Ajker Patrika

ভোগাই নদের ভাঙনে সর্বস্ব হারাচ্ছেন রেনুরা

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

‘প্রতিবছরই ঢলের পানিতে বাড়িঘর ভাঙতে থাহে। গতবার ভাঙনের পর গরু-ছাগল বেইচ্চা ঘরের খাম আর জিনিসপত্র কিনছিলাম। পাঁচ শতাংশ জমির ওপর ঘর বানাইছিলাম নতুন কইরা। কিন্তু ঘরটাও ঢলের পানিতে গাঙে ভাসাইয়া গেছে। অহন তিন সন্তান লইয়া আরেকজনের বাড়িতে থাহি। আমরা অহন ভূমিহীন।’ কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ফুলপুর গ্রামের গৃহিণী রেনু বেগম (৪৮)।

শুধু রেনু বেগম নয় তাঁর মতো আরও অনেক দরিদ্র পরিবার ভোগাই নদের ভাঙনের কবলে পড়ে সহায়-সম্বল হারিয়েছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে তাঁরা এখন দিশেহারা। এ ছাড়া বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় আছে অসংখ্য বাড়িঘর ও আবাদি জমি। এ অবস্থায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। অন্যদিকে নিঃস্ব পরিবারগুলো মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলপুর গ্রামে ভোগাই নদের পাড় ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে ভিটেমাটি, বসতবাড়ি, গাছপালাসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভেঙে নদে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে কয়েকটি পরিবার ঘর রক্ষায় টিন ও খুঁটি খুলে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘরের আসবাবপত্র রক্ষায় সেগুলো বাড়ির আঙিনায় রেখে পলিথিন দিয়ে স্তূপ করে ঢেকে রাখা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফুলপুর গ্রাম ঘেঁষে ভোগাই নদ ভাটির দিকে বয়ে গেছে। কিন্তু নদীতে কোনো বাঁধ না থাকায় প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিটেমাটি নদীতে ভেঙে পড়ছে। গত ১০ বছরে ঢলের পানিতে ফুলপুর গ্রামের বেশির ভাগ অংশই নদে বিলীন হয়ে গেছে। আর পরিবারগুলো ভিটেমাটি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো রকমে মানবেতর জীবনযাপন করে দিন পার করছেন তাঁরা।

কৃষি শ্রমিক কেরামত আলী (৭০) বলেন, ‘প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলে ভিটেমাটি ভাইঙা গাঙের (নদী) মধ্যে পড়ে। শেষ সম্বল আড়াই শতাংশ ভিটেমাটি আছিল। কিন্তু এবারের ঢলে বাকি এক শতাংশ গাঙে ভাইঙা গেছে। বাকিটাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। অহন কী করমু। কই থাকমু? দুশ্চিন্তাই ঘুমাইবার পাই না।’

দিনমজুর রইছ উদ্দীন (৫৭) বলেন, ‘মাইনসের বাড়িত কয়দিন থাহন যায়। কেউ একবেলা খাবার দিব, কিন্তু থাকবার দিব না। প্রতিবছরের ভাঙনে সব হারাইয়া আমরা অহন নিঃস্ব।’

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। নতুন করে ১০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। এদের পুনর্বাসনে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি আমি শুনেছি। ওই ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা যদি 
যেতে চান, তাহলে সেই তালিকায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত