Ajker Patrika

ঢামেক হাসপাতাল এলাকাই মশার অভয়ারণ্য

অর্চি হক, ঢাকা
Thumbnail image

প্লাস্টিকের বোতল, দইয়ের কাপ, ময়লাভর্তি পলিথিন ব্যাগ বা পানি জমে থাকা ডাবের খোসার স্তূপ–এডিস মশার বংশবিস্তারে অবদান রাখার মতো এমন বহু কিছুরই ছড়াছড়ি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায়। ডেঙ্গুর চরম প্রকোপের সময়ও এর ব্যতিক্রম নেই। সরকারি কর্তৃপক্ষ এডিসের বিস্তার রোধে দেশবাসীকে এর প্রজননস্থলগুলো ধ্বংসের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেরই চিত্র হচ্ছে এই। দৃশ্যত সিটি করপোরেশনেরও যথাযথ উদ্যোগ নেই।

গত শুক্র ও শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থাপনা ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কমবেশি আবর্জনা। হাসপাতালের মূল ভবনের চারপাশজুড়ে রোগী ও দর্শনার্থীদের বিচরণের স্থানে যথেচ্ছভাবে ফেলা হচ্ছে ডাবের খোসা, পানির বোতল ও খাবারের প্যাকেট। পুরোনো ভবনের নিচে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ক্যানটিনের পাশে আবর্জনা ও পানি জমে রয়েছে। সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছে মশা-মাছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রত্যেকে যদি ইচ্ছামতো ময়লা ফালাইতে থাকে, আমরা আর কত পরিষ্কার করমু। চোখের সামনে এইগুলা দ্যাখতে দ্যাখতে আমাদের মইদ্দেও অনিচ্ছা চইলা আসে।’

পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বলেন, রোগীদের সঙ্গে যাঁরা আসেন, তাঁরাই হাসপাতাল এলাকা সবচেয়ে বেশি নোংরা করেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানালা দিয়েও বাইরে ময়লা ফেলেন। অনেক রোগীর স্বজনেরা ওয়ার্ডের মধ্যেই রান্নাসহ বিভিন্নভাবে খাবার তৈরি পর্যন্ত করেন। এসব কাজের আবর্জনা বাইরেই ফেলা হয়। প্রশ্ন করা হলে রোগীর সঙ্গে থাকা আব্দুল কালাম নামের একজন বলেন, ‘ময়লার ঝুড়ি পুরা ভরা। সেইখানে আর ফেলা যাইতেছে না। তাই এদিক-ওদিক ফেলা লাগে।’

হাসপাতাল ভবনের ভেতরে ওয়ার্ডগুলোর পাশের সিঁড়ির আশপাশের জায়গা এবং সানশেডে আবর্জনা ও পানি জমে থাকতে দেখা যায়। সেখানে এডিস মশার বিস্তার ও তা থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি স্পষ্টতই অনেক।   

এ বিষয়ে হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, ‘একটা হাসপাতাল এলাকা হতে হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, যেন রোগ ছড়াতে না পারে। অথচ আমাদের এখানে হাসপাতালই হয়ে উঠেছে অসুখের কারখানা। ওয়ার্ডগুলোর ওয়াশরুমে গেলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়। এ জন্য কর্তৃপক্ষ যেমন দায়ী, তেমন দায়ী রোগী ও তাদের স্বজনেরা।’

হাসপাতালের আশপাশের এলাকার অবস্থা যেন আরও খারাপ। হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনের এলাকা থেকে শুরু করে পূর্ব চানখাঁরপুল এলাকার রাস্তার অংশবিশেষ ও ফুটপাত দখল করে বসেছে ভাতের হোটেলসহ নানা ধরনের দোকান। নিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় রাস্তা ও ফুটপাতের খানাখন্দেই ফেলা হচ্ছে থালাবাটি ধোয়া পানি ও খাবারের উচ্ছিষ্ট। তৈরি হচ্ছে আবর্জনার স্তূপ।

হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভবন ও সামনের ফুটপাত ছাড়াও ঢামেক এলাকায় নির্মাণকাজ বন্ধ থাকা একাধিক স্থাপনাতে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হচ্ছে মশার প্রজননস্থল। চানখাঁরপুল এম এ আজিজ মার্কেট কমপ্লেক্সও তার একটি। টানা বৃষ্টিতে পানি জমে নির্মাণাধীন বিপণিবিতানটি মশার নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে। সেখানে সঠিকভাবে মশার ওষুধ দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মো. নুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বাউন্ডারির ভেতরে নিয়মিতভাবে মশার ওষুধ দেওয়া হয়। সেই দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু বাইরের দায়িত্বটা সিটি করপোরেশনের।’

উপপরিচালক মো. নুরুল ইসলাম জানান, বাইরের খাবারের দোকানগুলো স্থানান্তরের বিষয়ে মাস দেড়েক আগে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যেন হাসপাতাল থেকে নিরাপদ দূরত্বে মার্কেট ও খাবারের দোকানের জন্য জায়গা দেওয়া হয়। 

হাসপাতাল ভবনের চারপাশে বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা ও জমে থাকা পানি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। 
পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা উপসচিব নাছিম আহমেদ দাবি করেন, ঢামেক এলাকাকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে তাঁরা মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মেডিকেলের আশপাশের এলাকায় আবর্জনা ও পানি জমে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাই। সেখানকার ড্রেনে মশার বিস্তার রোধে গাপ্পি মাছও ছাড়া হয়েছে। এরপরও যদি কোথাও পানি বা আবর্জনা জমে থাকে, সেগুলোর বিষয়ে ঢামেক কর্তৃপক্ষ আমাদের জানালে আমরা তা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করব।’

চানখাঁরপুলের নির্মাণাধীন বিপণিবিতানটিতেও ডিএসসিসির মশা মারার কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলে বলে দাবি করেন নাছিম আহমেদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত