Ajker Patrika

এত কাছে তবু কত দূরে

ফারুক মেহেদী, কাতার থেকে
এত কাছে তবু কত দূরে

বিশ্বের লাখো দর্শক-সমর্থকে গমগম করছে কাতার। নানান সাজপোশাকে তারা কাতারকে রাঙিয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে বিমানবন্দর দিয়ে একদল দর্শক আসছে, আরেক দল খেলা দেখে  ফিরে যাচ্ছেন।

খেলা দেখার পাশাপাশি বিশ্বকাপ-পর্যটকেরা দামি হোটেল থাকছে, কেনাকাটা করছে, ভালো রেস্তোরাঁয় খাচ্ছে, বিনে পয়সায় মেট্রো ট্রেনে চড়ছে। আরও কত কী! বিদেশি দর্শকদের জন্য কাতার এখন অনেকটাই স্বর্গ।

তবে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ কমই পেয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। হাতের নাগালে বিশ্বকাপ ফুটবল হলেও খেলার টিকিট কেনার মতো সামর্থ্য অনেক প্রবাসীর নেই। অনেকের আবার কাজের ব্যস্ততা আছে। তাই তাঁরা হয় ফ্যান জোনে অথবা শপিং মলের বড় স্ক্রিনে খেলা দেখছেন।

১০ বছর কাতারে থাকেন প্রবাসী তরুণ ইমাম হোসেন ইমন। এখানে তিনি পেশায় গাড়িচালক। যা আয় করেন, তার কিছু অংশ খাওয়াদাওয়া ও হাতখরচের জন্য রেখে বাকি দেশে বাবার কাছে পাঠিয়ে দেন। তাঁর টাকায় পরিবারের সবার ভরণপোষণ হয়। এরই মধ্যে বাড়িতে একটি পাকা ঘর তুলেছেন। এ জন্য কিছু টাকা ধারও করতে হয়েছে। তাই বাড়তি খরচ করাটা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন চলছে। ইমাম হোসেনের চোখের সামনে দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের, নানান সংস্কৃতির মানুষ কাতারে এসে খেলা দেখছে, কেনাকাটা করছে, মজা করছে। তাঁরও ইচ্ছে হয়, স্টেডিয়ামে বসে খেলাটি দেখবেন। প্রিয় দলকে সমর্থন করবেন। না, সেটা হয়নি। সামনেও হয়তো হবে না। ইমাম হোসেন বলেন, ‘টাকা না পাঠালে বাড়িতে বাপ-মা, ভাই-বোনের ভরণপোষণ হবে না। আমি কীভাবে একটি খেলার পেছনে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করব? আমারও ইচ্ছে হয়, মাঠে বসে সবার সঙ্গে খেলা দেখি। অথচ যখন ভাবি, একটি খেলার পেছনে যে টাকা খরচ হবে, তা দিয়ে আমার পরিবারের এক মাসের খরচ চলে যাবে—তখন নিজের শখটা মাটি দিয়ে দিই।’

কাতারে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী কাজ করেন। তাঁদের বেশির ভাগই এখানে কায়িক পরিশ্রম করেন। তাঁদের মাসিক আয় গড়ে ৬০-৭০ হাজার টাকা।

এ টাকার মধ্যে তাঁদের খাওয়া, থাকা, হাতখরচসহ অন্যান্য খাতে খরচ হয় গড়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। বাকি যা থাকে, এর পুরোটাই তাঁরা দেশে পরিবারের কাছে পাঠান। এর বাইরে তাঁরা বাড়তি খরচ করবেন–এ সুযোগ কম। ফলে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক দেশে বসবাস করেও তাঁরা অন্তত একটি খেলা দেখবেন—এমন ভাবনা এখানকার ৯০ শতাংশ প্রবাসীর নেই বললেই চলে।

প্রথম দিকে বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচের একটি খেলার টিকিটের পেছনে খরচ হয় ১০৫ থেকে ২১০ ডলার পর্যন্ত। সময় যত বাড়ে, টিকিটের দামও বাড়ে। ফাইনাল ম্যাচের একটি টিকিটের দাম ৪৪৫ থেকে ১১০০ ডলার পর্যন্ত। তবে বাস্তবে দাম আরও বেশি। ফলে প্রবাসীদের পক্ষে টিকিট কেটে মাঠে বসে খেলা দেখা কঠিন।

খেলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে খেলা দেখা নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁরা কেউই মাঠে গিয়ে খেলা দেখেননি। সামনে দেখবেন এমন আশাও নেই। নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি প্রবাসী আল আমিন, শরিফুল, নবী ইসলাম, আমির, রবিউল প্রমুখ। তাঁরা কাতারে একসঙ্গে মেসে থাকেন। বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম, সড়ক, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণেও জড়িত ছিলেন। তাঁরা দুঃখ করে বলেন, ‘যেসব স্টেডিয়ামে কাজ করলাম, ভেবেছিলাম ওই সব স্টেডিয়ামে বসে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের খেলা দেখব। কিন্তু তা আর হলো না।’

তাহলে এখন কীভাবে খেলা দেখেন? এ প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, মাঠে বসে না দেখতে পারলেও কাতার সরকার সবার খেলা দেখার জন্য ফ্যান জোন করে দিয়েছে, সেখানে দেখা যায়। আবার শপিং মলে বড় বড় স্ক্রিনে এ ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে গিয়েও দেখেন। আবার অনেকের সারা দিন কাজ করে এসে খেলা দেখার মতো মনমানসিকতা থাকে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

জামায়াতের কেউ ইমাম-মুয়াজ্জিন হতে পারবে না: আটঘরিয়ায় হাবিব

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

দায়িত্ব পেয়েই ‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ মাসুদ রানা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত