Ajker Patrika

চিকিৎসা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা

কামাল হোসেন, কয়রা
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১৩: ০১
Thumbnail image

সমাজসেবা অধিদপ্তর ও আকিজ ফাউন্ডেশন থেকে কয়রা উপজেলায় অসহায় ও অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ চক্রের সদস্যরা কিছু নারী কর্মীর মাধ্যমে কয়েকটি উপজেলার বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। প্রায় এক হাজার মানুষের কাছ থেকে অন্তত ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন তাঁরা। তবে এক বছরেও কাউকে ভাতা পাইয়ে দিতে পারেননি বলে অভিযোগে জানা গেছে।

চক্রটি গত ১ বছরে কয়রা, পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ৯০০ মানুষের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই চক্রটির মূল হোতা কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের মসজিদকুঁড় গ্রামে অবস্থিত মাতৃ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম। মাঠপর্যায়ে তাঁর কিছু নারী কর্মী আছেন। এই কর্মীদের মাধ্যমে ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, প্যারালাইজড ও জন্মগত হার্টের নারী রোগীদের টার্গেট করেন তিনি। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পাইয়ে দেবেন বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এক বছরের মধ্য কোনো ব্যক্তিকে ভাতা পাইয়ে দিতে পারেননি।

নিজেদের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য এই চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের মোবাইলে কথা বলিয়ে দিতেন এবং তাঁরা টাকা পেয়েছেন বলে গল্প শোনাতেন। এই কথা শোনার পর বিশ্বাস করে তাদের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন মানুষ।

মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলারচর গ্রামের জোবেদা খাতুন বলেন, আমি দীর্ঘদিন হার্টের সমস্যায় ভুগছি। আমাকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ১ লাখ টাকা ভাতা পাইয়ে দেবেন বলে নজরুল আমার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ১ বছর হয়ে গেল কিছুই পেলাম না। এখন শুনছি সব ভুয়া। চাকলা গ্রামের আছিফা খাতুন বলেন, নজরুল ভাইয়ের মরিয়ম নামের এক নারী কর্মীর মাধ্যমে বিষয়টা আমরা প্রথমে জানতে পারি। ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে আমার এলাকার ৯ জন মিলে নজরুল ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে আসি।

ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা। ফেব্রুয়ারি মাস চলে যাওয়ার পর বলে করোনার জন্য এখনো টাকা আসেনি। খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবা। এরপর রমজান মাসে ফোন দিয়ে বলে তোমাদের টাকা চলে এসেছে। এই টাকা পাইতে আবেদন এবং ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তার জন্য আরও ১২ হাজার টাকা লাগবে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ৯ জন আরও ১২ হাজার টাকা দিয়ে দেই। এর কিছুদিন পরে যোগাযোগ করলে আমাদেরকে সাতক্ষীরা সমাজসেবা অফিসে টাকা এসেছে বলে জানায়। সাতক্ষীরা অফিসে গেলে জানা যায়, চিকিৎসা ভাতার নামে তাঁদের কাছে কোনো টাকা আসেনি।

মরিয়ম খাতুন বলেন, আমি না বুঝে শ্রীরামপুর গ্রামের রহিমা নামের এক নারীর কথায় প্রায় একশ লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নজরুল ভাইকে দিয়েছি। কিন্তু কেউ ভাতা পাননি। এখন এই লোকগুলো আমাকে এসে ধরে। তাঁদের সঙ্গে করে তাঁর বাড়িতে গেলে আমাদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদনের কপিগুলো জোর করে নিয়ে তাড়িয়ে দেন। এ ব্যাপারে মাতৃ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত নই। চিকিৎসা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে আমি কোনো নারীর কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি।

আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল বলেন, ‘নজরুল হচ্ছে খুলনা জেলার টাউট নাম্বার ওয়ান। তাঁর স্ত্রী আমার পরিষদের নারী সদস্য। মাঝে আমার পরিষদে ৩শ থেকে ৪শ নারী এসে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আমি তাঁর স্ত্রীকে ডেকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের কথা বলে দিয়েছি।’

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম এস দোহা বলেন, ‘অসহায় মানুষকে টার্গেট করে প্রতারক চক্র বিভিন্ন ইস্যু বের করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত