Ajker Patrika

কোন পথে এগোবে বাংলাদেশ

জাহীদ রেজা নূর
কোন পথে এগোবে বাংলাদেশ

না বুঝে কিছু বলার চেয়ে ঘটনা যা ঘটছে, সেদিকে দৃষ্টি রাখা ভালো। পরিবর্তন কী হচ্ছে, কতটা হচ্ছে, আদৌ হচ্ছে কি না, সেই সব প্রশ্ন নিয়ে এখনই বিতর্ক করার সময় আসেনি। কেবল তো ক্ষমতা হাতে নিল অন্তর্বর্তী সরকার। সত্যিই এমন কোনো সংস্কার করা সম্ভব কি না, যাতে ক্ষমতাসীন কেউ স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে, সেদিকে গণ-অভ্যুত্থানকারী চালিকাশক্তির চোখ থাকবে নিশ্চয়ই। নইলে ‘থোড় বড়ি খাড়া-খাড়া বড়ি থোড়ের’ গাড্ডায় পড়ে যাবে দেশ। 

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর থেকে নানা ঘটনা ঘটে চলেছে। যখন যা ঘটছে, তা নিয়ে তৎক্ষণাৎ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মানুষ ঘটনার বিষয়ে তাঁদের বিশ্লেষণ প্রকাশ করছেন। প্রায় সবার হাতেই স্মার্টফোন থাকায় এবং সেই ফোনে ইন্টারনেট থাকায় অনেকেই ইউটিউব, ফেসবুক বা অন্য কোনো মাধ্যমে ঘটনাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। কনটেন্টগুলোর কোনো কোনোটিতে আপন মনের মাধুরী মিশিয়েও কোনো ঘটনা ‘রচনা’ করতে দেখা যাচ্ছে। ফলে ঘটনার সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

ওলট-পালট সময় ধীরে ধীরে নিশ্চয়ই স্থিত হবে, সেটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু কেউ কেউ ইতিমধ্যে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে শুরু করেছেন। প্রশাসনে যে অদলবদল হচ্ছে, তাতে বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অযোগ্য, অদক্ষরাও ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে শুরু করেছেন। পেট্রোবাংলার একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ২০তম গ্রেডের কয়েকজন কর্মচারীকে এক লাফে নবম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কোন ক্ষমতাবলে এ রকম অসাধ্য সাধন হলো, তা এক বিরাট বিস্ময়। কেউ সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড এই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। সংবাদটি সত্য হলে এখনই এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নইলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে। জনগণ মনে করবে, দখল-বেদখলের রাজনীতিই বুঝি ফিরে এল আবার। 

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে মাত্র। ১৫ বছর যারা বুভুক্ষু ছিল, তারাই এখন চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক হয়ে বসছে সর্বত্র। দলীয়করণ ও চাঁদাবাজি যেন আর না চলে, সেটাও তো চেয়েছে ছাত্র-জনতা। কিন্তু পরিবহন খাতে এই আলামত মোটেই স্বস্তি দিতে পারছে না কাউকে। অন্যদিকে আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, সেগুলোকে জনরোষ নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বটে, কিন্তু সেখানে জনতা কোথায়? সেখানে মূলত বিএনপি দলীয় আইনজীবীরাই উপস্থিত থেকে আটক আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বা নেতাদের গায়ে ছুড়ে মারছেন পচা ডিম। কেউ কেউ পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই আটক ব্যক্তির শরীরে হাত তুলছেন। বিচারপতি মানিকের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে, এরই আলোকে ন্যায়সংগত বিচার হতে হবে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটা কোনো সভ্য আচরণ নয়। আর হরে-দরে সবার নামে হত্যা মামলা দিয়ে মামলাগুলোকেই করে ফেলা হচ্ছে জোলো, মেরিটহীন। সালমান এফ রহমান স্টক এক্সচেঞ্জের বারোটা বাজিয়েছেন, ঋণ নিয়ে তেলেসমাতি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলে তো এসব বড় অনাচারের ব্যাপারেই হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একসময় এই অদ্ভুত মামলাগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। বলা হবে, তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হলো? সেই মামলাবাজির মধ্যেই কি ঢুকে যাচ্ছি আমরা? এসব জায়গায় পরিবর্তনের ছোঁয়া একেবারেই লাগেনি। বরং ক্ষমতাশালী কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে, ‘আওয়ামী লীগ আমলেও তো এসব ঘটনা ঘটেছিল, তার বেলা?’ আওয়ামী আমলে সে রকম ঘটনা ঘটেছে বলেই তো তা প্রতিরোধ করাটা এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত। একই কাণ্ড যদি এখনো ঘটতে থাকে, তাহলে পরিবর্তনটা কী হলো? 

সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো নিয়ে। ফেসবুকে অথবা ইউটিউবে এই উন্মত্ততার যে চিত্র দেখা গেছে, তা কোনো শুভারম্ভের ইঙ্গিত দেয় না। শিক্ষককে অসম্মান করে যারা মজা পেয়েছে, তারা আর যাই হোক, শোভন আচরণ করেনি। শিক্ষকদের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করার মাধ্যমে তারা নিজেদের সম্মানও ক্ষুণ্ন করল কি না, সেই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? শিক্ষক লাঞ্ছনার ব্যাপারে ইতিমধ্যে বিবিসিতে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়েছে। 

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানোর নামে যে অরাজকতা চালাল, তাতে সংস্কারপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলো। এটাকে বহুদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বা ক্রোধ বলে চালানো যাবে না। এর জন্য লজ্জা পেতে হবে পুরো জাতিকে।

১৫ বছরের শাসনামলে সবকিছুর দলীয়করণ এবং আকাশপ্রমাণ দুর্নীতির যে পরিচয় আওয়ামী লীগ রেখে গেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথাও বলতে হবে, যে অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেছে ক্ষমতায় বসা কোন শাসক দল? আওয়ামী লীগ? বিএনপি? বিএনপি-জামায়াত? জাতীয় পার্টি? যে যত কম সময় ক্ষমতায় থেকেছে, সে তত ছোট স্বৈরাচার আর যে যত বেশি সময় ক্ষমতায় থেকেছে, সে তত বড় স্বৈরাচার হয়েছে। এ তো দিবালোকের মতোই সত্য। প্রতিটি আমলের অনাচার নিয়ে একগাদা প্রমাণ রয়েছে বই-পুস্তকেই। সেসব পড়ে নিলেই আমাদের রাজনীতির মূল সমস্যাটা পরিষ্কার ধরা যাবে।  

শঙ্কা থাকে, যদি রাজনীতির এই চরিত্রের পরিবর্তন না হয়, তাহলে অপশাসনের ধারাবাহিকতা চলতেই থাকবে। ক্ষমতার শুধু পালাবদল হবে, নতুন কিছু হবে না। নতুন নতুন স্বপ্ন দেখবে মানুষ, সেই স্বপ্নের সমাধিও রচিত হবে। 

কিন্তু দেশের জনগণ তো আবার কোনো নতুন স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায় না। তারা চায় সুখে-শান্তিতে অন্তত ডাল-ভাত খেয়ে নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করতে। সেই জীবনের কি আভাস পাওয়া যাচ্ছে কোথাও? বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ নিশ্চিন্তে বসবাস করবে—এমন নিশ্চয়তা কি সত্যিই মনে শক্তি দিতে পারছে? এর জন্য দরকার রোডম্যাপ। 

সংকট উত্তরণের রোডম্যাপ যত দ্রুত দেওয়া যাবে, ততই জনগণ বর্তমানে ঘটতে থাকা ঘটনাবলির সঠিক বিশ্লেষণ করতে পারবে। বুঝতে পারবে, এই সরকার কতটা আন্তরিক। রোডম্যাপ অনুযায়ী তারা যদি সংস্কারকাজ করতে পারে, তাহলে কিছুটা হলেও আশা আছে। 

সংবিধান নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। যে সংবিধান সরকারকে একনায়ক করে তুলবে না, সেই রকম আশাপ্রদ কিছু হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো যেন তাতে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূস বলেছেন, ‘হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ নেই, সবার সমান অধিকার’। এ কথাটা সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু সব ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ ভোগ করার পাশাপাশি সব ধর্মের মানুষ সমান নিরাপত্তা পাচ্ছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। আমাদের দেশে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী রয়েছে, যাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ধর্মীয় হানাহানির ক্ষেত্র তৈরি করার প্রবণতা আছে তাদের মধ্যে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় এরাও সেই আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। এদের দিকে রাখতে হবে সতর্ক খেয়াল। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি পছন্দ করে না। 

যত দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক নির্বাচন হয়েছে, তত দিন পর্যন্ত দেখা গেছে দেশের মানুষের বড় একটা অংশ মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিকে সমর্থন করে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে জাতীয় পার্টির প্রতি জনসমর্থন আছে। ইসলামি দলগুলো সেভাবে হালে পানি পায়নি। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ইসলাম ভাঙিয়ে খাওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে বাংলার প্রবল প্রতিবাদ দিয়েই কেবল তার ব্যাখ্যা করা যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল মূলত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। সেই আন্দোলনও ইসলামবিরোধী তকমা এঁটে দিয়েছিল ধর্মব্যবসায়ীরা। সংবিধানে পরিবর্তন আনতে গিয়ে সে কথাগুলো মনে রাখা দরকার।  

দুঃখের ব্যাপার হলো, ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছেলেখেলা খেলেছে। মুখে বলেছে মুক্তিযুদ্ধের কথা, দৃশ্যত করেছে লুটপাট। দলীয়করণকে করে তুলেছে শিল্প। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ প্রবাদ স্মরণে রেখে স্ফীত করেছে ব্যাংক ব্যালান্স। ভাবা যায়, ক্ষমতাসীন দলের ডাকসাইটে নেতাদের মুখেও শোনা গেছে ‘যদি দল ক্ষমতাচ্যুত হয়, তাহলে পিঠের চামড়া থাকবে না’! কেন পিঠের চামড়া থাকবে না? দেশ পরিচালনা করার সময় কী এমন করা হয়েছে, যার উপহারস্বরূপ দেশের মানুষ তাদের পিঠের চামড়া খুলে নেবে? 

এই পিঠের চামড়া খুলে নেওয়ার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারা ক্ষমতায় যাবে এবং নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবে। জনগণ তাদের ওপর সন্তুষ্ট হলে আবার তারা ক্ষমতায় আসবে, নইলে যেকোনো সভ্য দেশে পরিচালিত নির্বাচনের মতোই নির্দিষ্ট সময়ে অন্য দলের হাতে ক্ষমতা দেবে। নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি হবে আনন্দময়, উৎসবমুখর। বিরোধী দলের তাতে অংশগ্রহণ থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত। 

সামনে অবারিত পথ। অসংখ্য পথ। কোন পথে এগোবে বাংলাদেশ, দেখা যাক।

লেখক: জাহীদ রেজা নূর
উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত