Ajker Patrika

জলবায়ু পরিবর্তনে লাভ হয়েছে মশার

মৃত্যুঞ্জয় রায়
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৯: ১৮
জলবায়ু পরিবর্তনে লাভ হয়েছে মশার

জলবায়ু পরিবর্তন এখন আমাদের নানামুখী সংকটের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো মশার বিস্তার। কর্মক্ষেত্রে প্রায় ২০ বছরে আমি পাঁচজন ডেনিশ ও ইউরোপীয় সহকর্মী পেয়েছিলাম এ দেশে। চাকরি শেষে সবাই যাঁর যাঁর দেশে ফিরে গেছেন।

এদের মধ্যে একজন রসিকতা করে আমাকে জানিয়েছেন, ‘তোমাদের দেশ আমাকে এক দারুণ অভিজ্ঞতা উপহার দিয়েছে, তা হলো মশা। ছোটবেলা থেকে কখনো এ জীবটিকে ডেনমার্কে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। বাংলাদেশে গিয়ে তার কামড় খেয়েছি। এখন ফিরে এসে হঠাৎ গ্রীষ্মে ডেনমার্কে ওই আপদের দেখা পেয়েছি। মনে হচ্ছে, তোমাদের দেশ থেকে এখন আমাদের মশারি আমদানি করতে হবে। আমরা কখনো এই খুদে জীবটার কথা ভাবিনি। আর ভাবিনি যে আমাদের ঘরগুলোর হিটিং সিস্টেমের পাশাপাশি এখন কুলিং সিস্টেমেও যেতে হবে। তাই মশারির সঙ্গে সিলিং ফ্যানও লাগবে আমাদের। আমদানির এ ব্যবসাটা ধরতে পারলে মন্দ হয় না!’

যতই এটাকে হেসে উড়িয়ে দিই না কেন, বাস্তবতাটা এখন তা-ই। বিশ্বের বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা গত সোয়া লাখ বছরে যা হয়নি, তার রেকর্ড ছাড়িয়েছে, জুনে এক দিন বিশ্বের বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে নাসা ১৭ দশমিক ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা নিকট অতীতে কখনো হয়নি। প্রতিদিনই এই গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড ভাঙছে আর গড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস সম্প্রতি দুবাইতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলনের (কপ-২৮) প্রস্তুতিমূলক সভায় জানিয়েছে, কিছুদিন ধরে ভূপৃষ্ঠে বায়ুর তাপমাত্রার বৃদ্ধি শিল্পযুগের আগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রয়েছে।

অথচ গত বছর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন চরম আবহাওয়ার মাত্রা ও বিস্তৃতি বাড়ছে। চলতি বছর বিশ্বের অনেক দেশে যে পরিমাণ গরম পড়েছে, সেসব দেশে অতীতে কখনো তা দেখা যায়নি, বিশ্বজুড়ে যে খরা ও দাবানল দেখা দিয়েছে, ভেনিসের খালগুলো শুকিয়ে গেছে, ইউফ্রেটিস নদীর তলা দেখা গেছে, অতীতে তেমনটি দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, বিরল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আফ্রিকায় আঘাত হেনেছে, আফ্রিকার কোনো কোনো দেশের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি চলে গেছে, এতে ফসল উৎপাদন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে, বেড়েছে রোগের প্রকোপ, অতীতে এমনটি ঘটেনি।

এর প্রভাবে সময়ে-অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, কখনো বৃষ্টি হচ্ছে না আবার অতিবৃষ্টিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ভারতের উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা, হিমাচল, দিল্লি। থেমে থেমে বৃষ্টি ও গরম আবহাওয়ায় আমাদের ক্ষতি হলেও লাভ হচ্ছে মশার। এতে ওদের প্রজনন ও বংশবিস্তারের সুবিধা হয়েছে। আর এতে দ্রুত বেড়ে গেছে মশাবাহী রোগের বিস্তার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, জলবাযু পরিবর্তন, নির্বণীকরণ ও নগরায়ণের কারণে বিশ্বে এখন ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ও ঝুঁকি খুব বেড়ে গেছে। সে গবেষণায় তারা পেয়েছে যে, উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের দেশগুলোতে সাম্প্রতিক দশকে মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০০ সালে যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ লাখের একটু বেশি, সেখানে ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ লাখ। এ বছরে দ্রুত সে পরিমাণ আশঙ্কা জনকভাবে বেড়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশের চিত্র নয়, সারা বিশ্বেরই একই অবস্থা।

ডেঙ্গু যে বেড়েছে, তা আমরা সম্প্রতি আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিত্যদিনের দেওয়া রিপোর্ট থেকেই দেখতে পাচ্ছি। চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে এসে দেশের লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে মারা গেছে ৫০০-এর বেশি মানুষ। এ দেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ দেখা যায়। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বছরে এত বেশি লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি ও মরেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানে না এর শেষ কোথায়! ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ারও রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৯, ২০২১ ও ২০২২ সালেও ডেঙ্গু রোগে মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়েছিল। কিন্তু চলতি আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগ বাড়ার মোক্ষম সময় এখনো পড়ে রয়েছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে ডেঙ্গু। মজার বিষয় হলো, প্রতিবছর বিশ্বে মানুষের হাতে মারা পড়ে ৪ লাখ ৩৭ হাজার লোক। আর মশার কামড়ে প্রাণ হারায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ! বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মরে মশার কামড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল প্রোগ্রাম অন কন্ট্রোল অব নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিজেস কো-অর্ডিনেটিং ডেঙ্গু অ্যান্ড আরবোভাইরাস ইনিশিয়েটিভ ইউনিটের প্রধান র‍্যামন ভেলায়ুধান বলেছেন, ‘বিশ্বের সব দেশেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে, আর এ কারণে বর্তমানে বিশ্বের ১২৯টি দেশ ডেঙ্গু রোগের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব দেশের অন্তত ১০০টি দেশে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রতিবছর এখন বিশ্বে ১০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন লোক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’ জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনে অধিক বৃষ্টিপাত, অধিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা এসব রোগবাহী মশার বংশবৃদ্ধি বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই যে এর জন্য একমাত্র কারণ তা নয়, আমাদের অসচেতনতা ও মশক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যর্থতাও কম দায়ী নয়। বছরে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশকনিধনের পেছনে ব্যয় করছে। কিন্তু তারা বলেছে, তারা ভুল কৌশলে এত দিন মশক নিধন করেছে, ওষুধ দিয়ে শুধু মশার বাচ্চাদের মারা হচ্ছে। মশক নিয়ন্ত্রণে প্রকৃতিরও একটা নিয়ম আছে, সে নিয়মের লঙ্ঘন ঘটেছে। একটি সহজ উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে বিষয়টি। মশারা যেখানে পানি জমে থাকে সেখানে ডিম পাড়ে। সেখানে গঙ্গা ফড়িং আর সুই ফড়িংরাও ডিম পাড়ে, ব্যাঙরাও। এসব পোকা ও ব্যাঙের বাচ্চারা ডিম ফুটে বের হলে ওরা মশার বাচ্চাদের বিরিয়ানির মতো খায়! কীটনাশক দেওয়ায় সে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে।

ঢাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বেশি, কিন্তু অন্য নগরের অবস্থাও প্রায় একই রকম। দুর্বল নিষ্কাশনব্যবস্থা ও নির্মাণাধীন ভবনগুলো ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। ডেঙ্গু রোগের টিকাও সুলভ নয়, একটি মাত্র টিকার অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২০টি দেশে, ২টি টিকা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিপুলসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতাও আমাদের নেই। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে তাই আমাদের জন্য তা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা ও নিজেদের করণীয় সম্পর্কে সচেতন না হলে কোনো সরকারের পক্ষেই শতভাগ সফলভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

শেষে ডেনমার্কের একটি রূপকথা মনে পড়ছে। ১৮৪০ সালে হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসেন ‘দ্য উইকড প্রিন্স’ নামে একটা রূপকথা লেখেন। রূপকথার সেই রাজপুত্র ছিল খুবই পাজি। একের পর এক রাজ্য জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সে সব তার দখলে নিত। সে চেয়েছিল সারা পৃথিবী জয় করতে। সে চাইত, সবাই যেন তাকে ভয় করে। তার প্রাসাদ, সম্পদ আর শক্তি দেখে সবাই তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাজপুত্র মনে করত। একদিন তার ইচ্ছে হলো সে শহরের সবচেয়ে সুন্দর গির্জাটায় ঈশ্বরের মূর্তিটা সরিয়ে নিজের মূর্তি সেখানে বসাতে। চাটুকারেরা সবাই তাতে সায় দিলেও গির্জার পাদরিরা তাতে বাদ সাধল। তারা বলল, আপনি শক্তিমান, কিন্তু ঈশ্বর আপনার চেয়েও শক্তিমান। এ কথা শুনে সে রেগে গেল, বলল, আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জিতে দেখাতে চাই আমি তার চেয়েও শক্তিমান। সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য এক আশ্চর্যজনক আকাশযান বানাল। তাতে চড়ে সে আকাশে চলল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। ঈশ্বর তা টের পেয়ে এক ছোট্ট মশাকে আদেশ করল শয়তান রাজপুত্রকে শায়েস্তা করতে। মশা তার কানের কাছে ভন ভন করে তাকে রাগিয়ে দিল। কিন্তু কেউই মশাটাকে মারতে বা ধরতে পারল না। অবশেষে রাজপুত্রকে মশারি দিয়ে ঢাকা হলো। কিন্তু মশারির কাপড় দিয়ে ঢাকার সময়ই মশাটা তার ভেতরে ঢুকে পড়ল। মশাটা রাজপুত্রের দেহে হুল ফুটিয়ে বিষ ঢুকিয়ে দিল। সে বিষের যন্ত্রণায় রাজপুত্রের দেহে প্রচণ্ড জ্বালা শুরু হলো, চোখটা রক্তে লাল হয়ে উঠল। অবশেষে সে পাগলের মতো নাচতে লাগল। সেনারা তার এসব কাণ্ড দেখে হেসে কুটিকুটি হলো আর বলতে লাগল, আহারে বীর রাজপুত্র! যে সামান্য ছোট্ট একটা মশাকে হারাতে পারে না, সে আবার জিতবে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে!

রূপকথার সেই রাজপুত্রের মতো আমরাও কি হেরে যাব শেষে এই এডিস মশার কাছে?

মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও লেখক; সিন্ডিকেট সদস্য, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত