স্বপ্না রেজা
কী হয়, কী হতে পারে ইত্যাদি প্রশ্ন অধিকাংশ নাগরিকের মনে। উদ্বিগ্ন হয়ে কৌতূহল নিয়ে তারা তাকিয়ে আছে ৭ জানুয়ারির দিকে। এবারের নির্বাচনে উত্তাপ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে জোরালো তোড়জোড় নেই। সহিংসতা যা-ও আছে, সেটাও অন্যান্যবারের মতো নয়। কেউ কেউ বলেন, এই সহিংসতা নিজেদের সঙ্গে নিজেদের। বৃহৎ দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ। এই দলেরই একটা অংশ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা এবং দলের সবাইকে মনোনয়ন না দিতে পারায় অমনোনীতদের সন্তুষ্ট করার জন্য স্বতন্ত্র বিধির প্রবর্তন করেছে এবার আওয়ামী লীগ, যা কখনোই হতে দেখা যায়নি। এটাকে আওয়ামী লীগের বোকামিও বলছে কেউ কেউ। প্রতিদ্বন্দ্বী কখনো বন্ধুসুলভ হয় না, তা-ও আবার ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই যে, রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য কেউ তার স্বার্থের জায়গা থেকে সরে এসেছে। দলের অন্য কারোর হাতে নিজের ক্ষমতার মন্ত্র তুলে দিয়েছে। উপরন্তু রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত একটি আচরণ অন্তর্দ্বন্দ্ব; যে আচরণে হত্যা, খুনও সংঘটিত হতে দেখা গেছে। গণধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হল দখল, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ইত্যাদিতে একই রাজনৈতিক দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রাজনীতি মানে যেখানে ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের উন্মাদনা, সেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে কতটা সহনশীলতা, উদারতা ও নিঃস্বার্থপরতার পরিচয় দিতে পারে বা পারবে, প্রশ্ন রয়ে যায়। শঙ্কা, আতঙ্ক তো থাকেই। বলতে দ্বিধা নেই, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বিধিতে সাধারণ জনগণের কৌতূহল বেশি যেমন, তেমনি আতঙ্কও রয়েছে।
পোস্টার কোথাও কোথাও ঝুলে আছে সড়কের ওপরে। অথচ পাল্টাপাল্টি মিছিল নেই, প্রচারণা নেই। নেই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। তবে কোথাও কোথাও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে। স্থানীয় জনগণ এবার প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে প্রচারমাধ্যমে জানা যায়। বিশেষ করে এবার যাঁরা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের রাজনৈতিক তৎপরতা ও জনসংযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি বলে স্থানীয় জনগণ মনে করছেন। বিএনপির ভোট তারা পেতে পারেন বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন। আবার বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্রমেই তার অস্তিত্বকে ম্লান করছে বলে অনেকেরই ধারণা। নির্বাচন ছাড়া কখনোই একটি রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা যাচাই যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি দলটির সঙ্গে জনসংযোগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাও সম্ভব হয় না। জনসংযোগ ও জনসমর্থন ছাড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের চিন্তাটা শূন্যে ওড়া ঘুড়ির মতো। সুতোয় মোড়ানো একটা নাটাই ছাড়া যার কোনো অবলম্বন শেষ অবধি থাকে না। অনেকেরই অভিমত, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আরও শক্ত অবস্থানে যেতে পারত।
৭ জানুয়ারিতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না গেলে বাংলাদেশের জন্য তা ভালো হবে না—এমনই আভাস একজন নির্বাচন কমিশনারের। সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে নির্বাচন উপলক্ষে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ইসি আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘ভোট অবাধ, সুষ্ঠু না হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘উদ্দেশ্য একটাই, সেটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করতে পারি, কোনো কারণে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে। আমরা সেটা চাইব না। কারণ আমরা সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।’ এমন মন্তব্য জনগণকে সংশয়ে ফেলে। অন্য ধরনের ইঙ্গিত দেয়। একজন নির্বাচন কমিশনার এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন কি না, সেটা নিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ভাষা ও কৌশল হতে হবে ভিন্ন।
তিনি যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা জনমনে স্বস্তি নয়, অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। এমনিতে এবারের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার ভিসা নীতি, ইউরোপের আচরণ জনমনে বেশ সংশয় তৈরি করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের হস্তক্ষেপ জনগণ প্রত্যাশা করে না। বিএনপির আচরণেও রয়েছে শঙ্কা। দলটি নির্বাচনের বিরোধিতা করে যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন, বিদেশি শক্তিকে পুঁজি করে দলটি ক্ষমতাসীন সরকারের যে পতন আশা করছে, সেটা { এহেন আচরণ কখনোই কাম্য নয়।
ভোট প্রদানে কতজন ইচ্ছুক, আশপাশের কয়জনকে জিজ্ঞেস করা হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। শ্রমজীবী একজন রিকশাচালক বললেন, ‘ভোট তো দিমুই। ভোট না দিলে কী হইব? যারে ভালো লাগে, যে মাইনসের জন্য কাম করছে, তারেই তো ভোট দিমু।’ প্রশ্ন করলাম, ‘বিএনপি তো এবার ভোটে দাঁড়াচ্ছে না। কী মনে হয় এই ব্যাপারটা?’ উত্তর, ‘কামটা ভালা করে নাই। আরে ভোটই তো রাজনীতির অক্সিজেন, শক্তি, ক্ষেমতা। জনগণ ফালাইয়া বিদেশে ঘুরাঘুরি কইরা লাভ কী? দলডা ভুল করতাছে। দ্যাশের মাইনসে যদি তাগো না চায়, তয় তারা কী কইরা ক্ষমতায় বসব? সব ফালাইয়া ভোটে দাঁড়াইয়া নিজেগো জায়গা করা উচিত আছিল। কন তো, মিছিল ছাড়া তাগো কোন কর্মসূচিতে মানুষ যোগ দিচ্ছে? দেয় নাই।’ বললাম, বিএনপি মনে করছে যে, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। উত্তর তার হাতের কাছেই ছিল, ‘সব বিরোধী দল তো হেই কথা কয়। কন তো কুনো দল আরেক দলের উপর আস্থা রাখছে কখনো? রাখে নাই। আরে ভাই, যত অবিশ্বাস, মারামারি, খুনাখুনি এই রাজনীতিতে। তয় ভোট দেওয়া যেমন জনগণের উচিত, তেমন উচিত ভোটে দাঁড়াইয়া নেতাদের নিজের যোগ্যতা দ্যাখা।’
একজন প্রবীণ বলছিলেন, ‘দেশে যে রাজনীতির চর্চা, তাতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততাই থাকছে না। দল নিজের মতো করে সব করে। একদিন দেখবেন দেশ থেকে নির্বাচনের প্রক্রিয়া উঠে গেছে। কেন যে রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে না! মাঝেসাঝে মনে হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ আর এক হতে পারবে না। দেশের অস্তিত্ব বিরাট সংকটে পড়ে গেলেও আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আর এক হবে না, হওয়ার চেষ্টা করবে না। এরা এমন সব আচরণ করে যে, এতে করে আস্থা, ভরসা, শ্রদ্ধার জন্ম হয় না। দেশের চেয়ে এদের কাছে ক্ষমতা বড়, দল বড়।’ প্রশ্ন রাখলাম, ভোট দেবেন কি না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘এই সরকার নিঃসন্দেহে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। দেশকে সমৃদ্ধ করেছে যেমন, তেমনি ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ লাভবান হয়ে আকাশ ছুঁয়েছে অন্যায়ভাবে, দুর্নীতি করে। তার পরও রাষ্ট্রকে গতিশীল রাখার জন্য অবশ্যই ভোট দেব। তবে প্রতীককে নয়, এবার ব্যক্তিকে ভোট দেব। বিরোধী দল বলে তো এখন কোনো দল নেই, যা আছে সেটা হলো প্রতীক। ভোট দেওয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের। সুতরাং ভোট দিতে যাব।’
সবাই তাকিয়ে আছে ৭ জানুয়ারির দিকে—কী হবে শেষ অবধি, তা দেখার জন্য। তবে প্রত্যেকের প্রত্যাশা, দেশ সুরক্ষিত থাকুক। স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করুক। ব্যক্তি ও দলের চাইতে দেশটা সবার কাছে গুরুত্ব পাক। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস। সুতরাং ৭ জানুয়ারিকে অর্থবহ করে তুলতে পারে জনগণই। জনগণই রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝিয়ে দিতে পারে, তারা আসলে কী চায়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
কী হয়, কী হতে পারে ইত্যাদি প্রশ্ন অধিকাংশ নাগরিকের মনে। উদ্বিগ্ন হয়ে কৌতূহল নিয়ে তারা তাকিয়ে আছে ৭ জানুয়ারির দিকে। এবারের নির্বাচনে উত্তাপ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে জোরালো তোড়জোড় নেই। সহিংসতা যা-ও আছে, সেটাও অন্যান্যবারের মতো নয়। কেউ কেউ বলেন, এই সহিংসতা নিজেদের সঙ্গে নিজেদের। বৃহৎ দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ। এই দলেরই একটা অংশ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা এবং দলের সবাইকে মনোনয়ন না দিতে পারায় অমনোনীতদের সন্তুষ্ট করার জন্য স্বতন্ত্র বিধির প্রবর্তন করেছে এবার আওয়ামী লীগ, যা কখনোই হতে দেখা যায়নি। এটাকে আওয়ামী লীগের বোকামিও বলছে কেউ কেউ। প্রতিদ্বন্দ্বী কখনো বন্ধুসুলভ হয় না, তা-ও আবার ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই যে, রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য কেউ তার স্বার্থের জায়গা থেকে সরে এসেছে। দলের অন্য কারোর হাতে নিজের ক্ষমতার মন্ত্র তুলে দিয়েছে। উপরন্তু রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত একটি আচরণ অন্তর্দ্বন্দ্ব; যে আচরণে হত্যা, খুনও সংঘটিত হতে দেখা গেছে। গণধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হল দখল, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ইত্যাদিতে একই রাজনৈতিক দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রাজনীতি মানে যেখানে ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের উন্মাদনা, সেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে কতটা সহনশীলতা, উদারতা ও নিঃস্বার্থপরতার পরিচয় দিতে পারে বা পারবে, প্রশ্ন রয়ে যায়। শঙ্কা, আতঙ্ক তো থাকেই। বলতে দ্বিধা নেই, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বিধিতে সাধারণ জনগণের কৌতূহল বেশি যেমন, তেমনি আতঙ্কও রয়েছে।
পোস্টার কোথাও কোথাও ঝুলে আছে সড়কের ওপরে। অথচ পাল্টাপাল্টি মিছিল নেই, প্রচারণা নেই। নেই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। তবে কোথাও কোথাও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে। স্থানীয় জনগণ এবার প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে প্রচারমাধ্যমে জানা যায়। বিশেষ করে এবার যাঁরা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের রাজনৈতিক তৎপরতা ও জনসংযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি বলে স্থানীয় জনগণ মনে করছেন। বিএনপির ভোট তারা পেতে পারেন বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন। আবার বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্রমেই তার অস্তিত্বকে ম্লান করছে বলে অনেকেরই ধারণা। নির্বাচন ছাড়া কখনোই একটি রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা যাচাই যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি দলটির সঙ্গে জনসংযোগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাও সম্ভব হয় না। জনসংযোগ ও জনসমর্থন ছাড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের চিন্তাটা শূন্যে ওড়া ঘুড়ির মতো। সুতোয় মোড়ানো একটা নাটাই ছাড়া যার কোনো অবলম্বন শেষ অবধি থাকে না। অনেকেরই অভিমত, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আরও শক্ত অবস্থানে যেতে পারত।
৭ জানুয়ারিতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না গেলে বাংলাদেশের জন্য তা ভালো হবে না—এমনই আভাস একজন নির্বাচন কমিশনারের। সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে নির্বাচন উপলক্ষে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ইসি আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘ভোট অবাধ, সুষ্ঠু না হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘উদ্দেশ্য একটাই, সেটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করতে পারি, কোনো কারণে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে। আমরা সেটা চাইব না। কারণ আমরা সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।’ এমন মন্তব্য জনগণকে সংশয়ে ফেলে। অন্য ধরনের ইঙ্গিত দেয়। একজন নির্বাচন কমিশনার এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন কি না, সেটা নিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ভাষা ও কৌশল হতে হবে ভিন্ন।
তিনি যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা জনমনে স্বস্তি নয়, অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। এমনিতে এবারের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার ভিসা নীতি, ইউরোপের আচরণ জনমনে বেশ সংশয় তৈরি করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের হস্তক্ষেপ জনগণ প্রত্যাশা করে না। বিএনপির আচরণেও রয়েছে শঙ্কা। দলটি নির্বাচনের বিরোধিতা করে যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন, বিদেশি শক্তিকে পুঁজি করে দলটি ক্ষমতাসীন সরকারের যে পতন আশা করছে, সেটা { এহেন আচরণ কখনোই কাম্য নয়।
ভোট প্রদানে কতজন ইচ্ছুক, আশপাশের কয়জনকে জিজ্ঞেস করা হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। শ্রমজীবী একজন রিকশাচালক বললেন, ‘ভোট তো দিমুই। ভোট না দিলে কী হইব? যারে ভালো লাগে, যে মাইনসের জন্য কাম করছে, তারেই তো ভোট দিমু।’ প্রশ্ন করলাম, ‘বিএনপি তো এবার ভোটে দাঁড়াচ্ছে না। কী মনে হয় এই ব্যাপারটা?’ উত্তর, ‘কামটা ভালা করে নাই। আরে ভোটই তো রাজনীতির অক্সিজেন, শক্তি, ক্ষেমতা। জনগণ ফালাইয়া বিদেশে ঘুরাঘুরি কইরা লাভ কী? দলডা ভুল করতাছে। দ্যাশের মাইনসে যদি তাগো না চায়, তয় তারা কী কইরা ক্ষমতায় বসব? সব ফালাইয়া ভোটে দাঁড়াইয়া নিজেগো জায়গা করা উচিত আছিল। কন তো, মিছিল ছাড়া তাগো কোন কর্মসূচিতে মানুষ যোগ দিচ্ছে? দেয় নাই।’ বললাম, বিএনপি মনে করছে যে, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। উত্তর তার হাতের কাছেই ছিল, ‘সব বিরোধী দল তো হেই কথা কয়। কন তো কুনো দল আরেক দলের উপর আস্থা রাখছে কখনো? রাখে নাই। আরে ভাই, যত অবিশ্বাস, মারামারি, খুনাখুনি এই রাজনীতিতে। তয় ভোট দেওয়া যেমন জনগণের উচিত, তেমন উচিত ভোটে দাঁড়াইয়া নেতাদের নিজের যোগ্যতা দ্যাখা।’
একজন প্রবীণ বলছিলেন, ‘দেশে যে রাজনীতির চর্চা, তাতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততাই থাকছে না। দল নিজের মতো করে সব করে। একদিন দেখবেন দেশ থেকে নির্বাচনের প্রক্রিয়া উঠে গেছে। কেন যে রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে না! মাঝেসাঝে মনে হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ আর এক হতে পারবে না। দেশের অস্তিত্ব বিরাট সংকটে পড়ে গেলেও আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আর এক হবে না, হওয়ার চেষ্টা করবে না। এরা এমন সব আচরণ করে যে, এতে করে আস্থা, ভরসা, শ্রদ্ধার জন্ম হয় না। দেশের চেয়ে এদের কাছে ক্ষমতা বড়, দল বড়।’ প্রশ্ন রাখলাম, ভোট দেবেন কি না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘এই সরকার নিঃসন্দেহে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। দেশকে সমৃদ্ধ করেছে যেমন, তেমনি ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ লাভবান হয়ে আকাশ ছুঁয়েছে অন্যায়ভাবে, দুর্নীতি করে। তার পরও রাষ্ট্রকে গতিশীল রাখার জন্য অবশ্যই ভোট দেব। তবে প্রতীককে নয়, এবার ব্যক্তিকে ভোট দেব। বিরোধী দল বলে তো এখন কোনো দল নেই, যা আছে সেটা হলো প্রতীক। ভোট দেওয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের। সুতরাং ভোট দিতে যাব।’
সবাই তাকিয়ে আছে ৭ জানুয়ারির দিকে—কী হবে শেষ অবধি, তা দেখার জন্য। তবে প্রত্যেকের প্রত্যাশা, দেশ সুরক্ষিত থাকুক। স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করুক। ব্যক্তি ও দলের চাইতে দেশটা সবার কাছে গুরুত্ব পাক। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস। সুতরাং ৭ জানুয়ারিকে অর্থবহ করে তুলতে পারে জনগণই। জনগণই রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝিয়ে দিতে পারে, তারা আসলে কী চায়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
৫ দিন আগেবিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪