Ajker Patrika

কমছে ‘মহিষা দই’ উৎপাদন

মিসু সাহা নিক্বণ, রামগতি (লক্ষ্মীপুর)
কমছে ‘মহিষা দই’ উৎপাদন

প্রতিদিন প্রায় তিন টন মহিষের দুধ উৎপাদিত হয় রামগতিতে! এই হিসাব থেকে ধারণা করা হয়, এখানে বছরে তিন হাজার টনের বেশি মহিষের দই তৈরি হয়। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় ঘুরলে এ হিসাব আপনার কানে আসবে কোনো না কোনো সময়। এই পরিমাণ দই যে অঞ্চলে তৈরি হয়, সেই অঞ্চল বিখ্যাত না হয়ে কি পারে! রামগতিও মহিষের দইয়ের জন্য সারা দেশে বিখ্যাত। তবে স্থানীয়ভাবে এটি ‘মহিষা দই’ নামে পরিচিত।

উপকূলীয় অঞ্চল রামগতির খাদ্যসংস্কৃতিতে মহিষের দই বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে আছে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তো বটেই, সুস্বাদু মহিষা দই ছাড়া এই অঞ্চলে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান হয় না বললেই চলে। খাওয়া শেষে পাতে এ দই ঢেলে দেওয়া রামগতি অঞ্চলের মানুষের পরম্পরাগত রীতি। এটি পরিবেশন না করার কারণে এই অঞ্চলের বিয়েবাড়িতে মারপিটের ঘটনার কথাও জানা যায় বিভিন্নজনের কাছে।

এই বিপুল বিখ্যাত দই তৈরির দুধ আসে রামগতির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মেঘনা নদীর চর আবদুল্লাহ ও পাশের চরগুলোর মহিষের বাথান থেকে। কত মহিষ আছে এই চরগুলোতে, সে হিসাব জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সঙ্গে। দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরো উপজেলার বিভিন্ন চরে রয়েছে ৮ হাজারের বেশি মহিষ। বাথানের উন্মুক্ত জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয় মহিষের পাল। সেখানেই তারা চরে বেড়ায়।
সজল সাহা নামের এক চা বিক্রেতা জানালেন দই তৈরির পদ্ধতি। চর থেকে টাটকা দুধ আনার পর তা ১ থেকে ২ কেজি আকারের পাত্রে ঢালা হয়। এ পাত্রগুলোকে টালি বলে। টালিতে কাঁচা দুধ রাখার ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর দুধ জমে দই হয়ে যায়। প্রতি লিটার দুধে ৯৫০ গ্রাম দই তৈরি হয়। এ দই ফ্রিজে না রেখেও এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। এখন প্রতি কেজি দুধের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

ইদানীং রামগতির দই তৈরির কারিগরদের মাথায় হাত পড়েছে। চরগুলোতে মহিষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। ফলে চাহিদার তুলনায় কমছে দুধের জোগান। চর আবদুল্লাহর একজন বাথানমালিক মেজবাহ উদ্দিন হেলাল। এ চরের বিভিন্ন বাথানে তাঁদের পরিবারের প্রায় ২০০ মহিষ রয়েছে। এগুলোর প্রায় অর্ধেক এখন দুধ দেয়। কিন্তু হেলাল জানান, তাঁর পরিবারের মালিকানায় এখন যে মহিষগুলো আছে, কিছুদিন আগেও সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বাথানে মহিষ কমে যাওয়ার কারণ জানা গেল আরেক বাথানমালিকের কথায়। তাঁর নাম মো. শাখাওয়াত মিয়া। তিনি জানালেন, চরাঞ্চলে মানুষের বসত বাড়ছে। ফলে কমে যাচ্ছে চারণভূমি। ঠিকমতো ঘাস পাচ্ছে না মহিষের পাল। এ কারণে কমে যাচ্ছে দুধ। অনেক বাথানমালিক মহিষ পালন ছেড়ে দিচ্ছেন কিংবা কমিয়ে ফেলছেন বাথানের মহিষের সংখ্যা।

রামগতি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মহিষের দইয়ের চাহিদা মেটাতে মহিষ ও দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারি ও বাথানমালিকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত