শাইখ সিরাজ
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষিকে ঘিরেই রচিত হওয়ার কথা ছিল আমাদের সবকিছু। বিশেষ করে আমাদের নদীবিধৌত উর্বর মাটিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় করার কথা ছিল প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। রপ্তানি আয়কে কেন্দ্র করে আমাদের কৃষি সাজানো হয়নি। তবে বাংলাদেশের তরুণ কৃষকেরা নিজ দায়িত্বেই হেঁটে চলেছেন বন্ধুর পথ। বাংলাদেশের কৃষিতে সংযোজন করেছেন আধুনিক প্রযুক্তি থেকে শুরু করে উচ্চমূল্যের নানান ফল-ফসল। আমাদের বাংলাদেশের কৃষির যে অগ্রযাত্রা, সেটুকু এগিয়ে নেওয়ার পেছনে এককভাবে কৃষকের অবদান অনেক বড়। নিজস্ব উদ্ভাবনী ক্ষমতায় বাংলাদেশের কৃষিতে কৃষক যুক্ত করেছেন নতুন নতুন ধারা।
২০১২ সালে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ভারতের সবজি উৎপাদন নিয়ে একটা প্রতিবেদন পড়েছিলাম। সে সময় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুতে ইউরোপে সবজি রপ্তানির একটা সরকারি প্রজেক্ট চলছিল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শর্ত মেনে রাজ্যের কৃষকদের তালিকা করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল মানসম্মত সবজি উৎপাদনের জন্য। হয়তো এরই প্রতিফলন ঘটেছে ভারতের সবজি চাষে। এসেছে বিপ্লব। সতেজ সবজি উৎপাদন করে পৃথিবীতে চীনের পরবর্তী স্থানটি দখল করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে দখল নিয়েছে ইউরোপের সবজিবাজারেরও অনেকখানি।
ফল-ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন আর দেশ-কালের ভেদাভেদ থাকছে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উৎকর্ষের যুগে সব দেশেই ফলছে সব রকমের ফল-ফসল। একইভাবে মানুষের পুষ্টি চাহিদার প্রয়োজনে সবজি ফসলের ক্ষেত্রেও এসেছে এই বৈচিত্র্য। শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল-ফসলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন আর তেমন প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। একসময় বিদেশি সবজির চাহিদা ছিল অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁয়। এখন জীবনব্যবস্থার নানামুখী উন্নয়নের সুবাদে অভিজাত ও পুষ্টিসচেতন পরিবারগুলোতেও বিদেশি সবজির চাহিদা তৈরি হয়েছে। এই চাহিদা পূরণের জন্য দেশের অনেক স্থানেই শুরু হয়েছে বিদেশি সবজির আবাদ। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বগুড়ার শিবগঞ্জের বুজরুক শোকড়া গ্রামের আনছার আলীর কথা। তিনি ইউরোপের বিভিন্ন জনপ্রিয় সবজি আবাদে দেশের মধ্যে প্রথম ব্যাপক সাড়া জাগান। ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’-এর একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছিলাম তাঁর গল্প। সেই আনসার আলীর প্রতিবেদন অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায় সাভারের এক তরুণের। নাম কুব্বাত হোসাইন অভি। বয়স ৪০ হবে। সাভারে প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর তাঁর স্বপ্নের চাষবাস। না, দেশীয় কোনো সবজি নয়। সেখানে আবাদ হচ্ছে ক্যাপসিকাম, চেরি টমেটো, ক্যাবেজ, রেডবিট, সেলেরি, চায়নিজ ক্যাবেজ, বেবি কর্ন, সুইট কর্ন, নীরা লিফ, ব্রকলিসহ নানা রকমের বিদেশি সবজি। ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তর তাঁর কৃষিজগৎ।
বাবা মারা যাওয়ার পর কী করবেন, কীভাবে সংসারের হাল ধরবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। আনসার আলীর প্রতিবেদনটা দেখে সাত-পাঁচ না ভেবে দুই বিঘা জমি দিয়ে শুরু করলেন বিদেশি সবজির আবাদ। না, কৃষিতে আসার অভির এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। ১৫-১৬ বছরে তাঁর এই বিদেশি সবজি আবাদের এলাকার পরিধি পৌঁছে গেছে ২০০ বিঘায়। এসব খেতে ফলছে ২৫ থেকে ৩০ রকমের বিদেশি সবজি।
বিস্তীর্ণ আবাদি খেতের ২০ বিঘা নিজের, বাকি জমি অভির লিজ নেওয়া। দক্ষিণ ভারতীয়দের অন্যতম সালাদ কারিপাতা, স্যুপকাত, লেমন গ্রাস। অনেকটা জায়গাজুড়ে এসবের আবাদ চলছে। অভি জানালেন, ভোক্তার চাহিদা ও লাভের অঙ্ক মাথায় রেখে তিনি মৌসুমভেদে সবজি আবাদ করেন। একটা অংশে গড়ে তুলেছেন অ্যাভোকাডোর বাগান। ৯-১০ বছর আগে ১০টি গাছ রোপণ করা হয়েছিল। সবগুলো গাছেই ফুল আসতে শুরু করেছে। দেখতে অনেকটাই আমের মুকুলের মতো। নতুন নতুন সবজি চাষ করে অভি যেমন নিজের ভাগ্য পাল্টেছেন, তেমনি পরিবর্তন করেছেন এলাকার চিত্রও। তাঁর দেখাদেখি অনেকেই বিদেশি সবজির চাষ শুরু করেছেন। তাঁর গ্রামের নামটিই বদলে গেছে। হয়ে গেছে বিদেশি সবজির গ্রাম।
অভির খেতে-খামারে দল বেঁধে কর্মীরা পেঁয়াজপাতা বা ওনিয়ন লিফ নিয়ে কাজ করছেন। জানা গেল, ওনিয়ন লিফ, ডিল লিফ, স্যালারি লিফ, আইসবার্গ লেটুস পাতা বছরের সব সময় চলে। এ জন্য বছরব্যাপী সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে উৎপাদন করা হচ্ছে চারাও। মাঠের সব সবজি এনে স্তূপ করা হয় অভির বাড়ির আঙিনা ও আশপাশের খোলা জায়গায়। তারপর বাছাই ও প্যাকেটজাত করে পাঠানো হয় বাজারে। খামারের উচ্ছিষ্ট সবজি ব্যবহার হচ্ছে গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে। ছোট আকারে গবাদিপশু লালনপালনও শুরু করেছেন তিনি।
উৎপাদিত সব সবজি নিয়মিত সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
তবে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, খুলনায় বেশি চলে। প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার সবজি বাজারজাত হয়। বছরের হিসাবে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার সবজি বাজারজাত করেন কুব্বাত হোসেন অভি। সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০-৫০ শতাংশ লাভ থেকে যায়। অভি বলেছেন, জেনে-বুঝে কাজ করলে, শ্রম ও নিষ্ঠায় যুক্ত হলে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশি সবজির চাষ দারুণ এক অনুশীলনের খাত হয়ে উঠতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়েছে সবজি উৎপাদকদের চিরাচরিত সংকট হাতবদলের খেলা। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। আবার পাশের দেশ থেকেও আমদানি করা সবজি বাজারে তারল্য তৈরি করে। এ জন্য নতুন নতুন ফল-ফসল কিংবা সবজির চাহিদা সৃষ্টি হলেও উৎপাদন বাড়ানোর সাহস পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। অভি মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে দরকার সরকারের আমদানি নীতিমালায় আরও পরিবর্তন আনা।
আমাদের দেশের সবজি এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। তবে বিদেশি সবজি আমাদের দেশ থেকে এখনো রপ্তানি শুরু হয়নি। অথচ মানসম্মত উৎপাদন আর প্যাকেজিং করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। দরকার শুধু বিশুদ্ধ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাজারজাত নীতিমালা অনুসরণের ক্ষেত্রে কৃষকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবারই আন্তরিকতা। অভির মতো তরুণ কৃষকদের নতুন সব কৃষি উদ্যোগের মাধ্যমেই বাংলাদেশের কৃষি যেমন পাচ্ছে নতুন নতুন ধারা, তৈরি হচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ বাজার, সেই সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তাদের সামনে খুলে যাচ্ছে অপার সম্ভাবনার নতুন খাত।
শুধু সাভার নয়, বিদেশি সবজির চাষ প্রথম শুরু হয়েছিল যে বগুড়ার মাটিতে, সেখানে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। ইউরোপীয় সবজি চাষ করে ভালো আয় করছেন কৃষকেরা। ইউরোপের শীতপ্রধান অঞ্চলের সবজি ফসল আমাদের দেশে উৎপাদনের এই নজির সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। এটি বাণিজ্যিক কৃষির বিবেচনায় যেমন দারুণ আশাব্যঞ্জক এক বিষয়, পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত খাদ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রেও দারুণ এক বৈচিত্র্যময় ব্যাপার। এখন পুষ্টিগুণ, স্বাদ কিংবা শৌখিনতার হিসাবে যেকোনো সবজি ফসলই আমাদের খাবারের টেবিলে নিয়ে আসা আর কঠিন কিছু নয়। অন্যদিকে সারা দেশেই বিদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ বাড়ছে। বাড়ছে বিদেশি সবজির চাহিদাও। এই বর্ধিত চাহিদার অনেকটাই জোগান দিচ্ছেন অভির মতো তরুণ কৃষকেরা। তাঁরাই মূলত কৃষির এই নতুন ধারার মহানায়ক।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষিকে ঘিরেই রচিত হওয়ার কথা ছিল আমাদের সবকিছু। বিশেষ করে আমাদের নদীবিধৌত উর্বর মাটিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় করার কথা ছিল প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। রপ্তানি আয়কে কেন্দ্র করে আমাদের কৃষি সাজানো হয়নি। তবে বাংলাদেশের তরুণ কৃষকেরা নিজ দায়িত্বেই হেঁটে চলেছেন বন্ধুর পথ। বাংলাদেশের কৃষিতে সংযোজন করেছেন আধুনিক প্রযুক্তি থেকে শুরু করে উচ্চমূল্যের নানান ফল-ফসল। আমাদের বাংলাদেশের কৃষির যে অগ্রযাত্রা, সেটুকু এগিয়ে নেওয়ার পেছনে এককভাবে কৃষকের অবদান অনেক বড়। নিজস্ব উদ্ভাবনী ক্ষমতায় বাংলাদেশের কৃষিতে কৃষক যুক্ত করেছেন নতুন নতুন ধারা।
২০১২ সালে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ভারতের সবজি উৎপাদন নিয়ে একটা প্রতিবেদন পড়েছিলাম। সে সময় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুতে ইউরোপে সবজি রপ্তানির একটা সরকারি প্রজেক্ট চলছিল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শর্ত মেনে রাজ্যের কৃষকদের তালিকা করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল মানসম্মত সবজি উৎপাদনের জন্য। হয়তো এরই প্রতিফলন ঘটেছে ভারতের সবজি চাষে। এসেছে বিপ্লব। সতেজ সবজি উৎপাদন করে পৃথিবীতে চীনের পরবর্তী স্থানটি দখল করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে দখল নিয়েছে ইউরোপের সবজিবাজারেরও অনেকখানি।
ফল-ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন আর দেশ-কালের ভেদাভেদ থাকছে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উৎকর্ষের যুগে সব দেশেই ফলছে সব রকমের ফল-ফসল। একইভাবে মানুষের পুষ্টি চাহিদার প্রয়োজনে সবজি ফসলের ক্ষেত্রেও এসেছে এই বৈচিত্র্য। শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল-ফসলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন আর তেমন প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। একসময় বিদেশি সবজির চাহিদা ছিল অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁয়। এখন জীবনব্যবস্থার নানামুখী উন্নয়নের সুবাদে অভিজাত ও পুষ্টিসচেতন পরিবারগুলোতেও বিদেশি সবজির চাহিদা তৈরি হয়েছে। এই চাহিদা পূরণের জন্য দেশের অনেক স্থানেই শুরু হয়েছে বিদেশি সবজির আবাদ। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বগুড়ার শিবগঞ্জের বুজরুক শোকড়া গ্রামের আনছার আলীর কথা। তিনি ইউরোপের বিভিন্ন জনপ্রিয় সবজি আবাদে দেশের মধ্যে প্রথম ব্যাপক সাড়া জাগান। ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’-এর একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছিলাম তাঁর গল্প। সেই আনসার আলীর প্রতিবেদন অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায় সাভারের এক তরুণের। নাম কুব্বাত হোসাইন অভি। বয়স ৪০ হবে। সাভারে প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর তাঁর স্বপ্নের চাষবাস। না, দেশীয় কোনো সবজি নয়। সেখানে আবাদ হচ্ছে ক্যাপসিকাম, চেরি টমেটো, ক্যাবেজ, রেডবিট, সেলেরি, চায়নিজ ক্যাবেজ, বেবি কর্ন, সুইট কর্ন, নীরা লিফ, ব্রকলিসহ নানা রকমের বিদেশি সবজি। ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তর তাঁর কৃষিজগৎ।
বাবা মারা যাওয়ার পর কী করবেন, কীভাবে সংসারের হাল ধরবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। আনসার আলীর প্রতিবেদনটা দেখে সাত-পাঁচ না ভেবে দুই বিঘা জমি দিয়ে শুরু করলেন বিদেশি সবজির আবাদ। না, কৃষিতে আসার অভির এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। ১৫-১৬ বছরে তাঁর এই বিদেশি সবজি আবাদের এলাকার পরিধি পৌঁছে গেছে ২০০ বিঘায়। এসব খেতে ফলছে ২৫ থেকে ৩০ রকমের বিদেশি সবজি।
বিস্তীর্ণ আবাদি খেতের ২০ বিঘা নিজের, বাকি জমি অভির লিজ নেওয়া। দক্ষিণ ভারতীয়দের অন্যতম সালাদ কারিপাতা, স্যুপকাত, লেমন গ্রাস। অনেকটা জায়গাজুড়ে এসবের আবাদ চলছে। অভি জানালেন, ভোক্তার চাহিদা ও লাভের অঙ্ক মাথায় রেখে তিনি মৌসুমভেদে সবজি আবাদ করেন। একটা অংশে গড়ে তুলেছেন অ্যাভোকাডোর বাগান। ৯-১০ বছর আগে ১০টি গাছ রোপণ করা হয়েছিল। সবগুলো গাছেই ফুল আসতে শুরু করেছে। দেখতে অনেকটাই আমের মুকুলের মতো। নতুন নতুন সবজি চাষ করে অভি যেমন নিজের ভাগ্য পাল্টেছেন, তেমনি পরিবর্তন করেছেন এলাকার চিত্রও। তাঁর দেখাদেখি অনেকেই বিদেশি সবজির চাষ শুরু করেছেন। তাঁর গ্রামের নামটিই বদলে গেছে। হয়ে গেছে বিদেশি সবজির গ্রাম।
অভির খেতে-খামারে দল বেঁধে কর্মীরা পেঁয়াজপাতা বা ওনিয়ন লিফ নিয়ে কাজ করছেন। জানা গেল, ওনিয়ন লিফ, ডিল লিফ, স্যালারি লিফ, আইসবার্গ লেটুস পাতা বছরের সব সময় চলে। এ জন্য বছরব্যাপী সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে উৎপাদন করা হচ্ছে চারাও। মাঠের সব সবজি এনে স্তূপ করা হয় অভির বাড়ির আঙিনা ও আশপাশের খোলা জায়গায়। তারপর বাছাই ও প্যাকেটজাত করে পাঠানো হয় বাজারে। খামারের উচ্ছিষ্ট সবজি ব্যবহার হচ্ছে গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে। ছোট আকারে গবাদিপশু লালনপালনও শুরু করেছেন তিনি।
উৎপাদিত সব সবজি নিয়মিত সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
তবে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, খুলনায় বেশি চলে। প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার সবজি বাজারজাত হয়। বছরের হিসাবে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার সবজি বাজারজাত করেন কুব্বাত হোসেন অভি। সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০-৫০ শতাংশ লাভ থেকে যায়। অভি বলেছেন, জেনে-বুঝে কাজ করলে, শ্রম ও নিষ্ঠায় যুক্ত হলে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশি সবজির চাষ দারুণ এক অনুশীলনের খাত হয়ে উঠতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়েছে সবজি উৎপাদকদের চিরাচরিত সংকট হাতবদলের খেলা। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। আবার পাশের দেশ থেকেও আমদানি করা সবজি বাজারে তারল্য তৈরি করে। এ জন্য নতুন নতুন ফল-ফসল কিংবা সবজির চাহিদা সৃষ্টি হলেও উৎপাদন বাড়ানোর সাহস পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। অভি মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে দরকার সরকারের আমদানি নীতিমালায় আরও পরিবর্তন আনা।
আমাদের দেশের সবজি এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। তবে বিদেশি সবজি আমাদের দেশ থেকে এখনো রপ্তানি শুরু হয়নি। অথচ মানসম্মত উৎপাদন আর প্যাকেজিং করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। দরকার শুধু বিশুদ্ধ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাজারজাত নীতিমালা অনুসরণের ক্ষেত্রে কৃষকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবারই আন্তরিকতা। অভির মতো তরুণ কৃষকদের নতুন সব কৃষি উদ্যোগের মাধ্যমেই বাংলাদেশের কৃষি যেমন পাচ্ছে নতুন নতুন ধারা, তৈরি হচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ বাজার, সেই সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তাদের সামনে খুলে যাচ্ছে অপার সম্ভাবনার নতুন খাত।
শুধু সাভার নয়, বিদেশি সবজির চাষ প্রথম শুরু হয়েছিল যে বগুড়ার মাটিতে, সেখানে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। ইউরোপীয় সবজি চাষ করে ভালো আয় করছেন কৃষকেরা। ইউরোপের শীতপ্রধান অঞ্চলের সবজি ফসল আমাদের দেশে উৎপাদনের এই নজির সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। এটি বাণিজ্যিক কৃষির বিবেচনায় যেমন দারুণ আশাব্যঞ্জক এক বিষয়, পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত খাদ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রেও দারুণ এক বৈচিত্র্যময় ব্যাপার। এখন পুষ্টিগুণ, স্বাদ কিংবা শৌখিনতার হিসাবে যেকোনো সবজি ফসলই আমাদের খাবারের টেবিলে নিয়ে আসা আর কঠিন কিছু নয়। অন্যদিকে সারা দেশেই বিদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ বাড়ছে। বাড়ছে বিদেশি সবজির চাহিদাও। এই বর্ধিত চাহিদার অনেকটাই জোগান দিচ্ছেন অভির মতো তরুণ কৃষকেরা। তাঁরাই মূলত কৃষির এই নতুন ধারার মহানায়ক।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫