মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

আমরা জাতি-রাষ্ট্রের কথা শুনি এবং বলিও। পৃথিবীতে বেশ কিছু জাতি-রাষ্ট্র এরই মধ্যে সফলভাবে গঠিত হয়েছে, আবার অনেকগুলোর গতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা পরিষ্কার নয়। জাতি-রাষ্ট্র একটি আধুনিক রাজনৈতিক ধারণা। ১৯ শতকে জার্মানি, ইতালি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে বিরাট সাফল্য দেখিয়েছে। জার্মানি ছিল প্রায় ৩৬০টির মতো ছোট-মাঝারি সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত। অথচ জাতিতে তারা সবাই ছিল জার্মান ভাষাভাষী। ১৮ শতকের আলোকিত যুগের আন্দোলন, ফরাসি বিপ্লব এবং নেপোলিয়ান বোনাপার্টের ইউরোপ অভিযান গোটা ইউরোপকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। জার্মানির কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ ও উঠতি বুর্জোয়া শ্রেণির শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, শিক্ষিতজন জার্মান জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেন। একদিকে শিক্ষা, শিল্প, রাজনীতির চর্চা, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা সংগঠন রাজ্যে রাজ্যে ফেডারেশন, কনফেডারেশন গড়ে তোলার কাজটি সযত্নে করতে থাকলেন।
নেপোলিয়ানের সমরাভিযান শেষে জার্মানির একত্রীকরণের হাওয়া ধীরলয়ে বইতে শুরু করে। ৪০ ও ৫০-এর দশকে অনেক রাজ্যই কাছাকাছি চলে আসে। জার্মান জাতিও বড় হতে থাকল। ফলে ৬০-এর দশকে এসে জার্মানরা ইউরোপে নিজেদের আর দুর্বল হিসেবে নয় বরং শক্তিশালী হিসেবেই দেখতে পেল। ১৮৭০-এ জার্মানির একত্রীকরণ উত্তর-মধ্য ইউরোপে এক শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে নিশ্চিত করে। একইভাবে হারিয়ে যাওয়া রোমান সাম্রাজ্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছর খণ্ড খণ্ড নগর, অন্যের দখলে থাকা বা দুর্বল সামন্ত রাজ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। ভাষা ও সংস্কৃতিতে এরা এই সময়ে বিভাজিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু ফরাসি বিপ্লবোত্তর যুগে ইতালি খণ্ড খণ্ড রাজ্য একত্র হওয়ার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলে। একপর্যায়ে সশস্ত্র যুদ্ধও করতে শিখেছে ইতালির কৃষক, জনতা, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। ফলে ১৮৭০ সালে ইতালি ভূমধ্যসাগরীয় তীরে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইউরোপে তখন খণ্ড খণ্ড কিংবা বিভক্ত থাকা জাতিসমূহ হয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করেছে, নতুবা কয়েকটি ভাষাভিত্তিক জাতি সমানাধিকারের মর্যাদা নিয়ে গড়ে তোলে বহুজাতির একেকটি জাতি-রাষ্ট্র। এশিয়ায় সুদূরের জাপান ঐতিহাসিকভাবেই ভাষাভিত্তিক জাতি-রাষ্ট্রের ভিত্তি নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। তবে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য যে আধুনিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানোর প্রয়োজন, সেটি উপলব্ধি করেছিলেন সম্রাট মহামতী মেইজি ১৮৬৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর। জাপানকে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে শক্তিশালী করার জন্য তিনি নিয়েছিলেন শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ আর পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যে আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তুলল, সেগুলো টেকসই জাতি-রাষ্ট্রের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
ঔপনিবেশিক যুগের কবল থেকে মুক্ত হতে এশিয়া ও আফ্রিকায় ২০ শতকে অনেকগুলো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল এগুলো জাতি-রাষ্ট্রেরই পথ অবলম্বন করবে। কিন্তু অভিজ্ঞতা খুব বেশি সুখের হয়নি। ভারতবর্ষে আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তিলাভ করতে গিয়ে যে রাষ্ট্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলাম, সেখানে আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা অনুপস্থিত ছিল। নেতৃত্বের কারও কারও মাথায় ব্রিটিশ আদলে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ার কথা চিন্তা করা হলেও জনগণকে জাতি-রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল না। তাদের পেয়ে বসেছিল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সংকীর্ণ ও বিপর্যয়কর এক ভাবাদর্শ। পাকিস্তান কোনো ভূখণ্ডের নাম ছিল না, কোনো জাতিও ছিল না। কিন্তু আকস্মিকভাবে একটি রাষ্ট্রের নাম হয়ে গেল পাকিস্তান। এই রাষ্ট্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য শিকড়শূন্য। এর সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক এমনকি অর্থনৈতিক সম্পর্কও কোনো কালে ইতিহাসের ধারেকাছেও ছিল না। ফলে দুই অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর যে কিম্ভূতকিমাকার রাষ্ট্রে জোড়াতালি দেওয়া হলো, সেটি এক ইউটোপীয় রাষ্ট্রের চিন্তা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
নেতৃত্ব এমন একটি রাষ্ট্রকে নিয়ে ভয়াবহ বিয়োগান্ত ঘটনারই কেবল জন্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। পাকিস্তানের গদিতে যাঁরা আসীন হলেন, তাঁরা ভাবতেও চাইলেন না এমন ভিন্ন ভাষাভাষী সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার কোনো রাষ্ট্র কি যথার্থ নীতিকৌশল ছাড়া টিকে থাকতে পারবে? সেটি ভাববার মতো আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা তখনো ছিলেন না। সে কারণেই কৃত্রিম পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনীতি, সংস্কৃতি একেবারেই জোরজবরদস্তির মধ্যযুগীয় কায়দায় জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পূর্ব বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের এক ‘ভূস্বর্গীয়’ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, যা আসলেই সাম্প্রদায়িকতাভিত্তিক। বাংলা ভাষার ওপর তাই খড়্গ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রতিবাদকে প্রতিহত করতে শক্তির প্রয়োগ করা হয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের সঙ্গে মানুষের নৈকট্য সৃষ্টি না হয়ে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্র ধর্মের জিগির তুলে, সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর প্রতিবাদী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে যে রাষ্ট্রকে করাচি, পিন্ডি আর ইসলামাবাদ থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছিল, সেটি তাসের ঘরের মতোই কেবল ভেঙে যেতে থাকে।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল না কোনো নিজস্ব ইতিহাস সত্তা ও পরিচয়। তাই কৃত্রিম এই রাষ্ট্র এর জাতিসমূহকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দিতে শেখেনি। শেখার শিক্ষাটাও এই রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের মস্তিষ্কে ছিল না। পাকিস্তান পরিণত হতে পারেনি আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের কোনো রাষ্ট্রে। এটি ক্রমেই এক ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের পরিচয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের জাতিসমূহের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ক্রমেই সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই পূর্ব বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এই ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাকিস্তান রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা পাকিস্তানকে পূর্ব বাংলা থেকে বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে দেয়। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে একটি জাতি-রাষ্ট্রের গতিপথে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর সহযোগী নেতারা সেই জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পথেই গোটা জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সময়ে জাতি-রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হতে থাকে। কিন্তু একটি জাতি-রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করতে হলে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জনগণকে দীর্ঘ পথ চলার পরিক্রমা অতিক্রম করতেই হয়। ইউরোপ দেড়-দুই শ বছরে আধুনিক যে জাতি-রাষ্ট্র গঠন করেছে, তাতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য নীতিকৌশল, পরিকল্পনা হিসেবেই সব নাগরিকের সমানাধিকারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ ও জাতিভেদ দূর করার এক নিরন্তর লড়াইয়ে রাষ্ট্র অবিচল থেকেছে। তার পরও যখনই বিচ্যুতি ঘটেছে, তখনই বিপর্যয় অনিবার্য হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর জ্বলন্ত উদাহরণ। সে কারণে এখনো কোনো জাতি-রাষ্ট্রই উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, নাৎসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথাও পা ফেলার জায়গা পায় না, টুঁটি চেপে ধরা হয়।
অন্যদিকে আমাদের এখানে শুরুতেই বিপর্যয় ঘটে গেছে। রাষ্ট্রের জাতিতাত্ত্বিক চরিত্র নির্মাণে রাজনীতির বড় অংশই বিভ্রান্ত ও দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, পাকিস্তান যে রাষ্ট্রমনন তৈরি করেছিল, তার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যে আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চা এই নতুন রাষ্ট্রে হওয়ার জরুরি ছিল, সেটি ঘটানোর সুযোগ হয়নি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের মন আবার জাগিয়ে তোলা হয়। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতিসহ জীবনের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ১৯৭১-এর জাতি-রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। আমরা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হই। আমাদের রাষ্ট্র দীর্ঘ সময় চলেছিল সামরিক স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে। এই সময়ে বেড়ে ওঠা রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতায় পুষ্ট হয়েছে, জনগণকে তুষ্ট রাখার কৌশল অবলম্বন করেছে। কোনো আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রচিন্তার শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে নাগরিকদের গড়ে তোলার কোনো নীতিকৌশল ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরুর মাধ্যমে যাত্রা হয়েছিল, সেটির অন্তর্নিহিত শক্তিকে বাদ দিয়ে আমরা যে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির লালন, তোষণ ও পোষণ স্বাধীন বাংলাদেশে করে এসেছি, সেটি মোটেও জাতি-রাষ্ট্রের চরিত্রের সঙ্গে যায়নি।
এখন দেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বিজ্ঞান বড়ই দূরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা একই সঙ্গে দুর্নীতি, অসমতা, দুর্বৃত্তায়ন যেন সবকিছুকেই গ্রাস করে নিতে চাইছে। এরপরও আমরা ইতিহাসের ফেলে আসা অভিজ্ঞতাকে কেন যেন গুরুত্ব দিচ্ছি না। পাকিস্তান আজ রাষ্ট্র হিসেবে কতখানি ভঙ্গুর, কতখানি ব্যর্থ, সেই অভিজ্ঞতাও যেন আমরা চোখ তুলে দেখতে পারছি না। আমাদের দেশেও সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর বিপদ কতটা আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে, তা কি বুঝতে পারছে? ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়ে আমাদের নির্মোহভাবে জাতি-রাষ্ট্রের পথ, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের ভয়াবহ পরিণতি এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পাদদেশে দাঁড়িয়ে করণীয় ও শিখনীয় বিষয়গুলো রাষ্ট্র ও রাজনীতির ইতিহাসের পাঠ থেকে জেনে নিতেই হবে, নতুবা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বাস্তবে গড়ে তোলা আমাদের কেবলই অধরা থেকে যাবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

আমরা জাতি-রাষ্ট্রের কথা শুনি এবং বলিও। পৃথিবীতে বেশ কিছু জাতি-রাষ্ট্র এরই মধ্যে সফলভাবে গঠিত হয়েছে, আবার অনেকগুলোর গতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা পরিষ্কার নয়। জাতি-রাষ্ট্র একটি আধুনিক রাজনৈতিক ধারণা। ১৯ শতকে জার্মানি, ইতালি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে বিরাট সাফল্য দেখিয়েছে। জার্মানি ছিল প্রায় ৩৬০টির মতো ছোট-মাঝারি সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত। অথচ জাতিতে তারা সবাই ছিল জার্মান ভাষাভাষী। ১৮ শতকের আলোকিত যুগের আন্দোলন, ফরাসি বিপ্লব এবং নেপোলিয়ান বোনাপার্টের ইউরোপ অভিযান গোটা ইউরোপকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। জার্মানির কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ ও উঠতি বুর্জোয়া শ্রেণির শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, শিক্ষিতজন জার্মান জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেন। একদিকে শিক্ষা, শিল্প, রাজনীতির চর্চা, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা সংগঠন রাজ্যে রাজ্যে ফেডারেশন, কনফেডারেশন গড়ে তোলার কাজটি সযত্নে করতে থাকলেন।
নেপোলিয়ানের সমরাভিযান শেষে জার্মানির একত্রীকরণের হাওয়া ধীরলয়ে বইতে শুরু করে। ৪০ ও ৫০-এর দশকে অনেক রাজ্যই কাছাকাছি চলে আসে। জার্মান জাতিও বড় হতে থাকল। ফলে ৬০-এর দশকে এসে জার্মানরা ইউরোপে নিজেদের আর দুর্বল হিসেবে নয় বরং শক্তিশালী হিসেবেই দেখতে পেল। ১৮৭০-এ জার্মানির একত্রীকরণ উত্তর-মধ্য ইউরোপে এক শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে নিশ্চিত করে। একইভাবে হারিয়ে যাওয়া রোমান সাম্রাজ্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছর খণ্ড খণ্ড নগর, অন্যের দখলে থাকা বা দুর্বল সামন্ত রাজ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। ভাষা ও সংস্কৃতিতে এরা এই সময়ে বিভাজিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু ফরাসি বিপ্লবোত্তর যুগে ইতালি খণ্ড খণ্ড রাজ্য একত্র হওয়ার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলে। একপর্যায়ে সশস্ত্র যুদ্ধও করতে শিখেছে ইতালির কৃষক, জনতা, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। ফলে ১৮৭০ সালে ইতালি ভূমধ্যসাগরীয় তীরে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইউরোপে তখন খণ্ড খণ্ড কিংবা বিভক্ত থাকা জাতিসমূহ হয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করেছে, নতুবা কয়েকটি ভাষাভিত্তিক জাতি সমানাধিকারের মর্যাদা নিয়ে গড়ে তোলে বহুজাতির একেকটি জাতি-রাষ্ট্র। এশিয়ায় সুদূরের জাপান ঐতিহাসিকভাবেই ভাষাভিত্তিক জাতি-রাষ্ট্রের ভিত্তি নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। তবে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য যে আধুনিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানোর প্রয়োজন, সেটি উপলব্ধি করেছিলেন সম্রাট মহামতী মেইজি ১৮৬৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর। জাপানকে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে শক্তিশালী করার জন্য তিনি নিয়েছিলেন শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ আর পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যে আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তুলল, সেগুলো টেকসই জাতি-রাষ্ট্রের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
ঔপনিবেশিক যুগের কবল থেকে মুক্ত হতে এশিয়া ও আফ্রিকায় ২০ শতকে অনেকগুলো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল এগুলো জাতি-রাষ্ট্রেরই পথ অবলম্বন করবে। কিন্তু অভিজ্ঞতা খুব বেশি সুখের হয়নি। ভারতবর্ষে আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তিলাভ করতে গিয়ে যে রাষ্ট্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলাম, সেখানে আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা অনুপস্থিত ছিল। নেতৃত্বের কারও কারও মাথায় ব্রিটিশ আদলে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ার কথা চিন্তা করা হলেও জনগণকে জাতি-রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল না। তাদের পেয়ে বসেছিল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সংকীর্ণ ও বিপর্যয়কর এক ভাবাদর্শ। পাকিস্তান কোনো ভূখণ্ডের নাম ছিল না, কোনো জাতিও ছিল না। কিন্তু আকস্মিকভাবে একটি রাষ্ট্রের নাম হয়ে গেল পাকিস্তান। এই রাষ্ট্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য শিকড়শূন্য। এর সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক এমনকি অর্থনৈতিক সম্পর্কও কোনো কালে ইতিহাসের ধারেকাছেও ছিল না। ফলে দুই অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর যে কিম্ভূতকিমাকার রাষ্ট্রে জোড়াতালি দেওয়া হলো, সেটি এক ইউটোপীয় রাষ্ট্রের চিন্তা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
নেতৃত্ব এমন একটি রাষ্ট্রকে নিয়ে ভয়াবহ বিয়োগান্ত ঘটনারই কেবল জন্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। পাকিস্তানের গদিতে যাঁরা আসীন হলেন, তাঁরা ভাবতেও চাইলেন না এমন ভিন্ন ভাষাভাষী সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার কোনো রাষ্ট্র কি যথার্থ নীতিকৌশল ছাড়া টিকে থাকতে পারবে? সেটি ভাববার মতো আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা তখনো ছিলেন না। সে কারণেই কৃত্রিম পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনীতি, সংস্কৃতি একেবারেই জোরজবরদস্তির মধ্যযুগীয় কায়দায় জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পূর্ব বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের এক ‘ভূস্বর্গীয়’ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, যা আসলেই সাম্প্রদায়িকতাভিত্তিক। বাংলা ভাষার ওপর তাই খড়্গ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রতিবাদকে প্রতিহত করতে শক্তির প্রয়োগ করা হয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের সঙ্গে মানুষের নৈকট্য সৃষ্টি না হয়ে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্র ধর্মের জিগির তুলে, সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর প্রতিবাদী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে যে রাষ্ট্রকে করাচি, পিন্ডি আর ইসলামাবাদ থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছিল, সেটি তাসের ঘরের মতোই কেবল ভেঙে যেতে থাকে।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল না কোনো নিজস্ব ইতিহাস সত্তা ও পরিচয়। তাই কৃত্রিম এই রাষ্ট্র এর জাতিসমূহকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দিতে শেখেনি। শেখার শিক্ষাটাও এই রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের মস্তিষ্কে ছিল না। পাকিস্তান পরিণত হতে পারেনি আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের কোনো রাষ্ট্রে। এটি ক্রমেই এক ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের পরিচয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের জাতিসমূহের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ক্রমেই সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই পূর্ব বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এই ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাকিস্তান রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা পাকিস্তানকে পূর্ব বাংলা থেকে বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে দেয়। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে একটি জাতি-রাষ্ট্রের গতিপথে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর সহযোগী নেতারা সেই জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পথেই গোটা জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সময়ে জাতি-রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হতে থাকে। কিন্তু একটি জাতি-রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করতে হলে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জনগণকে দীর্ঘ পথ চলার পরিক্রমা অতিক্রম করতেই হয়। ইউরোপ দেড়-দুই শ বছরে আধুনিক যে জাতি-রাষ্ট্র গঠন করেছে, তাতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য নীতিকৌশল, পরিকল্পনা হিসেবেই সব নাগরিকের সমানাধিকারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ ও জাতিভেদ দূর করার এক নিরন্তর লড়াইয়ে রাষ্ট্র অবিচল থেকেছে। তার পরও যখনই বিচ্যুতি ঘটেছে, তখনই বিপর্যয় অনিবার্য হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর জ্বলন্ত উদাহরণ। সে কারণে এখনো কোনো জাতি-রাষ্ট্রই উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, নাৎসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথাও পা ফেলার জায়গা পায় না, টুঁটি চেপে ধরা হয়।
অন্যদিকে আমাদের এখানে শুরুতেই বিপর্যয় ঘটে গেছে। রাষ্ট্রের জাতিতাত্ত্বিক চরিত্র নির্মাণে রাজনীতির বড় অংশই বিভ্রান্ত ও দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, পাকিস্তান যে রাষ্ট্রমনন তৈরি করেছিল, তার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যে আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চা এই নতুন রাষ্ট্রে হওয়ার জরুরি ছিল, সেটি ঘটানোর সুযোগ হয়নি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের মন আবার জাগিয়ে তোলা হয়। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতিসহ জীবনের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ১৯৭১-এর জাতি-রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। আমরা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হই। আমাদের রাষ্ট্র দীর্ঘ সময় চলেছিল সামরিক স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে। এই সময়ে বেড়ে ওঠা রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতায় পুষ্ট হয়েছে, জনগণকে তুষ্ট রাখার কৌশল অবলম্বন করেছে। কোনো আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রচিন্তার শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে নাগরিকদের গড়ে তোলার কোনো নীতিকৌশল ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরুর মাধ্যমে যাত্রা হয়েছিল, সেটির অন্তর্নিহিত শক্তিকে বাদ দিয়ে আমরা যে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির লালন, তোষণ ও পোষণ স্বাধীন বাংলাদেশে করে এসেছি, সেটি মোটেও জাতি-রাষ্ট্রের চরিত্রের সঙ্গে যায়নি।
এখন দেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বিজ্ঞান বড়ই দূরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা একই সঙ্গে দুর্নীতি, অসমতা, দুর্বৃত্তায়ন যেন সবকিছুকেই গ্রাস করে নিতে চাইছে। এরপরও আমরা ইতিহাসের ফেলে আসা অভিজ্ঞতাকে কেন যেন গুরুত্ব দিচ্ছি না। পাকিস্তান আজ রাষ্ট্র হিসেবে কতখানি ভঙ্গুর, কতখানি ব্যর্থ, সেই অভিজ্ঞতাও যেন আমরা চোখ তুলে দেখতে পারছি না। আমাদের দেশেও সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর বিপদ কতটা আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে, তা কি বুঝতে পারছে? ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়ে আমাদের নির্মোহভাবে জাতি-রাষ্ট্রের পথ, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের ভয়াবহ পরিণতি এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পাদদেশে দাঁড়িয়ে করণীয় ও শিখনীয় বিষয়গুলো রাষ্ট্র ও রাজনীতির ইতিহাসের পাঠ থেকে জেনে নিতেই হবে, নতুবা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বাস্তবে গড়ে তোলা আমাদের কেবলই অধরা থেকে যাবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

আমরা জাতি-রাষ্ট্রের কথা শুনি এবং বলিও। পৃথিবীতে বেশ কিছু জাতি-রাষ্ট্র এরই মধ্যে সফলভাবে গঠিত হয়েছে, আবার অনেকগুলোর গতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা পরিষ্কার নয়। জাতি-রাষ্ট্র একটি আধুনিক রাজনৈতিক ধারণা। ১৯ শতকে জার্মানি, ইতালি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে বিরাট সাফল্য দেখিয়েছে। জার্মানি ছিল প্রায় ৩৬০টির মতো ছোট-মাঝারি সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত। অথচ জাতিতে তারা সবাই ছিল জার্মান ভাষাভাষী। ১৮ শতকের আলোকিত যুগের আন্দোলন, ফরাসি বিপ্লব এবং নেপোলিয়ান বোনাপার্টের ইউরোপ অভিযান গোটা ইউরোপকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। জার্মানির কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ ও উঠতি বুর্জোয়া শ্রেণির শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, শিক্ষিতজন জার্মান জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেন। একদিকে শিক্ষা, শিল্প, রাজনীতির চর্চা, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা সংগঠন রাজ্যে রাজ্যে ফেডারেশন, কনফেডারেশন গড়ে তোলার কাজটি সযত্নে করতে থাকলেন।
নেপোলিয়ানের সমরাভিযান শেষে জার্মানির একত্রীকরণের হাওয়া ধীরলয়ে বইতে শুরু করে। ৪০ ও ৫০-এর দশকে অনেক রাজ্যই কাছাকাছি চলে আসে। জার্মান জাতিও বড় হতে থাকল। ফলে ৬০-এর দশকে এসে জার্মানরা ইউরোপে নিজেদের আর দুর্বল হিসেবে নয় বরং শক্তিশালী হিসেবেই দেখতে পেল। ১৮৭০-এ জার্মানির একত্রীকরণ উত্তর-মধ্য ইউরোপে এক শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে নিশ্চিত করে। একইভাবে হারিয়ে যাওয়া রোমান সাম্রাজ্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছর খণ্ড খণ্ড নগর, অন্যের দখলে থাকা বা দুর্বল সামন্ত রাজ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। ভাষা ও সংস্কৃতিতে এরা এই সময়ে বিভাজিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু ফরাসি বিপ্লবোত্তর যুগে ইতালি খণ্ড খণ্ড রাজ্য একত্র হওয়ার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলে। একপর্যায়ে সশস্ত্র যুদ্ধও করতে শিখেছে ইতালির কৃষক, জনতা, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। ফলে ১৮৭০ সালে ইতালি ভূমধ্যসাগরীয় তীরে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইউরোপে তখন খণ্ড খণ্ড কিংবা বিভক্ত থাকা জাতিসমূহ হয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করেছে, নতুবা কয়েকটি ভাষাভিত্তিক জাতি সমানাধিকারের মর্যাদা নিয়ে গড়ে তোলে বহুজাতির একেকটি জাতি-রাষ্ট্র। এশিয়ায় সুদূরের জাপান ঐতিহাসিকভাবেই ভাষাভিত্তিক জাতি-রাষ্ট্রের ভিত্তি নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। তবে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য যে আধুনিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানোর প্রয়োজন, সেটি উপলব্ধি করেছিলেন সম্রাট মহামতী মেইজি ১৮৬৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর। জাপানকে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে শক্তিশালী করার জন্য তিনি নিয়েছিলেন শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ আর পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যে আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তুলল, সেগুলো টেকসই জাতি-রাষ্ট্রের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
ঔপনিবেশিক যুগের কবল থেকে মুক্ত হতে এশিয়া ও আফ্রিকায় ২০ শতকে অনেকগুলো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল এগুলো জাতি-রাষ্ট্রেরই পথ অবলম্বন করবে। কিন্তু অভিজ্ঞতা খুব বেশি সুখের হয়নি। ভারতবর্ষে আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তিলাভ করতে গিয়ে যে রাষ্ট্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলাম, সেখানে আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা অনুপস্থিত ছিল। নেতৃত্বের কারও কারও মাথায় ব্রিটিশ আদলে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ার কথা চিন্তা করা হলেও জনগণকে জাতি-রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল না। তাদের পেয়ে বসেছিল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সংকীর্ণ ও বিপর্যয়কর এক ভাবাদর্শ। পাকিস্তান কোনো ভূখণ্ডের নাম ছিল না, কোনো জাতিও ছিল না। কিন্তু আকস্মিকভাবে একটি রাষ্ট্রের নাম হয়ে গেল পাকিস্তান। এই রাষ্ট্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য শিকড়শূন্য। এর সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক এমনকি অর্থনৈতিক সম্পর্কও কোনো কালে ইতিহাসের ধারেকাছেও ছিল না। ফলে দুই অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর যে কিম্ভূতকিমাকার রাষ্ট্রে জোড়াতালি দেওয়া হলো, সেটি এক ইউটোপীয় রাষ্ট্রের চিন্তা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
নেতৃত্ব এমন একটি রাষ্ট্রকে নিয়ে ভয়াবহ বিয়োগান্ত ঘটনারই কেবল জন্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। পাকিস্তানের গদিতে যাঁরা আসীন হলেন, তাঁরা ভাবতেও চাইলেন না এমন ভিন্ন ভাষাভাষী সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার কোনো রাষ্ট্র কি যথার্থ নীতিকৌশল ছাড়া টিকে থাকতে পারবে? সেটি ভাববার মতো আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা তখনো ছিলেন না। সে কারণেই কৃত্রিম পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনীতি, সংস্কৃতি একেবারেই জোরজবরদস্তির মধ্যযুগীয় কায়দায় জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পূর্ব বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের এক ‘ভূস্বর্গীয়’ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, যা আসলেই সাম্প্রদায়িকতাভিত্তিক। বাংলা ভাষার ওপর তাই খড়্গ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রতিবাদকে প্রতিহত করতে শক্তির প্রয়োগ করা হয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের সঙ্গে মানুষের নৈকট্য সৃষ্টি না হয়ে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্র ধর্মের জিগির তুলে, সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর প্রতিবাদী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে যে রাষ্ট্রকে করাচি, পিন্ডি আর ইসলামাবাদ থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছিল, সেটি তাসের ঘরের মতোই কেবল ভেঙে যেতে থাকে।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল না কোনো নিজস্ব ইতিহাস সত্তা ও পরিচয়। তাই কৃত্রিম এই রাষ্ট্র এর জাতিসমূহকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দিতে শেখেনি। শেখার শিক্ষাটাও এই রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের মস্তিষ্কে ছিল না। পাকিস্তান পরিণত হতে পারেনি আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের কোনো রাষ্ট্রে। এটি ক্রমেই এক ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের পরিচয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের জাতিসমূহের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ক্রমেই সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই পূর্ব বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এই ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাকিস্তান রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা পাকিস্তানকে পূর্ব বাংলা থেকে বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে দেয়। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে একটি জাতি-রাষ্ট্রের গতিপথে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর সহযোগী নেতারা সেই জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পথেই গোটা জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সময়ে জাতি-রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হতে থাকে। কিন্তু একটি জাতি-রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করতে হলে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জনগণকে দীর্ঘ পথ চলার পরিক্রমা অতিক্রম করতেই হয়। ইউরোপ দেড়-দুই শ বছরে আধুনিক যে জাতি-রাষ্ট্র গঠন করেছে, তাতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য নীতিকৌশল, পরিকল্পনা হিসেবেই সব নাগরিকের সমানাধিকারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ ও জাতিভেদ দূর করার এক নিরন্তর লড়াইয়ে রাষ্ট্র অবিচল থেকেছে। তার পরও যখনই বিচ্যুতি ঘটেছে, তখনই বিপর্যয় অনিবার্য হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর জ্বলন্ত উদাহরণ। সে কারণে এখনো কোনো জাতি-রাষ্ট্রই উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, নাৎসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথাও পা ফেলার জায়গা পায় না, টুঁটি চেপে ধরা হয়।
অন্যদিকে আমাদের এখানে শুরুতেই বিপর্যয় ঘটে গেছে। রাষ্ট্রের জাতিতাত্ত্বিক চরিত্র নির্মাণে রাজনীতির বড় অংশই বিভ্রান্ত ও দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, পাকিস্তান যে রাষ্ট্রমনন তৈরি করেছিল, তার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যে আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চা এই নতুন রাষ্ট্রে হওয়ার জরুরি ছিল, সেটি ঘটানোর সুযোগ হয়নি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের মন আবার জাগিয়ে তোলা হয়। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতিসহ জীবনের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ১৯৭১-এর জাতি-রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। আমরা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হই। আমাদের রাষ্ট্র দীর্ঘ সময় চলেছিল সামরিক স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে। এই সময়ে বেড়ে ওঠা রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতায় পুষ্ট হয়েছে, জনগণকে তুষ্ট রাখার কৌশল অবলম্বন করেছে। কোনো আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রচিন্তার শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে নাগরিকদের গড়ে তোলার কোনো নীতিকৌশল ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরুর মাধ্যমে যাত্রা হয়েছিল, সেটির অন্তর্নিহিত শক্তিকে বাদ দিয়ে আমরা যে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির লালন, তোষণ ও পোষণ স্বাধীন বাংলাদেশে করে এসেছি, সেটি মোটেও জাতি-রাষ্ট্রের চরিত্রের সঙ্গে যায়নি।
এখন দেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বিজ্ঞান বড়ই দূরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা একই সঙ্গে দুর্নীতি, অসমতা, দুর্বৃত্তায়ন যেন সবকিছুকেই গ্রাস করে নিতে চাইছে। এরপরও আমরা ইতিহাসের ফেলে আসা অভিজ্ঞতাকে কেন যেন গুরুত্ব দিচ্ছি না। পাকিস্তান আজ রাষ্ট্র হিসেবে কতখানি ভঙ্গুর, কতখানি ব্যর্থ, সেই অভিজ্ঞতাও যেন আমরা চোখ তুলে দেখতে পারছি না। আমাদের দেশেও সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর বিপদ কতটা আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে, তা কি বুঝতে পারছে? ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়ে আমাদের নির্মোহভাবে জাতি-রাষ্ট্রের পথ, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের ভয়াবহ পরিণতি এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পাদদেশে দাঁড়িয়ে করণীয় ও শিখনীয় বিষয়গুলো রাষ্ট্র ও রাজনীতির ইতিহাসের পাঠ থেকে জেনে নিতেই হবে, নতুবা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বাস্তবে গড়ে তোলা আমাদের কেবলই অধরা থেকে যাবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

আমরা জাতি-রাষ্ট্রের কথা শুনি এবং বলিও। পৃথিবীতে বেশ কিছু জাতি-রাষ্ট্র এরই মধ্যে সফলভাবে গঠিত হয়েছে, আবার অনেকগুলোর গতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা পরিষ্কার নয়। জাতি-রাষ্ট্র একটি আধুনিক রাজনৈতিক ধারণা। ১৯ শতকে জার্মানি, ইতালি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে বিরাট সাফল্য দেখিয়েছে। জার্মানি ছিল প্রায় ৩৬০টির মতো ছোট-মাঝারি সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত। অথচ জাতিতে তারা সবাই ছিল জার্মান ভাষাভাষী। ১৮ শতকের আলোকিত যুগের আন্দোলন, ফরাসি বিপ্লব এবং নেপোলিয়ান বোনাপার্টের ইউরোপ অভিযান গোটা ইউরোপকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। জার্মানির কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ ও উঠতি বুর্জোয়া শ্রেণির শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, শিক্ষিতজন জার্মান জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেন। একদিকে শিক্ষা, শিল্প, রাজনীতির চর্চা, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা সংগঠন রাজ্যে রাজ্যে ফেডারেশন, কনফেডারেশন গড়ে তোলার কাজটি সযত্নে করতে থাকলেন।
নেপোলিয়ানের সমরাভিযান শেষে জার্মানির একত্রীকরণের হাওয়া ধীরলয়ে বইতে শুরু করে। ৪০ ও ৫০-এর দশকে অনেক রাজ্যই কাছাকাছি চলে আসে। জার্মান জাতিও বড় হতে থাকল। ফলে ৬০-এর দশকে এসে জার্মানরা ইউরোপে নিজেদের আর দুর্বল হিসেবে নয় বরং শক্তিশালী হিসেবেই দেখতে পেল। ১৮৭০-এ জার্মানির একত্রীকরণ উত্তর-মধ্য ইউরোপে এক শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে নিশ্চিত করে। একইভাবে হারিয়ে যাওয়া রোমান সাম্রাজ্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছর খণ্ড খণ্ড নগর, অন্যের দখলে থাকা বা দুর্বল সামন্ত রাজ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। ভাষা ও সংস্কৃতিতে এরা এই সময়ে বিভাজিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু ফরাসি বিপ্লবোত্তর যুগে ইতালি খণ্ড খণ্ড রাজ্য একত্র হওয়ার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলে। একপর্যায়ে সশস্ত্র যুদ্ধও করতে শিখেছে ইতালির কৃষক, জনতা, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। ফলে ১৮৭০ সালে ইতালি ভূমধ্যসাগরীয় তীরে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইউরোপে তখন খণ্ড খণ্ড কিংবা বিভক্ত থাকা জাতিসমূহ হয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করেছে, নতুবা কয়েকটি ভাষাভিত্তিক জাতি সমানাধিকারের মর্যাদা নিয়ে গড়ে তোলে বহুজাতির একেকটি জাতি-রাষ্ট্র। এশিয়ায় সুদূরের জাপান ঐতিহাসিকভাবেই ভাষাভিত্তিক জাতি-রাষ্ট্রের ভিত্তি নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। তবে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য যে আধুনিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানোর প্রয়োজন, সেটি উপলব্ধি করেছিলেন সম্রাট মহামতী মেইজি ১৮৬৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর। জাপানকে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে শক্তিশালী করার জন্য তিনি নিয়েছিলেন শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ আর পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যে আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তুলল, সেগুলো টেকসই জাতি-রাষ্ট্রের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
ঔপনিবেশিক যুগের কবল থেকে মুক্ত হতে এশিয়া ও আফ্রিকায় ২০ শতকে অনেকগুলো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল এগুলো জাতি-রাষ্ট্রেরই পথ অবলম্বন করবে। কিন্তু অভিজ্ঞতা খুব বেশি সুখের হয়নি। ভারতবর্ষে আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তিলাভ করতে গিয়ে যে রাষ্ট্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলাম, সেখানে আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা অনুপস্থিত ছিল। নেতৃত্বের কারও কারও মাথায় ব্রিটিশ আদলে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ার কথা চিন্তা করা হলেও জনগণকে জাতি-রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল না। তাদের পেয়ে বসেছিল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সংকীর্ণ ও বিপর্যয়কর এক ভাবাদর্শ। পাকিস্তান কোনো ভূখণ্ডের নাম ছিল না, কোনো জাতিও ছিল না। কিন্তু আকস্মিকভাবে একটি রাষ্ট্রের নাম হয়ে গেল পাকিস্তান। এই রাষ্ট্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য শিকড়শূন্য। এর সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক এমনকি অর্থনৈতিক সম্পর্কও কোনো কালে ইতিহাসের ধারেকাছেও ছিল না। ফলে দুই অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর যে কিম্ভূতকিমাকার রাষ্ট্রে জোড়াতালি দেওয়া হলো, সেটি এক ইউটোপীয় রাষ্ট্রের চিন্তা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
নেতৃত্ব এমন একটি রাষ্ট্রকে নিয়ে ভয়াবহ বিয়োগান্ত ঘটনারই কেবল জন্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। পাকিস্তানের গদিতে যাঁরা আসীন হলেন, তাঁরা ভাবতেও চাইলেন না এমন ভিন্ন ভাষাভাষী সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার কোনো রাষ্ট্র কি যথার্থ নীতিকৌশল ছাড়া টিকে থাকতে পারবে? সেটি ভাববার মতো আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা তখনো ছিলেন না। সে কারণেই কৃত্রিম পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনীতি, সংস্কৃতি একেবারেই জোরজবরদস্তির মধ্যযুগীয় কায়দায় জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পূর্ব বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের এক ‘ভূস্বর্গীয়’ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, যা আসলেই সাম্প্রদায়িকতাভিত্তিক। বাংলা ভাষার ওপর তাই খড়্গ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রতিবাদকে প্রতিহত করতে শক্তির প্রয়োগ করা হয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের সঙ্গে মানুষের নৈকট্য সৃষ্টি না হয়ে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্র ধর্মের জিগির তুলে, সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর প্রতিবাদী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে যে রাষ্ট্রকে করাচি, পিন্ডি আর ইসলামাবাদ থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছিল, সেটি তাসের ঘরের মতোই কেবল ভেঙে যেতে থাকে।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল না কোনো নিজস্ব ইতিহাস সত্তা ও পরিচয়। তাই কৃত্রিম এই রাষ্ট্র এর জাতিসমূহকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দিতে শেখেনি। শেখার শিক্ষাটাও এই রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের মস্তিষ্কে ছিল না। পাকিস্তান পরিণত হতে পারেনি আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের কোনো রাষ্ট্রে। এটি ক্রমেই এক ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের পরিচয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের জাতিসমূহের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ক্রমেই সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই পূর্ব বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এই ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাকিস্তান রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা পাকিস্তানকে পূর্ব বাংলা থেকে বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে দেয়। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে একটি জাতি-রাষ্ট্রের গতিপথে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর সহযোগী নেতারা সেই জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পথেই গোটা জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সময়ে জাতি-রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হতে থাকে। কিন্তু একটি জাতি-রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করতে হলে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে জনগণকে দীর্ঘ পথ চলার পরিক্রমা অতিক্রম করতেই হয়। ইউরোপ দেড়-দুই শ বছরে আধুনিক যে জাতি-রাষ্ট্র গঠন করেছে, তাতে শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য নীতিকৌশল, পরিকল্পনা হিসেবেই সব নাগরিকের সমানাধিকারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ ও জাতিভেদ দূর করার এক নিরন্তর লড়াইয়ে রাষ্ট্র অবিচল থেকেছে। তার পরও যখনই বিচ্যুতি ঘটেছে, তখনই বিপর্যয় অনিবার্য হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর জ্বলন্ত উদাহরণ। সে কারণে এখনো কোনো জাতি-রাষ্ট্রই উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, নাৎসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথাও পা ফেলার জায়গা পায় না, টুঁটি চেপে ধরা হয়।
অন্যদিকে আমাদের এখানে শুরুতেই বিপর্যয় ঘটে গেছে। রাষ্ট্রের জাতিতাত্ত্বিক চরিত্র নির্মাণে রাজনীতির বড় অংশই বিভ্রান্ত ও দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, পাকিস্তান যে রাষ্ট্রমনন তৈরি করেছিল, তার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যে আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চা এই নতুন রাষ্ট্রে হওয়ার জরুরি ছিল, সেটি ঘটানোর সুযোগ হয়নি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের মন আবার জাগিয়ে তোলা হয়। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতিসহ জীবনের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ১৯৭১-এর জাতি-রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। আমরা আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হই। আমাদের রাষ্ট্র দীর্ঘ সময় চলেছিল সামরিক স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে। এই সময়ে বেড়ে ওঠা রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতায় পুষ্ট হয়েছে, জনগণকে তুষ্ট রাখার কৌশল অবলম্বন করেছে। কোনো আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রচিন্তার শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে নাগরিকদের গড়ে তোলার কোনো নীতিকৌশল ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরুর মাধ্যমে যাত্রা হয়েছিল, সেটির অন্তর্নিহিত শক্তিকে বাদ দিয়ে আমরা যে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির লালন, তোষণ ও পোষণ স্বাধীন বাংলাদেশে করে এসেছি, সেটি মোটেও জাতি-রাষ্ট্রের চরিত্রের সঙ্গে যায়নি।
এখন দেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বিজ্ঞান বড়ই দূরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা একই সঙ্গে দুর্নীতি, অসমতা, দুর্বৃত্তায়ন যেন সবকিছুকেই গ্রাস করে নিতে চাইছে। এরপরও আমরা ইতিহাসের ফেলে আসা অভিজ্ঞতাকে কেন যেন গুরুত্ব দিচ্ছি না। পাকিস্তান আজ রাষ্ট্র হিসেবে কতখানি ভঙ্গুর, কতখানি ব্যর্থ, সেই অভিজ্ঞতাও যেন আমরা চোখ তুলে দেখতে পারছি না। আমাদের দেশেও সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর বিপদ কতটা আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে, তা কি বুঝতে পারছে? ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়ে আমাদের নির্মোহভাবে জাতি-রাষ্ট্রের পথ, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের ভয়াবহ পরিণতি এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পাদদেশে দাঁড়িয়ে করণীয় ও শিখনীয় বিষয়গুলো রাষ্ট্র ও রাজনীতির ইতিহাসের পাঠ থেকে জেনে নিতেই হবে, নতুবা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বাস্তবে গড়ে তোলা আমাদের কেবলই অধরা থেকে যাবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমরা জাতি-রাষ্ট্রের কথা শুনি এবং বলিও। পৃথিবীতে বেশ কিছু জাতি-রাষ্ট্র এরই মধ্যে সফলভাবে গঠিত হয়েছে, আবার অনেকগুলোর গতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা পরিষ্কার নয়। জাতি-রাষ্ট্র একটি আধুনিক রাজনৈতিক ধারণা। ১৯ শতকে জার্মানি, ইতালি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে বিরাট সাফল্য
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমরা জাতি-রাষ্ট্রের কথা শুনি এবং বলিও। পৃথিবীতে বেশ কিছু জাতি-রাষ্ট্র এরই মধ্যে সফলভাবে গঠিত হয়েছে, আবার অনেকগুলোর গতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা পরিষ্কার নয়। জাতি-রাষ্ট্র একটি আধুনিক রাজনৈতিক ধারণা। ১৯ শতকে জার্মানি, ইতালি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে বিরাট সাফল্য
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমরা জাতি-রাষ্ট্রের কথা শুনি এবং বলিও। পৃথিবীতে বেশ কিছু জাতি-রাষ্ট্র এরই মধ্যে সফলভাবে গঠিত হয়েছে, আবার অনেকগুলোর গতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা পরিষ্কার নয়। জাতি-রাষ্ট্র একটি আধুনিক রাজনৈতিক ধারণা। ১৯ শতকে জার্মানি, ইতালি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে বিরাট সাফল্য
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমরা জাতি-রাষ্ট্রের কথা শুনি এবং বলিও। পৃথিবীতে বেশ কিছু জাতি-রাষ্ট্র এরই মধ্যে সফলভাবে গঠিত হয়েছে, আবার অনেকগুলোর গতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা পরিষ্কার নয়। জাতি-রাষ্ট্র একটি আধুনিক রাজনৈতিক ধারণা। ১৯ শতকে জার্মানি, ইতালি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে বিরাট সাফল্য
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫