Ajker Patrika

‘সব ভাষার পরিচর্যায় সহায়তা করা দরকার’

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ১৬
‘সব ভাষার পরিচর্যায় সহায়তা করা দরকার’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও সাম্যবাদী চিন্তক যতীন সরকার। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত অর্ধশতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন’ ও ‘পাকিস্তানের ভূত দর্শন’ আত্মজীবনীতে তিনি তিন কালের মহাসাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। সম্প্রতি নেত্রকোনার বাসায় তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকারমাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পাওয়ার এত বছর পরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে?
যতীন সরকার: বাংলা রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অনেকে মনে করেন, মায়ের ভাষাই হলো মাতৃভাষা। কিন্তু কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। মাতৃভাষা হলো মাতৃস্বরূপিণী ভাষা। যে ভাষা নিজেই মা; মানে আমরা মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করি, তারপর মানুষ হই ভাষার সাহায্যে। যে ভাষার সাহায্যে আমি মানুষ হলাম, সেই ভাষাটাই হলো মাতৃস্বরূপিণী ভাষা। 

আমার জন্ম বাংলাদেশে। এখন আমার মায়ের ভাষা বাংলা। আমাকে যদি ছোটবেলায় অন্য ভাষাভাষী কোনো জায়গায় রাখা হতো, তাহলে সেই ভাষাই আমার মাতৃভাষা হতো। অনেকে বিষয়টা এভাবে বুঝতে চায় না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা একটি অপরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলাম, যার নাম পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রনেতা জিন্নাহ বলেছিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।

আমি কিন্তু অনেক সময় বলি, জিন্নাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তিনি ভাষার প্রশ্ন সামনে এনে আমাদের আত্মসমীক্ষা জাগিয়ে তুললেন। আমরা সেই দিনই মনে করলাম, আমাদের ভাষার ওপর যে আঘাতটা আসছে, সেটা আসলে আমাদের বাঙালি সত্তার ওপর আঘাত। সেই আঘাত প্রতিহত করতে হলে আমাদের আন্দোলনে নেমে পড়তে হবে। সেই আন্দোলনে নেমে পড়ার কারণে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেয়েছিল। এর অনেক দিন পর আমরা পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলাম।

স্বাভাবিকভাবে কাগজে-কলমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। কিন্তু বাংলাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা দেখছি, দেশ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ছেয়ে গেছে। যাদের একটু আর্থিক সংগতি আছে, তারাই তাদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ায়। ইংরেজি জানলে প্রকৃত শিক্ষিত হওয়া যায়—এ রকম একটা ধারণা অনেকের মধ্যে বদ্ধমূল হয়েছে।

কিন্তু আসলে কি তাই? আমরা এমন কতগুলো ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি, যেগুলো কার্যত বাংলা শব্দই হয়ে গেছে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ইউনিভার্সিটিই আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ অন্তর্ভুক্ত হওয়া দোষের কিছু নয়। এটা আমাদের ভাষার ক্ষতি করে না; বরং ভাষার উন্নতি সাধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আজকের পত্রিকা: ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
যতীন সরকার: প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর নিজের মাতৃভাষায় কথা বলা ও লেখাপড়া করার অধিকার আছে। আমাদের মাতৃভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল বলেই আমরা সেদিন বিদ্রোহ করেছিলাম। সেই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আমরা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলাম। সেই রাষ্ট্রে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষও আছে। সেই জাতিসত্তার মানুষগুলোর যে ভাষা-সংস্কৃতি, তাকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।

এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, যাতে সেই ভাষাভাষীর মানুষগুলো নিজেদের ভাষায় লেখাপড়া করতে পারে, কথা বলতে পারে। সত্যিকার অর্থে আমরা বাঙালিরা যেভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছি, সেভাবে প্রতিষ্ঠা যেন হতে পারে অন্য ভাষাভাষীর মানুষ, সেটা আমাদের কামনা। কিন্তু সেই কাম্য অবস্থাটা আমরা ঠিক তৈরি করতে পেরেছি বলে মনে হয় না।

আমাদের দেশে আরও যেসব ভাষা আছে, সেগুলোর প্রতি বাংলা ভাষাভাষীদের নজর দেওয়া উচিত। কারণ, আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমরা যদি অন্য ভাষার চর্চায় সহযোগিতা না করি, তাহলে অপরাধ করব। যে অপরাধ পাকিস্তানিরা করেছিল।  

আসলে মাতৃভাষা সবার সমান অধিকার। যার যে মাতৃভাষা, সে তার মতো করে চর্চা করবে। এক ভাষাভাষী অন্য ভাষাভাষীদের সাহায্য করবে। বাঙালিদের বিশেষ দায়িত্ব পড়ে, বাংলা ছাড়া অন্য যেসব ভাষা আছে, সেই ভাষাগুলোর পরিচর্যায় সহায়তা করা। এই যে সহায়তার ব্যাপারটা, সেটা আমরা মোটেই করছি না। 

আজকের পত্রিকা: অন্য ভাষা, বিশেষ করে ইংরেজি শেখায় তো বাধা নেই। আপনি কী মনে করেন?
যতীন সরকার: পাকিস্তান আমলে যখন বাংলা ভাষা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি চেয়েছিলাম, তখন অন্য ভাষার আমরা বিরোধিতা করিনি। ইংরেজির সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সময়ের সংশ্লিষ্টতা, সেই ইংরেজির মাধ্যমেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষা, সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। ইংরেজি ভাষা আমরা অবশ্যই শিখব। ইংরেজি শেখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের যে অবস্থা, যারা ইংরেজি বেশি জানে, তারাই সমাজে ‘লায়েক’ হিসেবে পরিচিত হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে ইংরেজি শিখব কেন? ইংরেজি শিখব আমার ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য। ইংরেজি থেকে পৃথিবীর অনেক বিষয় বাংলায় অনুবাদ করতে পারি এবং আমাদের দেশের অনেক বিষয় ইংরেজির মাধ্যমে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে পারি।

কাজটা করা উচিত ছিল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। যেটা আমরা মোটেই করতে পারছি না। আমাদের বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান আছে। তারা কিছু কাজ করেছে। কিন্তু সেই কাজগুলো খুবই অকিঞ্চিৎকর। আমাদের দেশের চিন্তাগুলো বাইরে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা যদি এখনই শুরু না করি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

আজকের পত্রিকা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞানচর্চা কম হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। পদ-পদবি পেতে শিক্ষকদের বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এ বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখেন? 
যতীন সরকার: বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা ব্যঙ্গোক্তি আছে। ‘বিশ্বের বিদ্যা যেখানে লয় প্রাপ্ত হয়, সেটাই হলো বিশ্ববিদ্যালয়।’ আমাদের জন্য তাঁর এই ব্যঙ্গোক্তিটা সত্যে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিদ্যা আমরা সেভাবে আত্মস্থ করতে পারিনি। এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতাও খুব অল্প। এই সচেতনতা বাড়ানো যাদের দায়িত্ব, সেই গোষ্ঠীকে বুদ্ধিজীবী বলা হয়। বুদ্ধিজীবীরা অতীতে আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু এখনকার যাঁরা বুদ্ধিজীবী আছেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের উত্তরাধিকার ও তাঁদের চেতনা বহনকারী হলেও, সেটা তাঁরা ভালোভাবে করতে পারছেন বলে আমি মনে করি না। তাই এ বিষয়ে তাঁদের বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। সেই সচেতনতার কাজটিও সচেতন বুদ্ধিজীবীদেরই করতে হবে। সে জন্য একটা জাগরণ ঘটাতে হবে। তার জন্য একটা আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: বুদ্ধিজীবীদের দলীয় রাজনীতি করার বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?
যতীন সরকার: এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বুদ্ধিজীবীরা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ মতামত পোষণ করবেন। তাঁদের মধ্যে নানা ধরনের বৈচিত্র্য থাকবে, সেটাই কাম্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই বৈচিত্র্যের চেয়ে তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বুদ্ধি বিক্রি করার কৌশল আয়ত্ত করা। কীভাবে বুদ্ধি বিক্রি করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায়, সেটাই এখন হচ্ছে। 

আমাদের অনেকেই বুদ্ধি বিক্রি করতে পছন্দ করছি। বিভিন্ন দলীয় চিন্তা-চেতনা গ্রহণ করে, সেটার ওপর সব ভার অর্পণ করেছি। এ কাজটা মোটেই বিবেকসম্মত নয় বলেই মনে করি। দলীয় বুদ্ধিজীবিতা থেকে বুদ্ধিজীবীদের বের করার জন্যও একটা জাগরণ ঘটাতে হবে। এটা ঘটবে কীভাবে? বর্তমানে আমাদের যে রাষ্ট্র স্বাধীন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম যে কারণে, সেটা আমরা এখনো দূর করতে পারিনি; বরং নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন আমরা একটা রাষ্ট্রধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছি। ইসলাম আমাদের রাষ্ট্রধর্ম। তবে অন্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে। এটা আসলে খাতির করার ব্যাপার নয়। এ ব্যাপারটা কোনোভাবেই সঠিক নয়। একদিকে রাষ্ট্রধর্ম বজায় রাখা, অন্যদিকে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখাটা বড় ধরনের গোঁজামিলের শামিল।

আজকের পত্রিকা: অতীতে আমরা দেখেছি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি—দুটি একসঙ্গে সমন্বিত হয়ে এগিয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। এটাকে আপনি কি একটা বড় স্খলন হিসেবে মনে করেন?
যতীন সরকার: অবশ্যই এটা একটা স্খলন। কিন্তু এটা কেন হলো, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। হাঙ্গেরির মার্ক্সবাদী দার্শনিক লুকাস বলেছিলেন, ‘সংস্কৃতিই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। রাজনীতি হচ্ছে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটা উপায় মাত্র।’ কিন্তু আমরা মূলটাকে দ্বিতীয় করে ফেলেছি। আমরা রাজনীতি করি, কিন্তু রাজনীতির যে মূল উদ্দেশ্য সংস্কৃতিকে বিকশিত করা, যার জন্য আমরা বিভিন্ন আন্দোলনে করেছি; কিন্তু সেই আন্দোলন আমরা সফল করতে পারিনি। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই যে রাজপথে রাজনৈতিক আন্দোলন সফল হয়ে ওঠে, অতীতে তা আমরা দেখেছি। এখনো আবার সংস্কৃতিকেই মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করে অগ্রসর হতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত