Ajker Patrika

‘বোনাস’ ফসল সরিষা আবাদে খুশি কৃষক

হিরামন মণ্ডল সাগর, বটিয়াঘাটা
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ১১
‘বোনাস’ ফসল সরিষা আবাদে খুশি কৃষক

ফসলের মাঠে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। এর সঙ্গে মাঠে বইছে মৌমাছির গুঞ্জণ। এই সরিষার ফুলে যেন দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। এ দৃশ্য খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার। এর ৭টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে সরিষার চাষাবাদ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বটিয়াঘাটা কৃষি অধিদপ্তর।

এবার সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে উপজেলার জলমা ইউনিয়নে। আমিরপুর ইউনিয়নে সরিষা চাষ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। বাম্পার ফলনে চাষিরাও খুশি। দুটি ফসলের মাঝে কৃষকেরা সরিষার ফলনকে বোনাস হিসেবে দেখছেন। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো ধান আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

এক সময় কৃষকেরা আমন ধান কাটার পর জমি ফেলে রাখতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই রীতি পাল্টেছে। আমন ধান কাটার পরপরই কৃষিজমিতে শুরু হয় সরিষার চাষ। মাত্র ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারেন সরিষাচাষীরা।

বারোআড়িয়া এলাকার কৃষাণী অনিতা রানী বিশ্বাস বলেন, আমি ৪ বিঘা জমি হারি (বন্ধক) নিয়ে চাষাবাদ করি। আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন আমার স্বামী নিত‍্যরঞ্জন বিশ্বাস। সরিষার পাশাপাশি তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়াসহ সব ধরনের সবজি চাষ করেন তিনি। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও ভালো চাষাবাদ করার আশা ব্যক্ত করেন অনিতা রানী।

জলমা এলাকার চাষি অমলেন্দু বিশ্বাস জানান, দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে দেড় হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে। সরিষার ফুলে খেত ভরে গেছে। ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় মণ সরিষা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

তেঁতুলতলা গ্রামের কৃষক সোহরাব মুন্সী বলেন, ধান আবাদে কোনো লাভ নেই, উৎপাদন খরচই উঠে না। সরিষা আবাদে খরচ কম, লাভ বেশি। এক থেকে দুই বার সেচ দিলেই চলে। বাজার দর ভালো হলে এক মণ সরিষা ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ কারণে আমি আর ধান আবাদে যাচ্ছি না। এক মণ ধান এক হাজার টাকা। আর এক মণ সরিষার মূল্য তিন হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিন ঢালী বলেন, দেশের অন্যতম একটি তৈল ও মসলা জাতীয় খাদ্যের নাম সরিষা। সরিষা চাষ খুবই লাভজনক। অল্প সময় ও পুঁজিতে কৃষকেরা অধিক লাভবান হয়। তাই অধিকাংশ কৃষক এখন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করতে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায়, তাহলে বিঘাপ্রতি ফলন হয় ৫ থেকে ৬ মণ।

এ বিষয়ে উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সরদার আব্দুল মান্নান বলেন, কৃষকদের সরিষার বীজ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেছে কৃষি অফিস। এবার উপজেলায় মোট ৭৬ হেক্টর ৫৭০ বিঘা জমিতে রবি মৌসুমের সরিষা চাষাবাদ করা হয়েছে। বিঘাপ্রতি জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। লাভ হয় দশ হাজার টাকা।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সরিষা মূলত একটি মসলা জাতীয় ফসল। সরিষা চাষে স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষক অধিক ফলন পান।

তিনি আরও বলেন, আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সব সময় কৃষকদের পাশে থেকে তাদেরকে পরামর্শ দেন ও সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। আশা করছি প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এবার বটিয়াঘাটা উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত