Ajker Patrika

করোনার প্রভাবে কমেছে এসএসসি পরীক্ষার্থী

যশোর প্রতিনিধি
Thumbnail image

যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ পরীক্ষার্থী। ২০২১ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৭ জন। গত বছরের তুলনায় এবার ১১ হাজার ৩১০ জন কম। করোনা মহামারি, দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহসহ কিছু কারণে এবার পরীক্ষার্থী কিছুটা কমেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এ বিষয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, ২০২২ সালে যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা ২০২০ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ত। তখন দেশে করোনা মহামারির কারণে তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক অসচ্ছল পরিবারের মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। এসব কারণে ঝরে যাওয়ায় এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

এ বিষয়ে মনিরামপুরের পলাশী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার বিদ্যালয় থেকে ৭৬ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। গত বছর নিয়েছিল ৯৩ জন। যে ৭৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তারা ২০১৯ সালে জেএসসিতে অংশ নেয়। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি ছিল। মাঝে দুই বছর করোনাকালে বাল্যবিবাহ এবং অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজকর্মে যোগ দিয়েছে, আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান বদল করেছে।

বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার দায় কিছুটা শিক্ষকদেরও। এ কারণে এ বিষয়ে কেউ নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

যশোর শহরতলির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০২০ সালে আমার বিদ্যালয়ে তিনটি বিভাগে ৮৮ জন পরীক্ষার্থী ছিল নবম শ্রেণিতে। তারাই এবার এসএসসি পরীক্ষায় বসছে। তাদের মধ্যে ১৫ শিক্ষার্থী ঝরে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনাকালে তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক অসচ্ছল পরিবারের মেয়েদের বাল্যবিবাহ হয়ে যায়। বিয়ের পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা পড়াশোনায় রাজি হয়নি।’

যশোরের চৌগাছা উপজেলার আন্দুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১৮ ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। তাদের চারজন পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যরা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।

আন্দুলিয়া বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে যাদের বাল্যবিবাহ হয়েছে, তাদের অধিকাংশই একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ। বর্ণবৈষম্যের কারণে তাদের অভিভাবকদের দাবি, মেয়েকে বেশি পড়াশোনা করালে যোগ্য পাত্র খুঁজে পাবেন না। তাই অল্প বয়সে কম শিক্ষিত মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে বেশি। করোনাকালে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।’

চৌগাছা মাকাপুর-বল্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাকালে বিদ্যালয়ের অন্তত আটজন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। অসচেতন হওয়ায় অভিভাবকেরা মনে করেন, মেয়ে বড় হওয়া মানে বোঝা হয়ে যাচ্ছে।

তাকে বিয়ে দিতে পারলেই চাপমুক্ত হতে পারবেন। এ জন্য তারা বাল্য অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।’

যশোর শহরের মধুসূদন তারাপ্রসন্ন (এমএসটিপি) কলেজিয়েট গার্লস স্কুলের অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। করোনাকালে কতজনের বাল্যবিবাহ হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। তবে দু-একজনের বিয়ে হয়েছে শুনেছি।’

এর আগে এসএসসি পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ ছিল চলতি বছরের ১৯ জুন। সেই তারিখে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার তিন মাস পর আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত