Ajker Patrika

চাঁপাই কাঁপে ককটেলে

রিমন রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯: ২০
চাঁপাই কাঁপে ককটেলে

‘ককটেল তো এখানে পটকা। এই জিনিসটা নিয়ে জানতে আপনাকে এত দূর থেকে কেন আসতে হলো বুঝলাম না।’ গত বুধবার দুপুরে নিজের দপ্তরে অনেক মানুষের সামনে এই প্রতিবেদককে কথাটি বললেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলমগীর জাহান।

ওসির পাশে তখন বসে ছিলেন ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম চর বাগডাঙ্গা থেকে আসা মো. হাবিব। হাসতে হাসতে ওসির কথায় সায় দিয়ে বললেন, ‘বিয়েবাড়িতে পটকা ফুটিয়ে মানুষ আনন্দ করে না? ওই রকম। এখানে ককটেল ফুটিয়ে আনন্দ করে, এটি দিয়েই মানুষকে ভয় দেখায়।’

সীমান্তের এই জেলায় ককটেল যে আসলেই ‘পটকা’ তা বোঝা গেল একটু খোঁজখবর নিতেই। শহরের লোকজন জানালেন, দুই দশক আগে থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেলের ব্যবহার শুরু। পদ্মার ওপারের চরের গ্রামগুলোতে আগে খই ফোটার মতো ককটেল ফুটত। পরে এর ব্যবহার শুরু হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। কয়েক বছর আগেও শিবগঞ্জের মর্দানা ও রানীহাটির মানুষের ঘুম ভাঙত ককটেল ফোটার শব্দে। এখন ককটেল ফুটছে শহরেও।

এসব ককটেল তৈরি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই। আর এই ককটেল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে। এ ছাড়া জমি দখলে নেওয়ার সময় ভাড়াটে বাহিনী প্রভাবশালীর পক্ষে ককটেল হামলা করে। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতেও বাড়ি কিংবা অফিসের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

৪ নভেম্বর হামলার শিকার হন শিবগঞ্জ লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক শিলু ও তাঁর ছেলে ইমন। রাত পৌনে ১০টার দিকে ভাঙা ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আশরাফুল জানান, তিনজন মুখোশধারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কুপিয়ে জখম করা হয় তাঁদের। পরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

গত ২২ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ
পৌরসভার জিয়ানগর এলাকায় হঠাৎই ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। বাড়িটি পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদের। বিস্ফোরণে শহিদ ও তাঁর সৎমা ফাহমিনা বেগম গুরুতর আহত হন। দুই দিন পর ফাহমিনা মারা যান। বিস্ফোরণের পরই পুলিশ মামলা করে। এতে শহিদ ও তাঁর মাকে আসামি করা হয়। সদর থানা-পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শহিদের বাড়িতে ককটেল তৈরির সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। শহিদের নামে আগেও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়েছিল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহিদ ককটেলের কারিগর। নতুনদের প্রশিক্ষণও দেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে এখন চারটি গ্রুপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। এর মধ্যে জেম গ্রুপের সদস্য শহিদ। একাধিক বিস্ফোরক মামলার আসামি খাইরুল আলম জেম শিবগঞ্জের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। জেম কাউন্সিলর থাকাকালে তাঁর বাহিনী এবং সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সালামের বাহিনীর বোমাবাজির প্রতিযোগিতা হতো। ২০২০ সালেও মর্দানায় ককটেলের আঘাতে সালাম গ্রুপের সাইফুদ্দিন ওরফে সাফু নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। কিছুদিন পর সালাম মারা যান। ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হন সালামের ভাতিজা আযম আলী।

এরপর মর্দানায় আর সুবিধা করতে পারেননি জেম। তিনি চলে আসেন শহরে। জেমের সঙ্গী হন নিয়ামুল, শহিদ, বিহারি সোহেল, বিরু, মেসবাউল, আশরাফ, বোমা ইসমাইল, ওয়াসিম, বোমা আলা, হাসান ও গোলাপ। এই গ্রুপটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শহরে এখন ওদুদের ‘ক্ষমতা’ কমেছে। দাপট বেড়েছে হঠাৎ আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমানের। ওদুদ ও মোখলেসুরের রাজনৈতিক বিরোধ।

আরও তিন বাহিনী
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো চার গ্রুপের সদস্যরাই ককটেলের ব্যবহার করে। গ্রুপের সবাই ককটেল বানাতেও পারে। এদের বলা হয় ‘কারিগর’। আর গ্রুপের যেসব সদস্য ককটেল ফাটানোর কাজটি করে, তাদের বলা হয় ‘ফাইটার’। ফাইটার সবচেয়ে বেশি হাসিবুল গ্রুপে। এ গ্রুপে আছে বোমা আশিক, বোমা আকবর, নিশান, তারেক, ছোট জুয়েল, ছোট আব্দুল্লাহ, মাইছা মাসুম, কাইল্যা জুয়েল, মনিরুল, ওয়াসি, হাসিন, হোসেন, আপন, ছোট ওসমান, চিকা ওসমান, আবির, আরাফাত, অন্তর, মোশাররফ, সাজু খলিল, হযরত, রতন, সামিরুল ও ভাংড়ি এসরাফিল।

আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন বাক্কার। এ গ্রুপে সোহাগ, নাগর, নিতাইসহ আছেন ২০-২৫ জন। সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক’ গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করেন পৌর কৃষক লীগের সভাপতি মেসবাহুল হক টুটুল। এ গ্রুপে আছেন বেলাল, মিজান, বাক্কার, তারেক, রানা, সাজু, কোয়েল, রোকন, ইব্রাহিম, ড্রাইভার মিলন। এই গ্রুপটি স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘চাটুয়া গ্রুপ’ নামে পরিচিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাসখানেক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর পাশে এক পক্ষের হয়ে বিবদমান জমি দখলে যায় টুটুল বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিপক্ষের সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে মারধরও করে তারা। এ নিয়ে টুটুল গ্রুপের তারেককে প্রধান আসামি করা মামলা হয়। পরে পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে আটটি ককটেল উদ্ধার করে।

শহরে ককটেলবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর কৃষক লীগের সভাপতি মেসবাহুল হক টুটুল বলেন, ‘সব মিথ্যা কথা। কোনো দিন আমি একটা হাঁসুয়াও হাতে নেইনি।’ বিস্ফোরক আইনে তাঁর নামে মামলা কেন, জানতে চাইলে টুটুল বলেন, ‘রাজনীতিতে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েকটা মামলা হয়েছে।’

গত ২৮ অক্টোবর এই কৃষক লীগের নেতা টুটুলের নাম উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্থানীয় দৈনিক চাঁপাই চিত্র পত্রিকার সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন। এর আগে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর পত্রিকায় পৌর মেয়র মোখলেসুর ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ জামানকে নিয়ে দুটি খবর প্রকাশিত হয়। এ কারণে পত্রিকার সম্পাদককে হুমকি দেওয়া হয়। জিডিতে বলা হয়, ২৭ অক্টোবর রাতে টুটুল পত্রিকা অফিসে গিয়ে সম্পাদককে না পেয়ে ফোন করে হুমকি দেন। জিডি করার পরদিন মধ্যরাতেই চাঁপাই চিত্র অফিসের ছাদে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

পৃষ্ঠপোষকতায় মেয়র
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান বোমাবাজদের তিনটি গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর আশকারা পেয়ে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে নেমেছে। ৭ নভেম্বর এ নিয়ে মেয়রসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন বালুগ্রাম নতুনপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মুনিরুল ইসলাম। অভিযোগে তিনি বলেছেন, ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে তিনি একটি দোকানঘর নির্মাণ করছেন। এ জন্য মেয়রের হুকুমে অন্য আসামিরা তাঁর কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা চান। চাঁদা দিতে না চাইলে আসামিরা গত ২২ অক্টোবর তাঁকে মারধর করেন। মুনিরুল জানান, চাঁদা না দিয়ে দোকান করলে আসামিরা তা বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।

১৪ নভেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল জলিল। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘আমি প্রার্থী হয়েছি বলে মেয়রের লোকজন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। খুব অনিরাপদ মনে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাসী বাহিনী শহরে জমি দখলসহ নানা অপরাধ করছে। তাঁর সহযোগী টুটুল সব অপরাধের সঙ্গেই সম্পৃক্ত।’

ককটেল বাহিনীকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমি তো ভাই এটা আপনার মুখ থেকেই প্রথম শুনলাম।’

গানপাউডার ব্যবসা যাদের হাতে
আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রঘুনাথপুর, ফতেপুর, নারায়ণপুর, চার বাগডাঙ্গা, ইসলামপুর, উজিরপুর, জহিরপুর ট্যাক ও বোগলাউড়ি ঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ককটেলের প্রধান উপাদান গানপাউডার আসছে। কিছু গানপাউডার সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের ট্রাকে করেও ভারত থেকে চলে আসছে বলে অভিযোগ আছে। বেশির ভাগ গানপাউডার আসে ভারতের মুর্শিদাবাদের মহলদারপাড়া থেকে। ৬ থেকে ৭ হাজার রুপিতে এক কেজি গানপাউডার পাওয়া যায়। সীমান্ত এলাকার কারবারিরা ভারত থেকে এসব সংগ্রহ করেন। পরে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন এপারের কাটু, বাক্কার, সোহাগ, সালাম, নুহু, ফয়েজ, আজিম, এডু, ওদুদ, মোহরিলসহ আরও অনেকে। এরা ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা কেজি দরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে গানপাউডার বিক্রি করে থাকে।

আজকের পত্রিকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ককটেল কারিগরের সঙ্গেও কথা বলেছে। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, এক কেজি গানপাউডারে ছয়টি ককটেল বানালে তা শক্তিশালী হয়। এখন ১০টি পর্যন্ত বানানো হচ্ছে। প্রতি পিস ককটেল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রিও করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে বলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সংরক্ষণ করছেন। ককটেল বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে খুবই কম। ঘটলে তা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

গ্রামে গ্রামেও বোমাবাজি
শহরের বাইরেও সদর ও শিবগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার কিংবা মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে বোমা ফোটে। এর মধ্যে রানীহাটি এলাকায় সালাম ও আশরাফুল গ্রুপের মধ্যে মাঝে মাঝেই ককটেলবাজির ঘটনা ঘটে। কালিনগর ও সুন্দরপুরে বিরোধে জড়ায় সালাম মেম্বার ও হান্নান মেম্বারের লোকজন। ইসলামপুরে জসিম ও আক্তারুজ্জামানের লোকজনও কম যায় না। রামচন্দ্রপুর ও মহারাজপুরেও রহমতের লোকজনের সঙ্গে সাবেক এমপি আবদুল ওদুদের লোকজনের বিরোধ লেগে থাকে। চর বাগডাঙ্গায় আলম ও বাবু মাস্টার গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। জঞ্জালপাড়ায় মাদক ব্যবসার বিরোধে দুই গ্রুপ মাঝে মাঝেই বোমাবাজিতে জড়াত। গত বছরের আগস্টে ককটেলের আঘাতে জিয়ারুল ইসলাম নামের একজন মারা গেলে এলাকাটি এখন একটু শান্ত।

সংঘর্ষের হিসাব নেই
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেল নিয়ে কেমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে তার হিসাব পুলিশের কাছে নেই। শিবগঞ্জ ও সদর থানায় ঘুরেও এ তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু সংঘর্ষে কেউ মারা গেলে কিংবা বিস্ফোরক উদ্ধারের পর মামলা হলে সেই তথ্যটিই থানায় আছে। চলতি বছরের ১১ মাসে শিবগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে সাতটি। আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৮ জন। ককটেল উদ্ধার ৩৮টি, গান পাউডার উদ্ধার ২০০ গ্রাম। সদর থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে দুটি। উদ্ধার হয়নি ককটেল কিংবা গানপাউডার।

র‌্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্প চলতি বছরে দুটি অভিযানে ৬০টি ককটেল উদ্ধার করেছে। তবে কোনো গানপাউডার উদ্ধার হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি আদালতে বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার চলে। আদালতগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন মোট ২৪৩টি মামলা চলমান আছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা বলছে
র‌্যাব-৫-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তৌকির বলেন, ‘এসব অভিযান চালাতে হলে বিশেষজ্ঞ দল লাগে। এটা আমাদের নেই। তাই ঘন ঘন অভিযান করা যায় না। মাঝে মাঝে রাজশাহী থেকে টিম নিয়ে আসি। এই আজ যেমন (গত বৃহস্পতিবার) ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে উদ্ধার করা ককটেল নিষ্ক্রিয় করছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, ‘ককটেলবাজি এখানকার চিরাচরিত নিয়ম। সীমান্ত এলাকায় এটা একটা ট্র্যাডিশন। সীমান্ত থেকে পাউডার কিনে কিছু ছেলে এগুলো বানায়। কিছু পলিটিক্যাল ছেলেপুলে আছে। জমি নিয়ে কিছু গ্রুপ আছে, এরা আবার ভাড়ায় কাজ করে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) এ এইচ এম আবদুর রকিব ঢাকায় অবস্থান করছেন। কথা বলার জন্য কয়েক দফা ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এখন দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার রহমান। অফিসে গেলে আতোয়ার রহমান বলেছেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে শুধু এসপিই কথা বলতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত