Ajker Patrika

বিশেষ সুবিধা পেল না পদ্মা ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫৪
বিশেষ সুবিধা পেল না পদ্মা ব্যাংক

খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেল না পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। খেলাপি ঋণ ও মন্দ ঋণের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা চেয়ে আবেদন করলে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় তা নাকচ করা হয়। তবে গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষায় বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর সংরক্ষণে ব্যাংকটিকে ২০২৫ সাল নাগাদ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, বেসরকারি পদ্মা ব্যাংক, নাম পরিবর্তনের আগে ফারমার্স ব্যাংক থাকা অবস্থায় সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় প্রায় ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে তার নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক করে এর ব্যবস্থাপনায় কিছু সংশোধনী আনা হয়। নাম পরিবর্তন হলেও পাহাড়সম এর খেলাপি ঋণের দায় ঘোচানো এখনো সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৫ হাজার ৭৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। তার মধ্যে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এটি মোট ঋণের ৬১ শতাংশ। আর ব্যাংকটির ২০১৭ সালে অর্থ কেলেঙ্কারির পর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভা সূত্র জানায়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদ্মা ব্যাংকের এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই দেওয়া হয় ব্যাংকটিকে। আর ২০১৭ সাল থেকে এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতার এই সুবিধা ভোগ করে আসছিল ব্যাংকটি।

জানা গেছে, সাধারণত ব্যাংকে জমা রাখা গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষায় ওই আমানতের ১৭ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। নগদ অর্থ, বিল-বন্ডের মাধ্যমে এ অর্থ জমা রাখতে পারে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে ৪ শতাংশ অর্থ নগদ জমার হার হিসাবে (সিআরআর) আর বাকি ১৩ শতাংশ এসএলআর হিসাবে রাখতে হয়। তবে সংকটে পড়া পদ্মা ব্যাংক তা সংরক্ষণ করতে পারেনি। অবশ্য বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ব্যাংকটিকে কোনো জরিমানা করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিশেষ সুবিধাভুক্ত না হলে এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংককে জরিমানা করা হতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এ নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাত নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোনো ব্যাংককে বাড়তি সুবধা দিই না। তবে কোনো একটি ব্যাংক সংকটে পড়লে কিছু বিষয়ে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। সেই হিসাবে এসএলআর সংরক্ষণে পদ্মা ব্যাংককে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীয় অধিকারবলে করতে পারে। আর পদ্ম ব্যাংককে মন্দ ঋণের বিষয়ে কোনো বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়নি।’

পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও তারেক রেজা খান বলেন, ‘অতীতে ফারমার্স ব্যাংক নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ধরনের আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যাংকটিকে পদ্মা নামে নামকরণ করা হয়। এর আগের পাঁচ বছরে ব্যাংকটির কার্যক্রমে মানুষের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এখন নতুন লোগো এবং নতুন নামে ব্যাংকটিকে দাঁড় করাতে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। ব্যাংকটি কিছুটা সংকটে রয়েছে, তা দ্রুত কেটে যাবে বলে আশা করছি।’

জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংকের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার দায় ঢাকতে ২০১৭ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। পরে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি পুনর্গঠিত হয়। আর গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। আর ২০২০ সালে ব্যাংক পরিচালনায় ২০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত