Ajker Patrika

এক বুলেটে থেমে গেল শাওনের জীবনযুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
Thumbnail image

করোনাকালে স্কুল ছেড়ে পরিবারের হাল ধরতে রাজধানীতে চলে আসেন শাওন খান (১৮)। একটি রেস্তোরাঁয় কাজ নেন ৮ হাজার টাকা বেতনে। বকশিশের টাকায় নিজে চলতেন, আর বেতনের পুরো টাকাই বাড়িতে পাঠাতেন। অসুস্থ বাবা-মা আর দুই ভাইবোনের তাতে কোনোরকমে চলে যেত। 

তবে শাওনের চলা থেমে গেল একটিমাত্র বুলেটে। গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ছাত্র ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে রামপুরা টিভি সেন্টার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। জুমার নামাজ পড়ে ফেরার পথে বুকের বাঁ পাশে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন শাওন।

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উত্তর উলানিয়ার নির্মাণশ্রমিক জাকির হোসেনের ছেলে শাওন। তিনি টিভি সেন্টারের বিপরীতে হায়দার আলী প্রিন্স রেস্তোরাঁর কর্মী ছিলেন। 

নিহতের চাচাতো ভাই মো. আতিক জানান, তিনিও হোটেলে কাজ করেন। ঘটনার দিন জুমার নামাজ পড়ে ফেরার পথে গুলি লাগে শাওনের। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। ওই দিন রাতে লঞ্চযোগে রওনা দিয়ে পরদিন সকালে শাওনের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান তাঁরা। 

আতিক বলেন, ‘শাওনের স্বপ্ন ছিল, আবার স্কুলে যাবে। কিন্তু সেটা আর হলো না।’ 

বাবা জাকির বলেন, ‘আমি ঢাকাতেই ছিলাম। সাড়ে ৪টার দিকে শাওনকে মেডিকেলে গিয়ে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখি। ওর সঙ্গে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়। আমাদের কষ্ট বলে বোঝাতে পারব না। এখন কীভাবে সংসার চালাব, তা আল্লাহ জানেন।’

নিহতের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, ‘করোনাকালে ২০২১ সালের দিকে শাওন পড়ালেখা ছেড়ে ঢাকায় ভাতের হোটেলে কাজ নেয়। সে উলানিয়া করোনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। শাওনের পরিবার তার টাকার ওপর নির্ভর করত। কারণ, বাবা-মা দুজনই অসুস্থ।’ 

কথা হয় মুমূর্ষু মা সেলিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের চানরাইতে শাওন আইছিল। ৩ দিন থাইকা চইলা যায়। আমরা ওর টাকায় ভালোই চলছিলাম।

এখন শাওনের বাবা অসুস্থ, আমারও মেরুদণ্ড ফাঁক হয়ে গেছে। আমার ছেলেই নাই, কার কাছে কী চাইমু?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত