Ajker Patrika

আফজাল ও তাঁর ভাইয়ের সাম্রাজ্য নিকলী-বাজিতপুরে

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৭: ৪৫
আফজাল ও তাঁর ভাইয়ের সাম্রাজ্য নিকলী-বাজিতপুরে

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের (নিকলী-বাজিতপুর) সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আফজাল হোসেন। ওই আসন থেকে টানা চারবার এমপি হন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ভাই বলে সম্বোধন করতেন। এই ভাইয়ের হাত ধরেই রাজনীতিতে আগমন আফজালের। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে আফজাল হোসেনের আওয়ামী লীগের সদস্যপদ পর্যন্ত ছিল না। দলের একটা বড় অংশের বিরোধিতার মধ্যেই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

জনশ্রুতি রয়েছে, আফজাল সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ঘরের বাজার করে দিতেন। জুতাও এগিয়ে দিতেন। ধীরে ধীরে তিনি আবদুল হামিদের আস্থা অর্জন করেন। আর আবদুল হামিদও চেয়েছিলেন হাওর এলাকা বাজিতপুর ও নিকলী উপজেলার কর্তৃত্ব তাঁর বলয়ে থাকুক। তাই তিনি বেছে নিয়েছেন আফজালকে। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ‘ম্যানেজ’ করে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নেন আফজাল হোসেন। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনেও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সহযোগিতায় মনোনয়ন বাগিয়ে নেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আফজাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১২ সালের জুন থেকে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন।

সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে আফজাল হোসেন জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এভাবে আফজাল গত ১৫ বছরে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আফজালের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সহযোগী হয়ে ওঠেন তাঁর ছোট ভাই আনোয়ারা হোসেন আশরাফ। ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে পরের বছর পৌরসভা নির্বাচনে আফজাল হোসেন তাঁর ভাইকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। এলাকার অনেকের অভিযোগ, আনোয়ার হোসেন বাজিতপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নিজ দলের প্রতিপক্ষ ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা, খুন, নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে খাসজমি, দোকানপাট, বাড়িঘর, জলমহাল, বালুমহাল দখলের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। মানুষকে মামলায় হয়রানি ও মাদক কারবারের অভিযোগও রয়েছে।

পরিস্থিতি এতই ভীতিকর ছিল যে কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলতেও সাহস পেত না। যারা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে, তারাই হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে। 

দখলের থাবা সর্বত্র
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই ভাই মিলে বাজিতপুর উপজেলায় সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জমি দখলে নিয়ে মার্কেট নির্মাণ, বেঙ্গলা নদী দখল, নির্বাচনী এলাকার অনেক বাজারে নামকাওয়াস্তে ইজারা নির্ধারণ করে দখল, বাজিতপুরের নোয়াপাড়া গ্রামে ৭০ শতাংশ দখল করা জমিতে বাড়ি নির্মাণ, ভাগলপুর ফায়ার সার্ভিসের পাশে ২৯ শতাংশ জমি, সিনেমা হল রোডে একটি দোকান, বসন্তপুর মৌজায় সিনেমা হলের সামনে সরকারি জমিতে পাঁচটি দোকান, দড়িঘাগটিয়া মৌজায় সিনেমা হলের প্রায় ১৫ শতাংশ জমি, বাজিতপুর বাজারে নাপিত মহলের পুকুর, বাজিতপুর পৌরসভার দড়িঘাগটিয়া মৌজায় প্রায় দুই একর জমি দখল এবং বসন্তপুর মৌজায় প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে তিনতলা মার্কেট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দক্ষিণ পাশে প্রায় দুই একর জমি, নান্দিনা আলিয়াবাদ মৌজায় ব্যাপারীপাড়ার প্রায় ২০ শতাংশ জমি, তাতলচর মৌজায় বাজিতপুর দিলালপুর রাস্তার পশ্চিম পাশে প্রায় ৬০ শতাংশ জমি, গাজীরচর মৌজায় প্রায় আট একর জমি, শশেরদীঘি মৌজায় প্রায় ১০ একর ধানি জমি, বাজিতপুর মৌজায় মতুরাপুর গ্রামের পূর্ব পাশে ২০ শতাংশ জমি, দীঘিরপাড় মৌজায় মসজিদের ফেরিঘাটের পাটুলীর উত্তর পাশে ২০ শতাংশ জায়গা দখলে নিয়ে দোকান ও ঘর নির্মাণ করেছেন।

এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনের ঠিকাদারির দায়িত্ব দিয়ে মানহীন কাজ, বিল-হাওর নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার, বেঙ্গলা চরবাদা, কইয়া খায়রা, মাইজচর, বাহেরবালী, হুমাইপুর, ঘোড়াউত্রা নদী জলমহালের ইজারাদারের থেকে ৫০ শতাংশ হারে ভাগ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌরসভা এলাকায় ২০ শতাংশ জমি দখল করে সাততলা মার্কেট (আফজালের নিজের বাসভবন), বাজিতপুরে নিজের গ্রাম দিলালপুরে তিনতলার সুরম্য অট্টালিকা এবং বাজিতপুর পৌরসভা ডাকবাংলোর সামনে দুই মৌজায় ২৭৫ শতাংশ জমি দখল করেন।

২০১৭ সালের ১৩ মার্চ জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে এমপি ও মেয়রের অনুসারীদের হাতে মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল মিয়া নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। ভাগলপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসের কাছে নিজ বাড়িতে পরিবারের লোকজনের সামনে পিটিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধার দুই হাত ও এক পা ভেঙে দেওয়া হয়। তাঁর ২৯ শতাংশ জমিও দখল করে নেন দুই ভাই। ভুক্তভোগী বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘আমার জায়গা দখল করছে। আমার জায়গায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার গাছ ছিল, ওইগুলোও নিয়ে গেছে। আমার জায়গার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।’

বাজিতপুর পৌর এলাকার সিনেমা হল সড়কে একটি দোকানের মালিক চঞ্চল। তাঁর দোকানও দখল করে নেন আফজাল ও তাঁর ভাই আশরাফ। ভুক্তভোগী চঞ্চল বলেন, ‘আমার দোকান প্রায় ৩ বছর তালা দিয়ে রাখে। কত চেষ্টা করলাম কিন্তু দোকানটা উদ্ধার করতে পারিনি তখন। ৫ আগস্টের পর দোকানটা দখলমুক্ত করি।’ 

নামে-বেনামে যত সম্পদ
অন্যদিকে ৬/৪, সেগুনবাগিচায় হাসিনুর গ্রিন হাউসে দুটি ফ্ল্যাট, ৯৫, আগামসিহ লেনে পাঁচতলা ভবন, লালমাটিয়ায় ফায়ার ব্রিগেডের পেছনে স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট ও বংশালে সাততলাবিশিষ্ট দুটি বাড়ি। দক্ষিণ বনশ্রীতে সাততলা বাড়ি, উত্তরায় সাত কাঠার প্লট, কেরানীগঞ্জ ব্রিজের ঢালে ছয় কাঠা জমির ওপর তৈরি বাড়ি, আফতাবনগরের সি ব্লকে, রাজউক ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের ১৩/এ রোডে ও পূর্বাচলে পাঁচ কাঠার একটি করে প্লট, সিদ্দিকবাজারে ছয়তলার বাড়ি, দক্ষিণ বনশ্রীতে ছেলে সাঈদ হোসেনের নামে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করেছেন আফজাল হোসেন। 
এ ছাড়া মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে তিনি গড়েন হুন্ডির রমরমা ব্যবসা। এভাবে তিনি কত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তার সঠিক হিসাব না থাকলেও বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, আফজাল ও তাঁর আত্মীয়স্বজনের নামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে আফজালের নামে সিঙ্গাপুরের অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি-গাড়ি ও মালয়েশিয়ায় একাধিক বাড়ি-গাড়ির খোঁজ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, রাজধানী ঢাকায় ২০২৩ সালের ৯ মে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে মো. কামাল হোসেন রিপন নামের এক ব্যবসায়ী সংবাদ সম্মেলন করে আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। আফজাল হোসেন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দোকান বরাদ্দ দিয়ে এই টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী। 

দুদকে অভিযোগ
২০১৯ সালের শেষের দিকে ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে আফজালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আফজালের সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের ক্যাসিনো-কাণ্ড ও বড় আকারের দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী দলকে।

আফজালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ও বেআইনি কার্যক্রম চালিয়ে শতকোটির বেশি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। জেলার বাজিতপুর-নিকলী আসনে টানা তিনবার এমপি হয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি, অবৈধভাবে নদীর বালু উত্তোলন, জমি দখলসহ নানাভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। নিজের এলাকার বাইরে রাজধানী ও বিদেশেও রয়েছে তাঁর সম্পদ।

ওই সময় দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের সদস্যরা আফজালের সঙ্গে হোটেল রাজমণি ঈশা খাঁ, ফুয়াং ক্লাব, পুরান ঢাকার কয়েকটি বাড়িতে নিয়মিত আসর বসাতেন। আফজাল রাষ্ট্রের শীর্ষ কারও নাম ভাঙিয়ে অবাধে অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। এ কারণে ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের সদস্যরা একসময় মনে করতেন, আসরে আফজাল থাকলে ভয়ের কারণ নেই। 
ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, আফজালের ছোট ভাই এবং বাজিতপুর পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফ হঠাৎ তাঁর ব্যবসা ছেড়ে ইয়াবা কারবারে ঢুকে পড়েন। ইয়াবা কারবারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাকে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হতো, হয়রানিমূলক মামলাও করা হতো। অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের কাছে আফজাল শতকোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে আফজালের সম্পদের অনুসন্ধানে দুদকসংক্রান্ত একটি নিউজ শেয়ার দেন। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয় তাঁকে।

বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি এহসান বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে চিহ্নিত যে কটি উপজেলায় সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল, তার মধ্যে বাজিতপুর অন্যতম। তারা দুই ভাই এই রাজত্ব গড়ে তুলেছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই যে তারা করেনি।’

এসব বিষয়ে কথা বলতে সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায় এবং তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে এসব বিষয়ে কথা বলতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

দুদক জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ইকবাল হোসাইন বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা দুদক কার্যালয়ে আফজাল হোসেনের ব্যাপারে কোনো ফাইল ওপেন হয়নি। এই বিষয়ে হেড অফিস বলতে পারবে। আর তাঁর ভাই আশরাফের দুটি ফাইল ছিল। একটা হলো তাঁর সম্পদের, আরেকটা ছিল অর্থ আত্মসাতের। আশরাফের বিরুদ্ধে দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা হয়। মামলাটিতে এখনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়নি।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, আইনগত কাজ চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত