Ajker Patrika

হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী তাঁরা

সাইফুল ইসলাম, চরফ্যাশন (ভোলা)
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ০২
হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী তাঁরা

দেশি হাঁস পালন করে চরফ্যাশনের দুই শতাধিক বেকার স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজ বাড়ির আঙিনা, পতিত জায়গা কিংবা মাছের ঘের অথবা পুকুর-জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে এই হাঁস পালন করছেন বেকার যুবক ও দরিদ্র নারীরা। হাঁসের এসব খামার গড়ে ওঠায় উপজেলার অনেক বেকার ছেলে-মেয়ে এখন দেশি হাঁসের খামারে ঝুঁকছেন এবং করছেন বিনিয়োগ। বিভিন্ন এনজিও, মাল্টিপারপাস বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেকার যুবক ও দরিদ্র নারীরা গড়ে তুলেছে দুই শতাধিক হাঁসের খামার।

এসব খামারের হাঁসের মাংস ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অপরদিকে, প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হাঁসের খামারগুলো।

উপজেলার আবদুল্লাহপুর, এওয়াজপুর, আমিনাবাদ, মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, নজরুল নগরসহ চরকলমী এবং কুকরি-মুকরি ইউনিয়নে ছোট-বড় এই দেশি হাঁসের খামারগুলো গড়ে উঠেছে। শীতে অধিক হারে হাঁসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হাটবাজারে এই হাঁস ও ডিম বিক্রি করে চড়া দাম পাচ্ছেন খামারিরা।

মাদ্রাজ ইউনিয়নের খামারি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৫ বছর বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। বিদেশি কর্মস্থলে পরিশ্রম করে যে টাকা পাইনি, তা দুই বছরেই হাঁস পালন করে আয় করেছি। আমাদের দেশের বেকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অনেকেই চাকরি না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বলতে চাই, তাঁরা যেন পারিবারিক ব্যবসা বা চাষাবাদের পাশাপাশি হাঁস, মুরগি পালন অথবা মাছের চাষ করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে পৌনে দুই একর জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষের পাশাপাশি ৫ শতাধিক হাঁস পালন করি। মুনাফা ভালো হওয়ায় অল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবারও বিনিয়োগ করি। এখন আমার খামারে মাছের পাশাপাশি প্রায় ১৫০০ হাঁস রয়েছে। বাজারে ডিমের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে পাইকারদের কাছে হাঁস বিক্রয় করে অধিক মুনাফা পাচ্ছি।’

আরেক খামারি তরুণ উদ্যোক্তা সাবিনা ইসলাম বলেন, ‘আমি একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাশ করেছি। আমার বাবা একজন কৃষক। বাড়িতে বেকার থাকা অবস্থায় আমার এক আত্মীয়ের পরামর্শে আমাদের ঘরে থাকা ১০টি হাঁস পালন করি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রায় ৫০টি হাঁসের বাচ্চা কিনে আমি তা পালন করি। এখন বাড়ির উঠোনে মা ও ছোট ভাইয়ের সহযোগিতায় জালের বেড়া তৈরি করে প্রায় ৫ শতাধিক হাঁস পালন করছি। প্রতিদিন ২ শতাধিক ডিম বাজারে বিক্রি করে আমদের সংসারে সহযোগিতা করেছি।’

চর কলমি ইউনিয়নের প্রবাসী সামসুদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘দেশে একসময় স-মিলে গাছ কাটার কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে দুই বার ওমানে গিয়ে ফেরত আসি। আমার বেকারত্বের মধ্যেও ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি। ছেলেটা এখন কলেজে পড়ছে। তাকে বাড়ির পুকুরে মাচা তৈরি করে হাঁস পালনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ছেলে ও তাঁর মায়ের সহায়তায় আমাদের খামারে এখন এক হাজার হাঁস রয়েছে। হাঁস ও ডিম বিক্রি করে অনেক টাকা জমিয়েছি। প্রথমে হাঁসের ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হয়।’

জাহানপুর ইউনিয়নের জামাল মুন্সি বলেন, ‘আমার খামারে ২ হাজার হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন খালে বিলে হাঁস ছেড়ে দেই। কম পরিচর্যায় শামুক ও গুল্ম লতাপাতা ছাড়াও পুকুর জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাবার খায় হাঁসগুলো।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তালিকা অনুযায়ী চরফ্যাশনে ১৬০টি হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে অন্তত দুই লাখের অধিক হাঁস রয়েছে। যা থেকে গড়ে প্রতিদিন এক লাখ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এ উপজেলার বিভিন্ন চরে হাঁসের খামার করে অনেকেই বেকারত্ব দূর করেছেন। আমরা চাষিদের কারিগরি সহযোগিতার পাশাপাশি সব ধরনের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি, হাঁসের খামার প্রসারে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত