Ajker Patrika

ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি

মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৪১
ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি

মেহেরপুরে ২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে উঠতি ফসল ভুট্টা, মসুর, আলু, গম, পেঁয়াজ, আম ও লিচুর মুকুলের। সদর উপজেলার আমঝুপি, রাজনগর, বারাদি, সিংহাটিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে চুয়াডাঙ্গায়ও ফসলের ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল রোববার বেলা ৩টার দিকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। পরে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। ২০ মিনিট ধরে চলতে থাকে এ শিলা। অনেক জমিতে ভেঙে পড়েছে ভুট্টা, কলা, পেঁপেগাছ। নুয়ে পড়েছে গমগাছ। নষ্ট হয়েছে মসুর ও সরিষাখেত।

সদর উপজেলার কোলা গ্রামের বাগান মালিক আহম্মেদ আলী বলেন, ‘এর আগে এমন শিলাবৃষ্টি আর দেখিনি। আমঝুপিসহ বিভিন্ন গ্রামে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার বাগান কেনা হয়েছে। শিলাবৃষ্টির কারণে আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, কারণ এ সময়ে অনেক গাছে মুকুল এসেছে। শিলার কারণে সব মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে।’ ঋণ করে বাগানগুলো কিনেছেন বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার বারাদি গ্রামের কৃষক বেলাল উদ্দিন মানিক বলেন, গত দুই সপ্তাহে দুইবার বৃষ্টি ও আজ শিলা (রোববার) বৃষ্টি হয়েছে। আমার ২ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ রয়েছে। সমস্ত গাছ ভেঙে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এখান থেকে কোনো কিছুই পাব না। এতে আমার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হবে।’

একই গ্রামের চাষি ইমাদুল বলেন, ‘আমার জমিতে ভুট্টা, শসা ও গমের আবার রয়েছে। হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এতে আমার ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, ‘এ সময় শিলাবৃষ্টি মানেই ক্ষতি। তবে শিলাবৃষ্টি কয়েকটি অঞ্চলে হয়েছে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। ক্ষতির পরিমাণ হিসাব-নিকাশ করে পরে জানানো হবে।’

এদিকে, চুয়াডাঙ্গায়ও ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বেলা ৩টার দিকে শুরু হয় ঝোড়ো বৃষ্টি। পরে বৃষ্টির সঙ্গে ঝরতে থাকে শিলা। শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব চলে ১৮ মিনিট। শিলাবৃষ্টি থামলেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল অনেকক্ষণ। সঙ্গে ছিল দমকা হাওয়া। গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ায় রাস্তায় স্বাভাবিক চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, ১৮ মিনিট ধরে চলে ঝোড়ো ও শিলাবৃষ্টি। দমকা হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।

হঠাৎ এমন শিলা ও ঝোড়ো বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের খেত। প্রচুর লোকসানের আশঙ্কা কৃষকদের।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের জিনজিরা খাতুন বলেন, ‘জীবনে এত ভয়ংকর ও বুক কাঁপানো শিলাবৃষ্টি দেখিনি। উঠানে যে শিল কুড়িয়ে পেয়েছি সেগুলো অনেক বড় বড়।’

একই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন তরমুজ লাভজনক আর এখন রোপণের সময়। ফসলটিতে শুরু থেকেই অনেক বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু এবারে সব শেষ। কয়েক দিন হলো চারা রোপণ করেছিলাম। দুর্ভাগ্য, শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ। ১ বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে লোকসান।’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা যুবায়ের মাসুর বলেন, ‘ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমির প্রায় ৪০ শতাংশ ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে।’ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে তিনি সদর উপজেলার কৃষকদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...