Ajker Patrika

সরঞ্জামের অভাবে বছরে ১৩০০ জেলের মৃত্যু

বরগুনা প্রতিনিধি
সরঞ্জামের অভাবে বছরে ১৩০০ জেলের মৃত্যু

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ১১ জন জেলের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ঢেউয়ের তোড়ে ট্রলারডুবিতে এখনো অর্ধশতাধিক জেলে নিখোঁজ এবং দিক হারিয়ে সাগরে ভেসে ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করে আটক হয়েছেন শতাধিক জেলে। জেলেরা বলছেন, মাছ ধরার ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট, পর্যাপ্ত বয়া, দিক নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি থাকে না। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর এক হাজার তিন শর বেশি জেলে ঝড়ের কবলে মারা যান। জেলেরা বলছেন, বেশির ভাগ দুর্ঘটনার কারণ, ঝড়ের আগাম সংকেত না পাওয়া। এ ছাড়া ঝড়ের কবলে পড়ার পর নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া দিক নির্ণয়ের সামগ্রী না থাকায় দিক হারিয়ে ভিনদেশে চলেও যান তাঁরা। 

মৎস্যজীবীরা বলছেন, যুগ যুগ ধরে এভাবে চললেও সমুদ্রকেন্দ্রিক মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নৌযানগুলো প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে উপকূলের কয়েক লাখ সমুদ্রগামী জেলের জীবন প্রায়ই বিপন্ন হচ্ছে।

জেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান লয়েডস রেজিস্টার ফাউন্ডেশনের ‘ফিশসেফ’ ২০২৫ প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ হাজার ৩৫০ জনেরও বেশি জেলে শুধু নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবে সাগরে মারা যান। ফিশসেফের তথ্যের সত্যতা পাওয়া বরগুনা উপকূলীয় ট্রলার শ্রমিক (জেলে) অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাঝি বলেন, ‘সমুদ্রগামী ট্রলারে জেলেদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম বলতে চার থেকে পাঁচটি বয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না। এসব ট্রলারে দিক নির্ণয়ের যন্ত্রও নেই। আকাশের তারা দেখে জেলেরা দিক নির্ণয় করেন। কিন্তু ঝড়ের সময় আর তারা দেখারও সুযোগ থাকে না। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় জেলেদের। দুলাল বলেন, ঝড়ের সংকেতও যথাসময়ে জেলেদের কাছে পৌঁছায় না। জেলেরা যখন পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর পেয়ে ফিরে আসতে শুরু করেন তখনই ঝড়ের কবলে পড়তে হয় তাদের।’

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী দেওয়া তথ্যমতে, ২৩ জুলাই সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ১২ আগস্ট পাথরঘাটার সগীর কোম্পানির একটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভারতের জলসীমায় প্রবেশে দায়ের আটক হয়। ওই ট্রলারের ১১ জন জেলে ভারতের বারুইপুর কারাগারে বন্দী আছে। ১৮ ও ১৯ আগস্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট সামুদ্রিক ঝড়ে কক্সবাজারে তিনটি ট্রলার ডুবে সাতজন এবং ভোলায় দুজন ও বরগুনার একটি ট্রলারের দুই জেলের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ১১৪ জন জেলে ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করে। এরা সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। এর মধ্যে এখনো পর্যন্ত মোট ৩২ জন জেলেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে ৩০ বছর ধরে মাছ ধরেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা জেলে নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, লাইফ জ্যাকেট দেওয়ার ব্যাপারে মালিকপক্ষের অনাগ্রহ আছে। একই সঙ্গে ট্রলারগুলোয় দিক নির্ণয়ের জন্য কোনো যন্ত্র নেই। ঝড়ের কবলে পড়লে জেলে ও মাঝিরা দিকহারা হয়ে ভেসে যান দেশের সমুদ্রসীমা ডিঙিয়ে ভিনদেশে। আটক হয়ে মাসের পর মাস সেখানে থাকতে হয়। মুক্তি পেতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এ ছাড়া সাগরে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কোনো কিটবক্সও নেই কোনো ট্রলারে।  
পাথরঘাটার ট্রলার মালিক এনামুল হোসাইন ও মোস্তফা গোলাম কবীর অবশ্য জেলেদের এমন দাবির সঙ্গে একমত নন। এনামুল হোসাইন বলেন, সব ট্রলারেই লাইফ জ্যাকেট ও বয়া থাকে, তবে কম বা বেশি। মোস্তফা গোলাম কবীরেরও দাবি একই।

মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক ড. মো. শরিফ উদ্দীন বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে জেলেরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের নিরাপত্তা সামগ্রী যথেষ্ট নয়, এটা এবারের ঘটনায় স্পষ্ট। এটা অবশ্যই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি জানি। এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত