Ajker Patrika

চিরযৌবনা বুড়ো বসন্ত

রুশা চৌধুরী
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৫৮
চিরযৌবনা বুড়ো বসন্ত

মাঝে মাঝে মানুষের কিছু অকালবোধন হয়, হতেই হয়। এ বছর কেন যেন বসন্তকালটাকে বারবার ‘বুড়ো ঋতু’ বলতে ইচ্ছে করছে। আসলে ঋতুটার এতে কোনো হাত নেই। ঋতুদের প্রাণ-মন সবটা থাকলেও ওরা তো আর মানুষ নয়, তাই নিষ্ঠুরতা করার, কাউকে কষ্ট দেওয়ার ক্ষমতা ওদের তেমন নেই। এসব কাজে সিদ্ধহস্ত শুধু আমরা মানুষেরা।

সেদিন এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ব্যারিস্টার আর শিক্ষক দম্পতি। তাঁদের বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবাও থাকেন। তাঁরা পালা করে তাঁদের দুই নাতি অমল আর কমলকে স্কুলে নিয়ে যান, শিক্ষকের বাসায় যান, বন্ধুদের বাড়িতে সঙ্গে যান, রাতে নাতিরা ভয় পেতে পারে বলে দুজন দুই নাতির ঘরে থাকেন। ওদের বাবা-মা নিজেদের কাজের ফাঁকে ‘গুড মর্নিং’, ‘গুড নাইট’, ‘নাম্বার কম পেলে কেন’, ‘আজ পার্টি’, ‘কাল আউটিং’ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। তবে হ্যাঁ, তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলের ‘প্যারেন্ট-টিচার মিটিং’ অথবা বাচ্চাদের বন্ধুদের মা-বাবাদের সঙ্গে ‘ভাই-ভাবি খেলা’য় তাঁরা সময় নষ্ট করে হলেও নিজেরা উপস্থিত থেকে সময়ের সদ্ব্যবহার করেন কিন্তু।

বসন্তকাল শুরু হয়েছে, সঙ্গে ছিল ‘ভালোবাসা দিবস’। এসব কথা আজকাল রাস্তার ইট-কাঠও জানে, এটা অমল-কমলের দাদা-দাদুও জেনে গিয়েছিলেন। দুজন মিলে খুব পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন তাঁরা এবার ভালোবাসা দিবসে বেড়াতে যাবেন। দুই নাতিও খুব খুশি। ওদের মাকে বলাতে তিনিও খুশি হয়েছিলেন। বাদ সাধলেন অমল-কমলের বাবা। বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি, সেখানে সস্ত্রীক যেতে হবে। বাচ্চাদের বাবা-মায়ের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে যাবেন, তাই বাবা-মাকে বললেন, ‘এই বুড়ো বয়সে আবার বসন্ত উৎসব কেন? তোমরা নাতি-নাতনিদের সঙ্গেই তোমাদের বসন্ত আর ভালোবাসা পালন করো, বাইরে যাবার দরকার নেই।’

কথাটা শোনার পর থেকে পুরো বসন্তটাই আমার কাছে ‘বুড়ো’ হয়ে গেল। চোখে ভাসছে সেই প্রবীণ দম্পতির মলিন মুখজোড়া। আহা জীবন!  সময়ের দাগ শুধু কেন মানুষের মনেই লাগে? এই যে এত বিশাল প্রকৃতি, কই তাদের কাছে তো বয়স কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না! সবার পরে যে ঋতু, তাকে সবচেয়ে রঙিন করে রেখেছে প্রকৃতি আর আমাদের বয়সের শেষ ভাগে পৌঁছে যাওয়া মানুষগুলোকে আমরা কেমন দূর দূর করে রংহীন করে রাখতে চাই।

‘লাল রং পোরো না’, ‘টিপ দিও না’, ‘এ মা! এই বয়সে চুলে ফুল দিয়েছ’, ‘স্বামী নেই তার আবার নাকে ফুল কেন!’ ...

এহেন হাজারো বেড়াজালে আমরা তাদের জীবনটাকে রংহীন করে আটকাতে চাই। এই বসন্তে বারবার মনে হচ্ছে জীবনটাকে ঠিকমতো ভালোবাসতেই শিখলাম না আমরা। যে অমৃতের সন্ধানে সময় মন্থন করে গেলাম, তার গায়ে নিজেরাই ধুলো মাখালাম। সেই ধুলোর আড়ালে অমৃতের পুত্র-কন্যারা হারিয়ে গেল শুধু। বসন্তে তাই মনের ভেতরে সেই তাকে একটু খুঁজে দেখি না, যে আমাদের মনটা রাঙাতে চায়। বোকা মানুষ আমরা, অকারণে নিষেধের বেড়াজাল দিয়ে দিয়ে ফুল-পাখি-আলো-হাওয়া সবকিছু দূরে সরিয়ে রাখছি।

নবীন-প্রবীণ প্রত্যেকের জন্যই জীবনের রংগুলো ঠিকঠাক থাকলে ক্ষতি কি খুব বেশি? যেই জাদুকর আমাদের নিয়ে খেলছেন, তাঁর হাতে রঙের ফোয়ারাটা অকৃপণ...এই বসন্তে আমরা তাই নবীন হই সবাইকে নিয়ে...বুড়ো হয়ে থাকুক শুধু চিরযৌবনা বসন্তকাল।

লেখক: আবৃত্তিশিল্পী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রুয়া নির্বাচন: বিএনপিপন্থীদের বর্জন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জামায়াতপন্থী ২৭ জন নির্বাচিত

‘পাপ কাহিনী’র হাত ধরে দেশের ওটিটিতে ফিরল অশ্লীলতা

সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, আটক ৫

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত