Ajker Patrika

পানি পর্যাপ্ত, স্বস্তিতে ধানচাষিরা

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১২: ৩৫
Thumbnail image

পানিতে পরিপূর্ণ দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা সেচ প্রকল্পের খাল। চলতি খরা মৌসুমে নদীতে রয়েছে প্রায় ৭ হাজার কিউসেক পানি। এতে স্বস্তিতে উত্তরের তিন জেলা তিস্তা সেচ প্রকল্পের ইরি-বোরোখেতের চাষিরা। সংশ্লিষ্টদের আশা, এ বছরে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন বাড়বে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ দৌলা আজকের পত্রিকাকে জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্প চালুর আগে এ অঞ্চলের সিংহভাগ জমি অনাবাদি ছিল। জমির পানি ধারণক্ষমতা ছিল না। প্রকল্পটির কারণে এসব জমি এখন পরিণত হয়েছে উর্বর জমিতে। সেচ খরচও লাগছে অনেক কম। এক সময়ের মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলটি আজ হয়েছে কৃষিতে সমৃদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রায় ৬০ ভাগ পরিত্যক্ত খাল সংস্কার ও পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে এক লাখের বেশি হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে।

সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১২ উপজেলায় ৭০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ইরি-বোরো চাষ করা হয়েছে। অথচ এ মৌসুমে সেচ প্রকল্পের আওতায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু খাল খনন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পের আওতায় ছোট-বড় নদী ও খাল খনন করায় তিস্তার পানি সহজেই চাষিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। এতে প্রকল্পের পানি দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত আরও ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ করেন চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সংযোগ খালগুলোও পানিতে ভরপুর। মাঠে মাঠে কৃষকেরা ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত। তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি নিষ্কাশন পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে চাষাবাদ করতে পেরে অধিক লাভবান হচ্ছেন এলাকার কৃষকেরা। বৈরী আবহাওয়ায় এবার চাষাবাদ কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে তা নিয়ে চিন্তিত নন এলাকার কৃষকেরা। তাঁদের মতে, সেচ প্রকল্পের আওতায় বছরে তিন মৌসুমে একরপ্রতি খরচ দিতে হয় মাত্র ৪৮০ টাকা। সে হিসাবে শুধু বোরো মৌসুমে এক একর জমিতে সেচ দিতে খরচ হয় ১৬০ টাকা। প্রকল্পের বাইরে যেখানে কৃষকদের গুনতে হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। প্রকল্পের সেচের পানিতে কম খরচে বেশি লাভে এবার তাঁরা খুশি।

নীলফামারী সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের কৃষক আলী হোসেন জানান, ‘শ্যালো বা সেচ পাম্প দিয়ে জমিতে পানি দিলে একরপ্রতি ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তা ছাড়া পাম্প মালিকদের আগাম টাকা দিয়েও সময়মতো পানি পাওয়া যায় না। পানির অভাবে বোরোখেত লাল রং ধারণ করে এবং খেত ফেটে চৌচির হয়ে যায়। কিন্তু তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি পেয়ে প্রতি একরে খরচ কমেছে সাড়ে চার হাজার টাকা। সেচ পাম্প মালিকের পেছনে আর ধরনা দিতে হয় না। ইচ্ছেমতো খেতে পানি দেওয়ায় ধানের গাছগুলো সবুজ ও সতেজ হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রকল্পের আওতায় তিস্তা নদীর পানি দিয়ে চাষাবাদ করলে জমিতে সারের পরিমাণ কম লাগে। জমিতে ইচ্ছেমতো পানি দিতে পারি। সেচের পানিতে এবার তিন একর জমিতে বোরো রোপণ করেছি। বিঘায় ২০ মণ ধান উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। এ ছাড়া এ পানি দিয়ে তিনি ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন শাকসবজি খেতে সহজে সেচ দিতে পারছেন বলে জানান।

তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, ‘আমরা প্রতিটি কমান্ড এলাকার বোরোচাষিদের চাহিদামতো সেচ প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি। তিন জেলার ১২ উপজেলায় ৭০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে রোটেশন পদ্ধতিতে সম্পূরক সেচ দেওয়া হয়েছে। ফলে সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় প্রায় তিন লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। যা এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রাখার পক্ষে যে যুক্তি দিলেন আলী রীয়াজ

রাজধানীতে নিখোঁজ কিশোরী নওগাঁয়, যা বললেন সঙ্গে থাকা তরুণের বাবা

নবাবি প্রশাসনে হিন্দু আমলারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ

আটক ৩ জনকে ছাড়িয়ে নিতে উত্তরায় থানায় হামলা শিক্ষার্থীদের

উপদেষ্টা রিজওয়ানার কাছে মাত্র ১৫ মিনিট সময় চেয়ে পাইনি: বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত