Ajker Patrika

কেটেছে আঁধার, জেগেছে আশা

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ১০: ৫০
কেটেছে আঁধার, জেগেছে আশা

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দুর্গম চরাঞ্চল কাচিকাটা, চর আত্রা, নওপাড়া আর কুন্ডেরচর ইউনিয়নে। এই চার ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ মানুষের বাস। ভৌগোলিক কারণে বিদ্যুৎ ছিল এই অঞ্চলের মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। যুগের পর যুগ কেরোসিন তেলের কুপি আর হারিকেনই ছিল এই চরাঞ্চলের মানুষের রাতের আঁধার তাড়ানোর একমাত্র ভরসা।

তবে বদলে গেছে চরবাসীর ভাগ্য। সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের আলোয় দূর হয়েছে রাতের অন্ধকার। চরবাসী এখন স্বপ্ন দেখে মিনি ডকইয়ার্ডশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, হিমাগারসহ নানা শিল্পকারখানা স্থাপন হবে এই চরে। তাতে হবে কর্মসংস্থান। ফিরবে ভাগ্যের চাকা। ইতিমধ্যে বিদ্যুতের মাধ্যমে সেচসুবিধা পাওয়ায় কৃষি উৎপাদনে খরচ কমেছে।

শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে পদ্মাবেষ্টিত চর আত্রা, নওপাড়া, কাচিকাটা আর কুন্ডেরচর এলাকাকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনার উদ্যোগ নেন স্থানীয় সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। শরীয়তপুর থেকে নদীপথে দূরত্ব বেশি হওয়ায় মুন্সিগঞ্জ থেকে সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৮০ কেটি টাকা ব্যয়ে নওপাড়ায় একটি ১০ এমভিএ সাবস্টেশন ও ৪২৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন শেষে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে চরাঞ্চলের ২৩ হাজার পরিবার। চাহিদার তুলনায় সাবস্টেশনের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে মুন্সিগঞ্জে।

সম্প্রতি চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, এখানে দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের সমারোহ। ডিজেল ইঞ্জিনের পরিবর্তে ফসলের মাঠে সংযুক্ত করা হয়েছে বৈদ্যুতিক মোটর। সেচ খরচ কমে আসার পাশপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসুবিধার কারণে ফসল উৎপাদন বেড়েছে। এতে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। নদীর তীরঘেঁষা কিছু এলাকায় চলছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। জানা যায়, চরাঞ্চলে কিছু মিনি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করেছেন উদ্যোক্তারা। বিদ্যুতের সাহায্যে সেখানে দিন-রাত পরিশ্রম করে জাহাজ নির্মাণ করছেন শ্রমিকেরা। পাশেই কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান লিখে টাঙানো হয়েছে সাইনবোর্ড। বিদ্যুৎ সংযোগের পর এমন নানা উদ্যোগে বদলে যাচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য।

ডকইয়ার্ডশিল্পে কর্মরত শ্রমিক জাকির হোসেন জানান, রাজধানীর খুব কাছে এবং নৌপথে যাতায়াত সহজ হওয়ায় এখানে ডকইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে বিদ্যুতের অভাবে এতদিন তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এই এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় কিছু ডকইয়ার্ডশিল্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ফসলের মাঠে বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে পানি দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব কৃষক আয়নাল সরদার। আগে ডিজেল ইঞ্জিনে সেচে যে খরচ হতো, বর্তমানে তা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে।

চরের বসতবাড়ি ও হাটবাজারে আলো ছড়াচ্ছে বিদ্যুৎ। সেই আলোয় পড়ছে চরের শিক্ষার্থীরা। গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর থাকছে চরাঞ্চলের হাটবাজার। টিভি, ফ্রিজ, ডিশ অ্যান্টেনা, কম্পিউটার সব ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার এখন চরবাসীর হাতের নাগালে। ফটোকপি করতে এখন আর পদ্মা পাড়ি দিয়ে নড়িয়া যেতে হয় না চরবাসীকে।

কাচিকাটা ইউনিয়নের চরজিংকিং গ্রামের শাহিনা বেগম বলেন, ‘অন্ধকারে পোলাপাইন পড়ালেখা করতে চাইত না। সন্ধ্যা হইলে ঘুমাইয়া পরত। অহত কারেন আইছে, আলোতে রাইত জাইগা পোলাপাইন লেহাপড়া করে।’

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে চরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ১০ মেগাওয়াটের সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার ছিল। চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়াটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রকৌশলীদের সহায়তায় সাবমেরিন কেব্‌লে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। চরে এখন বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত