Ajker Patrika

সঙ্গীর কামড়ে সংকটাপন্ন ‘নদী’, ক্ষীণ বাঁচার আশা

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৪৭
সঙ্গীর কামড়ে সংকটাপন্ন  ‘নদী’, ক্ষীণ বাঁচার আশা

‘নদীর’ সঙ্গী ‘সোহেল’ মারা গেছে প্রায় দুই মাস আগে। এরপর নতুন সঙ্গী হয় ‘সম্রাট’। কিন্তু ‘সম্রাটের’ সঙ্গে ‘নদীর’ বনিবনা ভালো ঠেকেনি। শুরু থেকেই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত। এর মধ্যে দুই দফায় মারামারি হয়েছে। এখন ‘নদীর’ জীবন সংকটাপন্ন। তাকে বাঁচানোর আশায় ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

‘নদী’ কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের একটি সিংহী। এই সিংহীর সঙ্গী সোহেল মারা যায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে। এরপর নদীর বেষ্টনীতে সঙ্গী হয় সম্রাট। তারা দুজনই সোহেল-হীরার সন্তান। গত ২ মার্চ নদী ও সম্রাটের মধ্যে প্রথম মারামারি হয়। চিকিৎসায় দুজনই সেরে উঠে। মোটামুটি একই বেষ্টনীতে দুজনের সংসার চলছিল।

কিন্তু হঠাৎ করে গত ২৭ মার্চ আবার দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে নদীর গলা ও পেটে কামড় দেয় সম্রাট। এরপর রক্তাক্ত নদীকে আলাদা করে ফেলা হয়। সেই থেকে নদীর চিকিৎসার জন্য দুইটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে সাফারি কর্তৃপক্ষ।

পরিবারের কর্তা সোহেলের আগেই মারা যায় হীরা। চার সন্তান নদী, সম্রাট, রাসেল ও টুম্পা। সিংহ-সিংহীর লালন-পালনের দায়িত্বে রয়েছেন পার্কের প্রাণী সংরক্ষক আখতারুজ্জামান খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নদী ও সম্রাট তাঁর হাতেই বড় হয়েছে। প্রায় ২২-২৩ দিন ধরে নদী মুখে পানি ছাড়া কিছুই তুলছে না। নদীর এই পরিণতিতে তিনিও খুব কষ্ট পাচ্ছেন বলে জানান।

গত সোমবার বিকেলে দেখা যায়, নদী বেষ্টনীর এক কোনায় শুয়ে আছে। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। গাল দিয়ে লালা বের হচ্ছে। তার উঠে দাঁড়ানোর খুব একটা শক্তি নেই। মুখে গোঁ গোঁ করলে হুংকার বের হচ্ছে না। শরীরের হাঁড়গুলোও ভেসে উঠেছে। পাশের বেষ্টনীতে এদিক-ওদিক পায়চারি করছে সম্রাট। সঙ্গীর এমন অবস্থায় সেও খুব অস্থির হয়ে উঠেছে।

পার্কের আরেক কর্মী সাইফুর রহমান জুয়েল জানান, নদীর অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। সঙ্গীর সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে সম্রাটেরও অস্থিরতা বাড়ছে। আমরা রাতদিন নদীকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদীর চিকিৎসায় দুটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার রক্তের নমুনা পরীক্ষায় এক ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আজ-কালকের মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এরপর পরিস্থিতি বোঝা যাবে।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তত্ত্বাবধায়ক) মো. মাজহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদীর চিকিৎসায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাচ্ছি না। এ অবস্থায় তাকে বাঁচানোর আশা খুবই ক্ষীণ। তারপরও শেষ চেষ্টায় রয়েছি।’

চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারায় ২ হাজার ২৫০ একর বনে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। ২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি এ পার্কের যাত্রা শুরু করা হয়। এর আগে ১৯৮০ সালে এটি ছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র। বর্তমানে পার্কে জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হরিণ, লামচিতা, শকুন, কচ্ছপ, রাজধনেশ, কাকধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বনগরুসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১টি প্রাণী রয়েছে। এগুলো আবদ্ধ অবস্থায় আছে। উন্মুক্তভাবে আছে ১২৩ প্রজাতির ১ হাজার ৬৫টি প্রাণী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুইসাপ, সজারু, বাগডাশ, মার্বেল ক্যাট, গোল্ডেন ক্যাট, ফিশিং ক্যাট, খ্যাঁকশিয়াল ও বনরুই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত