Ajker Patrika

মানিকগঞ্জে কমছে কৃষিজমি

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৪২
মানিকগঞ্জে কমছে কৃষিজমি

মানিকগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমি। ফসলের মাঠজুড়ে গড়ে উঠছে নতুন বসতি, কারখানা, ইটভাটা ও নানা প্রতিষ্ঠান। জেলায় আবাসন ও বাণিজ্যিক কাজে ফসলি জমির ব্যবহার অত্যধিক মাত্রায় পৌঁছেছে।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশের মধ্যে কক্সবাজার, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জ জেলায় কৃষিজমির বাণিজ্যিক ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। কৃষিজমি সুরক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় কমছে জমি। বড় ধরনের বিপর্যয়ের আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঘিওর উপজেলার কালাচাঁদপুর গ্রামের কৃষক মুনছের আলীর তিন ছেলে। বাড়ির ভিটা ছাড়াও তাঁর ফসলি জমি ছিল ৯০ শতাংশ। ছেলেরা বিয়ে করেছেন। ছোট্ট বাড়িটিতে এখন আর সংকুলান না হওয়ায় দুই ছেলে করেছেন আলাদা বাড়ি। বসতির জন্য অন্য কোনো জমি না থাকায় বাধ্য হয়েই ঘর তুলেছেন ফসলি জমিতে। ফসলের হাসির বদলে এখন সে জমিতে টিনের চাল।

তবে বসতি স্থাপন ছাড়া জেলায় কৃষিজমি কমে যাওয়ার মূল কারণ ইটভাটা। জেলার ৭ উপজেলায় দেড় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। সাধারণত ফসলি জমিতেই নির্মাণ করা হয় ইটভাটা। আবার ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। এভাবে মাটি কাটায় ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে খাল কিংবা পুকুরে।

সরজমিন দেখা গেছে, বেশির ভাগ ইটভাটাই সরাসরি কৃষিজমিতে স্থাপন করা হয়েছে। ভাটা নির্মাণ ও পরিচালনা আইনকে পাশ কাটিয়ে প্রভাবশালীরা আবাসিক এলাকায় তিন ফসলি জমিতে গড়ে তুলেছে ভাটাগুলো। প্রতিদিন প্রায় চার শ মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো হচ্ছে এসব ভাটায়। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও প্রাণিজগতে।

ঘিওর ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সিঙ্গাইরে ৫০টি, ঘিওরে ১৬টি, দৌলতপুরে ছয়টি, সাটুরিয়ায় ১৮টি, মানিকগঞ্জ সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪০টি, শিবালয়ে ২৫টি ইটভাটা চালু রয়েছে। এসব ভাটায় ইট তৈরির প্রধান উপকরণ বিপুল পরিমাণ মাটির জোগান দিতে প্রতিবছরই ৪০০-৫০০ বিঘা তিন ফসলি জমি জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে।

সিঙ্গাইরের বলধারা ইউনিয়নের উত্তর পারিল গ্রামের মো. আসলাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘হাইকোর্টে আমার দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বলধারা জলিল কোম্পানির মালিকানাধীন সফর ব্রিকস নামের ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে মালিকপক্ষ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাটাটি চালু রেখেছে।’

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দিন দিন বাড়ছে মানুষ, কমছে কৃষিজমি। ফলে অব্যাহতভাবে আবাদি জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে বসতবাড়ি, স্থাপনা। মানুষের নিত্যনতুন আবাসন, রাস্তাঘাট আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে কৃষিজমিতেই। এ ছাড়া যত্রতত্র ইটভাটা নির্মাণ করায় কৃষিজমি পরিণত হচ্ছে স্থায়ী অনাবাদি জমিতে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি দীপক কুমার ঘোষের মতে, কৃষিজমি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে প্রধানত কয়েকটি কারণে, সেগুলো হলো, কৃষকের দূরদর্শী জ্ঞানের অভাব, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, ভূমিখেকো ও অসাধু ইটভাটার মালিকদের আগ্রাসন।

মানিকগঞ্জ জজকোর্টের আইনজীবী মাহবুব আলম রাসেল বলেন, কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন অনুযায়ী, কৃষিজমি নষ্ট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটখোলা এবং অন্যান্য অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এই আইন অমান্য করলে কারাদণ্ড, ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে যাঁদের ৩ থেকে ৫ শতাংশ কৃষিজমি আছে, তাঁরা অপরিহার্য ক্ষেত্রে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে আইনের বিধান অনুযায়ী ভূমি জোনিং মানচিত্র অনুযায়ী তা করতে পারবেন।

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, দেশে প্রতিদিন শতকরা প্রায় ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। মানিকগঞ্জে তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা, বসতবাড়ি ও শিল্পকারখানা তৈরি হওয়ায় আবাদ বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। এ ছাড়া মাটির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) বিক্রির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ রানা বলেন, ‘বিষয়টি আমি এসি ল্যান্ড ও ইউএনওদের গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত