Ajker Patrika

১০ উপজেলার ৯টিতেই নেই পশুচিকিৎসক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
১০ উপজেলার ৯টিতেই নেই পশুচিকিৎসক

নেত্রকোনায় ১০ উপজেলার পশু হাসপাতালের মধ্যে মাত্র একটিতে রয়েছে পশুচিকিৎসক বা ভেটেরিনারি সার্জন। বাকি ৯টিতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো পশুচিকিৎসক নেই। এ ছাড়া মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের দুটি গাড়ি জেলা সদরে থাকলেও পশুচিকিৎসক না থাকায় সেগুলোও কোনো কাজে আসছে না। ফলে গবাদিপশুর চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিসহ সাধারণ কৃষকেরা।

অন্যদিকে, জেলার একমাত্র মদন উপজেলা পশু হাসপাতালে একজন পশুচিকিৎসক থাকলেও কয়েক মাস ধরে ওই কার্যালয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) নেই। ফলে পশুচিকিৎসককেই ওই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পশুর স্বাস্থ্যসেবা।

তবে শিগগির ভেটেরিনারি সার্জন পদে বড় ধরনের নিয়োগ হবে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াহেদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১০ উপজেলায় পশুচিকিৎসক (ভেটেরিনারি সার্জন) আছেন মাত্র একজন। তিনিও আবার ইউএলওর অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। এতে জেলার পশু চিকিৎসার খুব খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে শিগগির দেশে ১২৭ জন ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগ হবে। জোর চেষ্টা চালাব যেন আমাদের ভেটেরিনারি সার্জনের সবগুলো পদ পূরণ করা যায়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও কথা বলব। তাঁকে এই অবস্থার কথা জানাব।’

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশে গবাদিপশুর উৎপাদন বেড়েছে। লাভজনক হওয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকার গরুর খামার করে লাভবান হচ্ছেন। হাওর অঞ্চল হওয়ায় নেত্রকোনায় কৃষির আবাদ বেশি। ফলে সব কৃষকেরই গরু রয়েছে। বর্তমান সময়ে গবাদিপশুর নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই এসব রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দরকার। এ ছাড়া গাভি পালন করে এর দুধ বিক্রি করে সংসারের খরচসহ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগান, এমন অনেক মানুষ আছেন। ওই গাভিটাই তার একমাত্র অবলম্বন। ভালো চিকিৎসার অভাবে পরিবারের একমাত্র অবলম্বন শেষ হয়ে যেতে পারে।’

জানা গেছে, পশুচিকিৎসক না থাকায় জেলায় খামারি ও সাধারণ কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। সরকারিভাবে চিকিৎসা না পেয়ে বেশি খরচে গ্রাম্য পশুচিকিৎসক দিয়েই গবাদিপশুর চিকিৎসা করাচ্ছেন খামারিরা। এতে যেমন খরচ বাড়ছে, তেমনি নানা ভুল চিকিৎসায় পশু মারা যাচ্ছে।

বারহাট্টা উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের কৃষক মুনসুর আহমেদ বলেন, ‘স্বল্প ট্রেনিং করা গ্রাম্য পশুচিকিৎসকদের দিয়ে কোনো রকম গবাদিপশুর চিকিৎসা করাচ্ছি। এতে একদিকে চিকিৎসা ব্যয় বেশি হচ্ছে, অন্যদিকে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে না। পশু হাসপাতালে ভেটেরিনারি সার্জন না থাকায় পরামর্শ ও সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকার খামারি ও কৃষকেরা।’ তিনি দ্রুত ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগের দাবি জানান।

মোহনগঞ্জ উপজেলার গরুর খামারি আলী নাজমুল হুদা বলেন, ‘মোহনগঞ্জে ভেটেরিনারি সার্জন না থাকায় আমরা খুবই সমস্যায় আছি। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজেই আপাতত এলাকার গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এতে কিছুটা ভোগান্তি লাগব হচ্ছে। হাওরাঞ্চল হওয়ায় এলাকার প্রত্যেকের গবাদিপশু রয়েছে। এ ছাড়া লাভজনক হওয়ায় এলাকায় খামারির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে নতুন নতুন নানা রোগে গরু আক্রান্ত হচ্ছে। ভেটেরিনারি সার্জন ছাড়া এসব রোগের ভালো চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত