Ajker Patrika

দখলে মৃত বামনডাঙ্গা নদী

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ১৩ জুন ২০২২, ১৩: ৪৭
Thumbnail image

দখল আর দূষণে নীলফামারী শহরের একসময়ের প্রমত্তা বামনডাঙ্গা নদী। এখন ক্ষীণকায় নালায় রূপ নিয়েছে। সরকারি বরাদ্দ থাকার পরও অবৈধ দখলদারদের চাপে বন্ধ হয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খননকাজ। স্থানীয়রা দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদী আগের রূপে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার আজকের পত্রিকাকে জানান, বামনডাঙ্গা নদী নিয়ে জেলা পানি সম্পদ কমিটির সভায় জোরালো আলোচনা হয়েছে। এই নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করা হবে। কার্যক্রমগুলো চলমান আছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় প্রায় ৭ কিলোমিটার খননকাজ শুরু করলেও নানা বাধার সম্মুখীন হয়ে তা শেষ করতে পারেনি পাউবো।

জানা গেছে, প্রায় ১০০ বছর আগে বামনডাঙ্গা নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল শাখামাছা বন্দর। আর এই বন্দরই আজকের নীলফামারী শহর। ওই সময়ে এই নদী দিয়ে পণ্যবাহী নৌকা আসত শাখামাছা বন্দরে। কথিত আছে, নদীতে নোঙর করেছিল বেহুলা আর দেবী চৌধুরানীর নৌবহর। যুগে যুগে প্রভাবশালীদের দখলে হারিয়ে গেছে একসময়ের খরস্রোতা বামনডাঙ্গা নদী। এই নদীকে খাল বললেও যেন বেমানান। জেলা শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র এই নদীটি আজ পরিণত হয়েছে আবর্জনার স্তূপে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর বিভিন্ন স্থান দখলে নিয়ে মাটি ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করায় থমকে গেছে পানির প্রবাহ। উৎপত্তিস্থল থেকে শেষ মাথার বিভিন্ন অংশ অনেকটা দখলদারের কবলে। অন্যদিকে নদীটির আশপাশের বাসিন্দারা তাদের বাড়ির ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলে প্রায় ভরাট করে ফেলেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই একসময় এখানে একটি নদী ছিল।

পৌর শহরের মানিকের মোড় এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময়ে নদীটি খনন না হওয়ায় পলিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীর জমি গ্রাস করে বাসাবাড়ি, অটোরাইস মিল, কনস্ট্রাকশন ফার্মসহ নানান স্থাপনা তৈরি করে প্রভাবশালীরা।

স্কুলশিক্ষক মনিরুল ইসলাম, বামনডাঙ্গা নদীর তীরে শৈশব কেটেছে তাঁর। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘৩০ বছর আগেও এই নদী প্রায় ১০০ ফুট চওড়া ছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক দখলের কারণে এখন বামনডাঙ্গা নদীকে নালা বললেও ভুল হবে। বর্তমানে এই নদী খালে পরিণত হয়েছে।’

পৌর শহরের বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ জানান, নীলফামারী শহরকে বাঁচাতে হলে বামনডাঙ্গা নদী খননের উদ্যোগ নিতে হবে। দখল উচ্ছেদ করতে হবে বামনডাঙ্গা নদীকে তার আগের রূপে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কলা অনুষদে ডিন ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী বামনডাঙ্গা নদী দখল হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী নদীতে থাকা ব্যক্তিমালিকানা জমির রেকর্ড বাতিল করে এর প্রবাহ সচল রাখতে হবে। একই সঙ্গে এই নদীকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন করতে হবে। পাশাপাশি সীমানা নির্ধারণ করা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত