Ajker Patrika

প্রাচীন গ্রাম বটগোহালী

সৈকত সোবাহান, বদলগাছী (নওগাঁ)
প্রাচীন গ্রাম বটগোহালী

পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুরের নাম রয়ে গেছে আজও। কিন্তু সময়ের ব‍্যবধানে হারিয়ে গেছে পাহাড়পুরের পাশের বটগোহালী গ্রামের নাম। এটি শুধু গ্রামের নাম ছিল না, ছিল মৌজারও নাম। কালে কালে সে গ্রাম ও মৌজার নাম বটগোহালী থেকে হয়েছে গোয়ালভিটা।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, পাহাড়পুর বিহার থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি প্রাচীন গ্রামের নাম ছিল বটগোহালী। এ গ্রামে ছিল একটি প্রাচীন জৈন বিহার। পাহাড়পুর বিহার খননকালে একটি পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। এই লিপি থেকে জানা যায়, এক ব্রাহ্মণ দম্পতিকে বটগোহালীতে অবস্থিত একটি জৈন বিহারের ‘অইত’ পূজা ও একটি বিশ্রামাগারের জন্য কিছু জমি দান করা হয়েছিল। সেই জৈন বিহারের প্রধান ছিলেন বিখ্যাত জৈন গুরু গুহ নন্দী। সেই মন্দিরে তাঁর বহু শিষ্য-প্রশিষ্য বসবাস করতেন বলে জানা যায়। খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতকে জৈন বিহারটি যে একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ছিল, পাণ্ডুলিপিটি থেকে পাওয়া যায় সে তথ্য। এখনো গোয়ালভিটা নামের গ্রামটির যেকোনো জায়গার মাটি খুঁড়লে প্রাচীন ইট পাওয়া যায়। এই গ্রামে এখনো রয়েছে কালো পাথর। কালের বিবর্তনে সেই গ্রামে আজ প্রাচীন ইট কিংবা কালো পাথর থাকলেও নেই সেই আদি নাম।

বদলগাছীর পাহাড়পুরের উত্তর দিকে অবস্থিত গোয়ালভিটা গ্রামে বাঁশঝাড়ের নিচে ইটের প্রাচুর্য দেখা যায়। প্রাচীন বটগোহালী আর বর্তমানের গোয়ালভিটা গ্রামের মানুষেরা জানিয়েছেন কিংবদন্তির বিভিন্ন গল্প। এ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফা বলেন, ‘আজকের গোয়ালভিটা গ্রামটিই যে বটগোহালী গ্রাম সেটা শুনেছি।’ এখানে একটি জৈন মন্দির থাকার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রামের মাটির নিচে এখনো প্রচুর ইট। সেগুলো হয়তো সেই জৈন মন্দিরের ইট।

গোয়ালভিটা গ্রামের মোস্তফা বলেন, ‘বটগোহালী গ্রামের নাম আমি প্রথম শুনলাম। তবে এই গ্রামের মাটির নিচে শুধু ইট আর ইট। বেশি দূর খোঁড়া যায় না। অনেকেই এই ইট দিয়ে বাড়ির প্রাচীর করেছে।’ গ্রামের ষাটোর্ধ্ব জহুরুল জানিয়েছেন, তিনিও শুনেছেন এ গ্রামের নাম ছিল বটগোহালী। পরে কবে নাম পরিবর্তন করে গোয়ালভিটা হয়েছে সেটা তিনি জানেন না।

প্রাচীন বটগোহালী গ্রামের বিষয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক রাজ্জাক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, পাহাড়পুর খননকালে পঞ্চম আব্বাসীয় খলিফা হারুন অর রশিদের শাসনকালের মুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল। সেই মুদ্রা থেকে ধারণা করা যায়, বাগদাদের সঙ্গে পাহাড়পুরের যোগাযোগব্যবস্থা ছিল। সেই সময় মানুষ নদী ও সমুদ্রপথে যাতায়াত করত। গ্রামে একটি বিল আছে। সে বিল সেই আমলের নূর নদী। এই নূর নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়ে বাগদাদে যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল।

গোয়ালভিটা বা প্রাচীন বটগোহালী গ্রাম নিয়ে এখন শুধু কিংবদন্তির গল্পই শোনা যায়। সে গল্পে কখনো আব্বাসীয় খলিফাদের কথা আসে, কখনো আসে সোনার কালো পাথরের গল্প। বিষয়টি যা-ই হোক না কেন, ইতিহাসবিদদের ধারণা, প্রাচীন বটগোহালীই বর্তমানের গোয়ালভিটা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত