Ajker Patrika

কংক্রিটের জঞ্জাল লালমাটিয়ার ত্রিকোণ পার্ক

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
Thumbnail image

রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের উল্টো পাশে লালমাটিয়া ত্রিকোণ পার্ক। শর্ত ভেঙে পার্কে স্থায়ী স্থাপনা গড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পার্কটির মালিকানায় রয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (জাগৃক)। সংস্থাটির কর্তারা বলছেন, ডিএনসিসি যে কথা বলে পার্কের দায়িত্ব নিয়েছিল, এখন তারা উল্টোটা করছে। নাগরিকদের কথা না ভেবে পার্কটিকে তারা কংক্রিটের জঞ্জাল বানিয়েছে। 

জানা গেছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পার্কটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয় ডিএনসিসিকে। হস্তান্তরের সময় শর্ত দেওয়া হয়, কোনোরূপ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। এই পার্ক তৃতীয় কোনো পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানকে লিজ বা ভাড়া দেওয়া যাবে না; করা যাবে না হস্তান্তর। সাধারণ মানুষের জন্য রাখতে হবে উন্মুক্ত। আর চুক্তি নবায়ন করতে হবে তিন বছর পরপর। ডিএনসিসি চুক্তির কোনো শর্তই রক্ষা করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। 

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ত্রিকোণ পার্ককে এমনভাবে রাখা হয়েছে, এটা নিয়ে আমরাও বিব্রত। পার্ক হচ্ছে বিনোদনের জায়গা অথচ এখন সেখানে ময়লার ভাগাড় আর টয়লেট করেছে। দুর্গন্ধে কোনো মানুষের সেখানে বসার জো নেই। শর্ত ভেঙে একের পর এক পাকা ভবন তৈরি করা হচ্ছে।’ হস্তান্তরের পর আর চুক্তি নবায়ন করা হয়নি বলেও জানান তিনি। 

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর মূল সড়কের পাশ ঘেঁষে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা আকৃতির পার্কটির ভেতরে যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী পড়ে রয়েছে। পার্কটির পূর্ব পাশে রয়েছে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস)। তার পাশে দ্বিতল একটি ভবন, এর নিচতলায় পাবলিক টয়লেট আর ওপরের তলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অফিস। পার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য সম্প্রতি একতলা আরেকটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। 

জানা গেছে, সদ্য তৈরি হওয়া ভবনটি মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগ অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে। পার্কের পাশ ঘেঁষে ফুটপাতে ১১টি নার্সারি ও একটি চায়ের দোকানও রয়েছে। একটি নার্সারির মালিক মো. কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিন বছর ধরে পার্কের পাশে ব্যবসা করেন তিনি। এর জন্য প্রতি মাসে স্থানীয় ছাত্রলীগকে মাসোহারা দিতে হয়। 

স্থানীয়দের তথ্য অনুসারে, লালমাটিয়া ত্রিকোণ পার্ক নিয়ন্ত্রণ করেন মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুল হাসান রাসেল। তিনি প্রতিটি নার্সারি থেকে মাসে তিন হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। কোরবানির ঈদে পার্কে ছাগলের অবৈধ হাট বসানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, ছাত্রলীগের দখলে থাকায় সাধারণ মানুষ পার্কে প্রবেশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। 

অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুল হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সাল থেকে পার্কে বসি। তখন থেকে পরিবেশ সুন্দর। এর আগে মাদকের আখড়া ছিল। পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নার্সারি বসানো হয়েছে। মাসোহারা আদায়ের বিষয়ে আমার জানা নেই।’ অবৈধ পশুর হাটের বিষয়ে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, অনেক আগে থেকেই এখানে ছাগলের হাট বসে, একসময় গরুও বিক্রি হতো। 

ত্রিকোণ পার্ক যেভাবে কংক্রিটে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, তা পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, একদিকে বর্জ্য, আরেক দিকে পার্ক—সার্বিকভাবে এটা পার্কের চরিত্র হারিয়েছে। ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা হারানোর পেছনে পার্কে অপরিকল্পিত উন্নয়নও অনেকাংশে দায়ী।

সার্বিক বিষয়ে ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোতাকাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পার্কের পাশে এসটিএস ও পাবলিক টয়লেট নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনেই করা হয়েছে। পার্কের মধ্যে ছাত্রলীগের অফিস ও অবৈধ নার্সারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবৈধ দোকান উচ্ছেদে নোটিশ দিয়েছি। আমরা ব্যবস্থা নেব, পার্কের অফিস অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেব না।’ এর জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরের (৩১ নম্বর ওয়ার্ড) সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত