Ajker Patrika

প্রকল্প বাড়ে, কাজ শেষ হয় না

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ১১: ৫৫
প্রকল্প বাড়ে, কাজ শেষ হয় না

বাড়ির পাশের ছোট মাঠে গা এলিয়ে দেওয়া কিংবা বন্ধুরা মিলে ফুটবল খেলা—এমন দুরন্ত শৈশবের গল্প শোনাচ্ছিলেন ফজলুল বারী। মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় পরিবার নিয়ে পাকিস্তান আমল থেকেই বসবাস করে আসছেন বারী। বাসার পাশে থাকা মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক খেলার মাঠ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় আক্ষেপ করে ফজলুল বারী বলেন, ‘আগে আমাদের সোনালি শৈশব ছিল। বাসার পাশে খেলাধুলার জন্য অনেক খালি জায়গা ছিল। এখন জায়গাগুলো ইট-পাথরের জঞ্জাল হয়ে গেছে।’ বারী বলেন, ‘রাজধানীর দু-একটি জায়গায় যে পার্ক ও খেলার মাঠ রয়েছে, সেখানেও উন্নয়নের নামে বছরের পর বছর তালা ঝুলছে। সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারছে না। আমাদের সন্তানেরা খেলাধুলা বিমুখ হচ্ছে, আসক্ত হচ্ছে মোবাইল গেমসে।’

মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান (হাবু) বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজের নকশায় মাঠের জায়গা ছোট করা হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে মাঠটি বন্ধ। কাজ কবে শেষ হবে, তা-ও বলতে পারছি না।’ উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বেশ কয়েকটি পার্ক ও খেলার মাঠ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বন্ধ হওয়া পার্কগুলোর মধ্যে রয়েছে, গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক, গুলশান ফজলে রাব্বি পার্ক, মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক, কারওয়ান বাজার পার্ক ও বনানী রোড-২৭ পার্ক। এ ছাড়া মধুবাগ খেলার মাঠ ও সোনালি মাঠও বন্ধ করে রাখা রয়েছে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ‘উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ একনেক অনুমোদন করে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। করোনার কারণে পরবর্তী সময়ে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পার্ক ও খেলার মাঠ সবগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় সবশেষ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় প্রকল্পের সময়। ধাপে ধাপে তিনবার প্রকল্পের সময় বাড়ানো হলেও, এখনো শেষ হয়নি বেশ কিছু পার্ক ও খেলার মাঠের উন্নয়নকাজ। সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ২৭৯ দশমিক ৫০ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ২০২ দশমিক ৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় সিটি করপোরেশনের ২২টি পার্ক এবং ৪টি খেলার মাঠেরও আধুনিকায়নের কথা বলা হয়। সংশোধিত প্রকল্পে চারটি পার্ক বাদ রাখা হয়। চলতি মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ডিএনসিসির ১৩টি পার্ক ও ৩টি খেলার মাঠের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৫টি পার্ক ও একটি মাঠের উন্নয়নকাজ শেষের দিকে রয়েছে। অথচ সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান ফজলে রাব্বি পার্ক ও মোহাম্মদপুর শহীদ পার্কের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। পার্ক ও মাঠের অসমাপ্ত কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।

ডিএনসিসির ‘উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, করোনা মহামারি, অবৈধ দখল, দোকান-সংশ্লিষ্ট জটিলতা (শহীদ পার্ক), নকশা পরিবর্তন, ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে কিছু পার্ক ও মাঠের কাজ শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে। বিশেষ কারণে জুনের মধ্যে কোনো মাঠ বা পার্কের কাজ শেষ না হলে, নতুন প্রকল্পের আওতায় কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

পার্ক ও খেলার মাঠ বছরের পর বছর বন্ধ রাখা উদ্বেগজনক বলে মনে করেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেখানে মাঠ-পার্কের এত সংকট, সেখানে এত দিন ধরে এতগুলো উন্মুক্ত স্থান বন্ধ রাখা অযৌক্তিক। সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি বুঝতে হবে। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, কাজ শেষ হলে মাঠ-পার্ক দ্রুত খুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত