের চাকরি। পরে লাজলী ঢাকা থেকে গ্রামে চলে এসে চাচার বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর মায়ের অংশের সামান্য জমির ওপর একটি টিনের ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে তাঁর দিন চলে। তিনি কারও কাছে যানও না, খানও না। সবসময় একা একা থাকেন। মন চাইলে এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তাঁর মা, ভাই, বোনেরা তাঁর খোঁজও নেন না। এভাবেই কষ্টে আছেন তিনি।

লাজলী বলেন, ‘চাচার বাড়িতে ছিলাম। সেখানে আর কত থাকি। এখানে অনেক কষ্টে পড়ে আছি। আমার মা ঢাকা থেকে এসে বাড়ি করবে। তাই ঘরটি করে এখানে আছি।’

ইউএনও মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি মেয়েটির খোঁজখবর নিচ্ছি। আমরা তাঁকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত