Ajker Patrika

সায়েদ আলীর পরম মমতা

সায়েদ আলীর পরম মমতা

বাতাসে দুলছে খেতের সবুজ ফসল। মাঠের মাঝখানে ১০-১২ শতক জমির ওপর জলাশয়। মনের আনন্দে সাঁতার কাটছে হরেক রকম মাছ। পানির ওপর পুঁতে রাখা বাঁশ-কঞ্চি। তাতে খাবারের খোঁজে একমনে বসে মাছরাঙা পাখিটা। জলাশয়ের পাড়েও ছড়ানো পাখিদের খাবার। উড়ে উড়ে আসছে আর খেয়ে চলে যাচ্ছে। পাশেই দুটি সাইনবোর্ড টাঙানো। একটিতে বড় করে লেখা—
‘পাখির নিরাপদ আশ্রম’
ওপরের দিকে কাব্যিক ভাষায় পাখিকে জানানো হয়েছে নিমন্ত্রণ, 
‘উড়তে উড়তে হাফিয়ে গেছ
ওহে পাখির ঝাঁক, 
একটু থাম মাছ খেয়ে যাও
মাছরাঙা, বক বা কাক...’
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কুলিয়া গ্রামে চোখে পড়বে এ দৃশ্য। পাখির জন্য নিরাপদ এ আশ্রয় বানিয়েছেন এ গ্রামের মোহাম্মদ সায়েদ আলী। জলাশয়ের আরেকটি সাইনবোর্ডেই মিলবে তাঁর পাখিপ্রেমের বার্তা, ‘একটুখানি সহযোগিতা আগামীর সম্ভাবনা, বাংলাদেশের পাখি, বাংলাদেশের প্রাণ, পাখি বাঁচান, বাংলাদেশকে বাঁচান।’

পঞ্চাশোর্ধ্ব মোহাম্মদ সায়েদ আলী পেশায় একজন কৃষক। এলাকাবাসীর কাছে তিনি সাদামনের মানুষ হিসেবেই পরিচিত। ২৭ বছর ধরে এলাকাবাসীকে পরম মমতার পরশ দিয়ে মানুষের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন।

১৯৯৫ সালে নিজ গ্রামের দাখিল মাদ্রাসার ৩০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় সায়েদ আলীর সামাজিক ও পরোপকারমূলক কাজ। আর থামেননি। রাস্তাঘাট নির্মাণ, অসুস্থদের সেবাদান, দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা, অসহায় পরিবারে ভ্যান ও সেলাই মেশিন প্রদান এবং দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, বজ্রপাত রোধে গ্রামের রাস্তার দুই পাশে তালের আঁটি (বীজ) রোপণ, পাখির অভয়াশ্রমের জন্য গাছে মাটির ছোট কলস টাঙানো, পুকুর বানিয়ে সেখানে মাছ খাওয়ার ব্যবস্থা এবং পাখিদের খাবার দেওয়ার মতো বেশ কিছু কাজে রয়েছে এ সাদামনের মানুষের ছোঁয়া।

গত বছরের শেষ দিকে ১০-১২ শতক জমিতে জলাশয় বানিয়ে ৪ হাজার টাকার দেশি প্রজাতির ছোট মাছ ছাড়েন। পানির ওপর পাখিদের বসার জন্য বাঁশ-কঞ্চি পুঁতে দেন, যাতে পাখি বসে পানির মাছ খেতে পারে। জলাশয়ের পাড়ে পাখির খাবার দেন নিয়মিত। মাঝেমধ্যে বাজার থেকে মাছ কিনে এনেও পাখিদের জন্য পানিতে দেন। কেউ যেন পাখি না তাড়ায়, সে জন্য টাঙিয়েছেন সাইনবোর্ড। সায়েদ আলীর পাখির নিরাপদ আশ্রয় নজর কেড়েছে সবার।

সায়েদ আলীকে সাদামনের মানুষ বলার পেছনের কারণ জানালেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মীর আলী রেজা। সায়েদ আলী ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁর গ্রামসহ এলাকায় শিক্ষা, ধর্মসহ সামাজিকতায় যাঁরা অবদান রেখেছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে সম্মাননা দেন। সমাজকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চান সবাইকে।

মানুষ হিসেবে এসব কাজ সবার করা উচিত—এমনটাই মনে করেন সায়েদ। ছেলে সাকিল হোসেনও মহৎ এসব কাজে তাঁর সঙ্গে আছেন বলে জানান। সায়েদ বলেন, ‘আমি এখন শুধু আমার আয়রোজগারের টাকা খরচ করি না। এসব কাজে আমার ছেলে সাকিল হোসেনের বেতনের টাকাও ব্যয় করি।’ 
বাকি জীবন এভাবে সামাজিক ও পরোপকারী কাজ করে যেতে চান সায়েদ আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়ার জব্দ ১৬২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ইউক্রেনের জন্য কোথা থেকে অস্ত্র কেনা হবে, তা নিয়ে বিভক্ত ইইউ

প্রধান উপদেষ্টাকে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব আবেগতাড়িত, রাষ্ট্র আবেগের ওপর চলে না: সালাহউদ্দিন

‎টঙ্গী থেকে নিখোঁজ ইমামকে পঞ্চগড়ে উদ্ধার

আসামিদের কোনো অনুশোচনা নেই, উল্টো সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

শেখ হাসিনা ও কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ের দিন নির্ধারণ ১৩ নভেম্বর

এলাকার খবর
Loading...