Ajker Patrika

সরকারি কর্মচারী এমপি প্রার্থী, কেন্দ্রেও দায়িত্বে

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
সরকারি কর্মচারী এমপি প্রার্থী, কেন্দ্রেও দায়িত্বে

সরকারি চাকরির তথ্য গোপন করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাউদ্দিন। স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত থাকায় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের তালিকায়ও তাঁর নাম রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নির্বাচন করায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে চাকরির আগে পুলিশ সদস্য ছিলেন মো. সালাউদ্দিন। ২০১০ সালে পুলিশ বাহিনীর চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান তিনি। এরপর ২০১১ সালে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন।

এই চাকরি থেকে অব্যাহতি না নিয়েই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেন। মনোনয়নপত্রে তিনি নিজেকে ফার্মেসি ব্যবসায়ী উল্লেখ করে সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র দেন। তবে যাচাই-বাছাইয়ে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনে ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে প্রার্থিতা বাতিল হয় সালাউদ্দিনের। পরে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। সেখানেও তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল থাকে। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে আপিল করেন তিনি। সর্বশেষ উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পান সালাউদ্দিন। ‍গত শুক্রবার রায়ের কপি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করে শনিবার রকেট প্রতীক বরাদ্দ পান তিনি। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন তাঁদের হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সালাউদ্দিন প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানার পর তিনি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের পাশাপাশি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলামকে অবহিত করেন। এ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় গত ১১ নভেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর দুটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় সালাউদ্দিনকে। সর্বশেষ গত রোববার তাঁকে তৃতীয়বারের মতো কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়। 

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশন থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, সেখানে সালাউদ্দিনেরও নাম আছে। তাঁর নাম বাদ দিতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সরকারি চাকরিবিধি পরিপন্থীভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন চৌধুরী বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্য সহকারী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিতে তিনি বিভাগীয় কমিশনার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগের অনুলিপি গতকাল পর্যন্ত তাঁর হাতে এসে পৌঁছায়নি। পেলে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনারকে জানাবেন। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা স্বাস্থ্য সহকারী মো. সালাউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি উচ্চ আদালতের রায়ে রকেট প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ থেকে গণসংযোগে নামবেন। তবে সরকারি চাকরির তথ্য গোপন করে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন। 

প্রসঙ্গত, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (২০০২ সালে সংশোধিত) এর রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া এর ধারা অনুসারে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশে হোক বা অন্য কোথাও আইনসভার কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বা নির্বাচনে প্রচারণা বা এতে কোনোভাবে হস্তক্ষেপ বা তাঁর প্রভাব ব্যবহার করতে পারবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত