Ajker Patrika

সততার বিরল উদাহরণ হয়ে থাকবেন

মোনায়েম সরকার
সততার বিরল উদাহরণ হয়ে থাকবেন

আজকাল কী যে হয়েছে, মোবাইল ফোন বেজে উঠলেই বুকের ভেতর কেমন একটা ধুকপুক ভাব হয়। কোনো খারাপ খবর নয় তো! বয়স হয়েছে। রাজনীতির অঙ্গনে জীবনের ৬০ বছরের বেশি সময় কাটিয়ে ভালো-খারাপ বহু খবর শুনে অভ্যস্ত হয়েছি। তবে জীবনের এই শেষবেলায় দুঃসংবাদ শুনে আর সহজভাবে নিতে পারি না।

বুধবার, ১৬ অক্টোবর দুপুর গড়িয়ে যেতেই ফোনটা বেজে উঠল। হ্যালো বলতেই ও প্রান্ত থেকে এক পরিচিত জনের কণ্ঠ, ‘মতিয়া আপা নেই।’ বুকটা কেঁপে উঠল। বলে কী!

মতিয়া চৌধুরী। বাংলাদেশের রাজনীতির এক অতিপরিচিত নাম। গত শতকের ষাট দশকের শুরু থেকেই আমরা পরিচিত, বন্ধু এবং সহযোদ্ধা। একসঙ্গে বহু পথ হেঁটেছি। মিছিল-মিটিং করেছি। আলাপ-আলোচনা করেছি। তর্ক-বিতর্ক করেছি। একমত হয়েছি, ভিন্নমত পোষণ করেছি। মনোমালিন্যও কখনো কখনো হয়েছে। কিন্তু দূরত্ব তৈরি হয়নি আমাদের মধ্যে। ভাইবোনের মতোই থেকেছি।

পরিচয়ের সূত্র অবশ্যই ছাত্র ইউনিয়ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে থেকেই আমি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। মতিয়া চৌধুরীও তাই। তিনি বয়সে আমার চেয়ে সামান্য বড়। ইডেন কলেজে পড়ার সময়ই মতিয়া চৌধুরী ছাত্র ইউনিয়নের পতাকাবাহী হন। ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি বা ভিপিও নির্বাচিত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি প্রথমে রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের ভিপি এবং পরে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। বিশেষ করে বক্তৃতায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। আমার সঙ্গে পরিচয়ের প্রথম দিকে অবশ্য তাঁকে জ্বালাময়ী বক্তা বলে মনে হয়নি।

একবার শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি তো খুব সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়ে আমাকে হতাশই করেছিলেন। কিন্তু ওই একবারই। তারপর অতিদ্রুত তিনি বক্তৃতা রপ্ত করেন, ভালো বক্তা হয়ে ওঠেন। শব্দ চয়ন, প্রচলিত ছোট ছোট গল্প, বাংলা ভাষায় চালু বিশেষ কিছু উপমা ইত্যাদি প্রয়োগ করে তিনি এমন বক্তৃতা করতেন, যা শ্রোতা-দর্শকেরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত। অল্প সময়ের মধ্যেই মতিয়া চৌধুরী হয়ে ওঠেন বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’।

তখন চলছিল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন। সেই সময় সারা দেশে চারণের মতো ছুটে বেড়িয়েছেন মতিয়া চৌধুরী। মুখ দিয়ে যেন বেরোত আগুনের গোলা। ছাত্র-জনতাকে মাতিয়ে তুলত তাঁর বক্তৃতা।

ছাত্রজীবন শেষে আমরা একই সঙ্গে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপের রাজনীতিতে যোগ দিই। সেটা ছিল ১৯৬৭ সাল। অবশ্য তার আগেই আমরা গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করি। বলা যায়, কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশেই আমরা ন্যাপে যোগ দিয়ে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যকলাপ করার সুযোগ নিয়েছি। তত দিনে অবশ্য রাশিয়া-চীন মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। চীনপন্থী ন্যাপের নেতৃত্বে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর মস্কোপন্থী ন্যাপের নেতৃত্বে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। আমরা ছিলাম মোজাফফর ন্যাপে।

 ১৯৬৫ সালে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নও দ্বিধাবিভক্ত হয়। এক অংশের সভাপতি মতিয়া চৌধুরী, আরেক অংশে রাশেদ খান মেনন। মতিয়া চৌধুরীর বক্তৃতার কারণে স্বভাবতই ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া গ্রুপের সাংগঠনিক অবস্থা ছিল ভালো। মতিয়া চৌধুরী ন্যাপে যোগ দেওয়ার পর মূলত তাঁর জনপ্রিয়তাকে ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল হিসেবে ন্যাপেরও বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। দলের সভাপতি মোজাফফর আহমদের চেয়ে মতিয়া চৌধুরীর পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বেশি ছিল। দলের জনসভায় সভাপতি আগে বক্তৃতা করতেন, শেষের বক্তা ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। কারণ, তাঁর বক্তৃতার পর অনেক শ্রোতা সভাস্থল ত্যাগ করত।

মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে কত স্মৃতি। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি। বামপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার তুলনা হয় না। শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই বাম-প্রগতিশীলদের রাজনীতি করতে হয়েছে। অনেকের জীবনের সিংহভাগ কেটেছে কারাগারে কিংবা আত্মগোপনে।

আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তাঁকে আন্দোলন থেকে কোনোভাবে নিবৃত্ত করতে না পেরে সরকার ভিন্ন পন্থা বেছে নেয়। তাঁর বাবা তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে চাপ দিতে শুরু করে সরকার। একপর্যায়ে মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। অসম সাহসী মতিয়া চৌধুরী আপসের পথে হাঁটার বিরোধী ছিলেন। তিনি আইয়ুবশাহীর চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেন বাবাকে অভিভাবকের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করার।

তিনি তাঁর বাবাকে জানান, বিয়ে করে তিনি অভিভাবকত্ব পরিবর্তন করবেন কিন্তু রাজনীতি থেকে দূরে সরবেন না। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মতিয়া চৌধুরী। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন পরই তিনি গ্রেপ্তার হন; শুরু হয় ছন্নছাড়া জীবন।

এখানে এটা বলা প্রয়োজন যে রাজনীতি এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে মতিয়া চৌধুরীকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে মোট ১৫ বার জেলে যেতে হয়েছে কিংবা পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। রাজনৈতিক জীবনে মতিয়া চৌধুরীকে ১৫ বার গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। এর মধ্যে আইয়ুব শাসনামলে চারবার কারাগারে যেতে হয়েছে তাঁকে। আইয়ুবের শেষ দুই বছর টানা কারাগারেই থাকতে হয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতনের পর অন্য সব রাজবন্দীর সঙ্গে তিনিও জেল থেকে মুক্তি পান। কারাগারের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর লেখা গ্রন্থ ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ পাঠকপ্রিয় হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের শাসন আমল ছাড়া সব সরকারের আমলেই মতিয়া চৌধুরীকে জেলে যেতে হয়েছে। জিয়াউর রহমানের আমলে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়েছে। এরশাদ সরকারের আমলে যেতে হয়েছে ৯ বার। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার আমলেও মতিয়া চৌধুরীকে কারাগারে যেতে হয়।

১৯৭১ সালে মতিয়া চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। ১৯৭৫ সালে বিশেষ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করলে মতিয়া চৌধুরীকে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের সামনে দেখা দেয় ঘোর দুঃসময়।

ন্যাপ সভাপতি মোজাফফর আহমদ এক দোদুল্যমান অবস্থান গ্রহণ করেন, এমনকি জিয়াউর রহমানের প্রতি নমনীয় নীতি নিয়ে চলতে শুরু করেন। তখন মতিয়া চৌধুরীসহ আমরা কয়েকজন ন্যাপ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিই। ১৯৭৯ সালের ১০ ডিসেম্বর মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে আমরা কয়েকজন আওয়ামী লীগে যোগ দিই। ক্ষমতার রাজনীতির মোহে নয়, আমরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলাম দেশে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতিকে শক্তি জোগানোর জন্য। তখন মতিয়া চৌধুরী বলতেন, ছোট দলের বড় নেতা হওয়ার চেয়ে বড় দলের ছোট নেতা হয়ে যদি দেশ ও জনগণের জন্য ভালো কিছু করা যায়, তাহলে মন্দ কী!

আওয়ামী লীগে গিয়েও মতিয়া চৌধুরী ধীরে ধীরে বড় নেতাই হয়েছিলেন। একপর্যায়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন। তিনি শেরপুর থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। দল এবং সরকার পরিচালনায় সমান দক্ষতার পরিচয় দেন মতিয়া চৌধুরী।  

ক্ষমতার রাজনীতির ভেতরে থেকেও একজন ব্যক্তি চাইলে যে সৎ থাকা যায়, তার উজ্জ্বল উদাহরণ মতিয়া চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির কোনো অভিযোগ তাঁর শত্রুরাও তুলতে পারবে না। মতিয়া চৌধুরী চলনে-বলনে-পোশাকে ছিলেন সাদাসিধা। ক্ষমতার দাপট দেখাননি কখনো।

আমি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে আছি তা-ও দুই দশক হয়ে গেল। মতিয়া আপা ছিলেন আমৃত্যু সক্রিয় রাজনীতির মানুষ। কিন্তু আমার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। আমরা সব সময় ছিলাম পরস্পরের হিতাকাঙ্ক্ষী। তিনি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের একজন ট্রাস্টি ছিলেন। আমার বসবাসের ঠিকানা ২৩ নম্বর চামেলীবাগের বাড়িতে তিনি কতবার যে এসেছেন, তার হিসাব করা কঠিন। আমি সাধারণত কারও বাসাবাড়িতে তেমন যাই না, কিন্তু মতিয়া আপার বাসায় আমিও কম যাইনি। আগেই বলেছি, আমরা একসঙ্গে পথ চলেছি, আমাদের মতান্তর হয়েছে, কিন্তু মনান্তর হয়নি কখনো।

১৯৪২ সালে পিরোজপুরে জন্ম হয়েছিল মতিয়া চৌধুরীর। ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ৮২ বছর বয়সে তিনি চিরবিদায় নিলেন। তাঁর এই চলে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বড় ক্ষতি। মতিয়া আপার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত