Ajker Patrika

হোগলের ‘কৃষ্ণকলি’ রহিমা

কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর)
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ০০
Thumbnail image

আকারের-ইঙ্গিতে, নিঃশব্দে কিংবা শব্দে মানবজীবন ভালোবাসার ছন্দমালায় গাথা। সংস্কৃতিভেদে ভালোবাসা প্রকাশে, ছন্দে ভিন্নতা রয়েছে, তবে ভালোবাসাশূন্য সংস্কৃতি নেই। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। পশ্চিমের দুনিয়ায় যা ভ্যালেন্টাইনস ডে নামে পরিচিত। বাংলায় ফাগুনে গাছে গাছে যেমন শিমুল ও পলাশ ফুটছে, ঠিক তেমনি ভালোবাসা দিবসের হাওয়াও দোলা দিচ্ছে। এমন দিনে বিরল এক ভালোবাসার গল্প শোনালে কেমন হয়? হয়ে যাক তাহলে।

‘কৃষ্ণকলি’ কবিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক, মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে, কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ...।’ ১৩ বছর আগে যেন সেই কালো হরিণ-চোখেই বাঁধা পড়েছেন ক্রিস হোগল। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান হোগল ভালোবেসে বিয়ে করেছেন রবিঠাকুরের কৃষ্ণকলির কালো মেয়েকে। এই ‘কালো মেয়ে’ যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামের আবুল খাঁর মেয়ে রহিমা খাতুন।

শুধু সাদা-কালোই নয়, ব্যবধান ছিল বিত্তেরও। ক্রিস হোগল পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার আর রহিমা জীবিকার সন্ধানে মুম্বাইয়ের বস্তির বাসিন্দা ছিলেন। অথচ প্রেমের বন্ধন এসব ব্যবধান ঘুচে দিয়েছে।

ক্রিস হোগল আজকের পত্রিকাকে জানান, এক যুগ আগে তিনি ভারতের মুম্বাইয়ের একটি কোম্পানিতে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনাচক্রে একদিন মুম্বাইয়ের রাজপথে রহিমার সঙ্গে তাঁর দেখা।

রহিমা জানান, শৈশবেই তাঁর বাবা আবুল খাঁ ও মা নেছারুন নেছা অভাবের তাড়নায় ভারতে পাড়ি দেন। তাঁদের সঙ্গী হন তিনিও। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে তাঁর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বাবা ছিলেন শ্রমিক। অভাবের কারণে ১৩-১৪ বছর বয়সেই কিশোরী রহিমাকে তাঁর বাবা বিয়ে দেন। সেখানে রহিমার তিন সন্তানের জন্ম হয়। দরিদ্র রহিমাকে একসময় ছেড়ে যান তাঁর স্বামী। বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে রহিমাও চলে যান মুম্বাইতে। কাজের সন্ধানে আশ্রয় নেন বস্তির খুপরিতে।

হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের রাস্তায় পরিচয় হয় হোগলের সঙ্গে। হোগল সামান্য হিন্দি বলতে পারতেন, রহিমাও পারতেন। এভাবেই শুরু ভাববিনিময়। পরিচয়ের ছয় মাসের মাথায় ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল দুজন বিয়ে করেন। তিন বছর পর নতুন কাজে যোগ দিতে চীনে চলে যান হোগল। সঙ্গী হয়ে চীনে যান রহিমাও। সেখানে পাঁচ বছর থেকে স্বামীকে নিয়ে ছুটে আসেন কপোতাক্ষের টানে। মেহেরপুর গ্রামে বাপের ভিটায় শুরু করেন পথচলা। হোগল এখন পুরোদস্তুর কৃষক। প্রায় ১০-১২ বিঘা জমিতে নিজেই চাষাবাদ করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, এ দম্পতির বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন একটি বহুতল ভবনের কাজ চলছে। ইঞ্জিনিয়ার হোগল বাড়ির উঠানে বসে গরুর ঘাস কাটছেন। হোগল জানান, স্ত্রীর কাছ থেকে বাংলা শিখেছেন তিনি। আর রহিমাকেও ইংরেজির তালিম দেন। ক্রিস হোগলের আগের স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সন্তানদের খোঁজখবর নেন তিনি।

রহিমা বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই আমরা।’ হোগল বলেন, ‘আমি বহু দেশ ঘুরেছি। তবে সত্যি বলতে, বাংলার প্রকৃতিকে ভালোবেসে ফেলেছি। স্থানীয়দের উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা আছে আমার। ভালোবাসা দিবসে আমরা গোলাপ বিনিময় করব, কেক কাটব। কপোতাক্ষের তীর ঘেঁষে দুজন হাঁটব। এভাবেই চোখে চোখ রেখে আমৃত্যু কাটাতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত