Ajker Patrika

বকেয়া ৩২ কোটি টাকা

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২: ৫৪
বকেয়া ৩২ কোটি টাকা

গ্রাহকের কাছে সাড়ে ৩২ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও এ টাকা তুলতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন কর্মকর্তারা।

হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জ পৌরসভা ও আশপাশের এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২১ হাজার গ্রাহক ব্যবহার করছেন প্রি-পেইড মিটার। বাকি ১৪ হাজার গ্রাহক পোস্ট-পেইডের (জিএফএক্স) আওতাধীন।

হবিগঞ্জ বিউবর আওতায় প্রতি মাসে গড়ে ব্যবহার হয় ৪ কোটি টাকার বিদ্যুৎ। তবে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছে পিডিবির বকেয়া পড়েছে সাড়ে ৩২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে সাড়ে ১৫ কোটি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৬ কোটি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি, ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২ কোটি টাকা বকেয়া।

ইতিমধ্যে ৩০০ গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে এর বিপরীতে মামলা দেওয়া হয়েছে আড়াই কোটি টাকার। অনেক চেষ্টার পর দেড় বছরে বকেয়া আদায় হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। এখনো বকেয়া রয়েছে সাড়ে ৩২ কোটি টাকা। এদিকে হদিস মিলছে না এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৭৮০ জন। তাঁদের কাছে বকেয়া প্রায় ৬ কোটি টাকা। সরকারি দলের শীর্ষ নেতাসহ জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

কর্মকর্তাদের দাবি, বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও বকেয়া বিল তোলা সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। দীর্ঘ সময় বিল বকেয়া থাকা গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন তাঁরা।

গত ২১ ডিসেম্বর শহরের জালালাবাদে এক গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যান বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী চাঁদনি আক্তারসহ কর্মকর্তারা। সেখানে হামলার শিকার হন তাঁরা। জালালাবাদের গ্রাহক সামসু মিয়া ও তাঁর আত্মীয়-স্বজন বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ ব্যাপারে চাঁদনি আক্তার বলেন, ‘অনেক গ্রাহক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছেন। বকেয়া বিল আদায় কিংবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে অনেক সময় গ্রাহকদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। আমাদের গালাগাল করে, হামলা করে এমনকি অনেক সময় ছুরি নিয়েও এগিয়ে আসে অনেক গ্রাহক।’

পিডিবির উপসহকারী প্রকৌশলী ইমাম হোসেন বলেন, ‘গ্রাহকদের কাছে পিডিবির সাড়ে ৩২ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। এই টাকা তুলতে চাই। আমরা চাই গ্রাহক আমাদের সহযোগিতা করুক। এতে সরকারের টাকাটা তুলতে আমাদের সুবিধা হবে।’

এদিকে বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরামের অভিযোগ—অবৈধ সংযোগ আর ভুতুড়ে বিলের কারণে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। এমনকি প্রি-পেইড গ্রাহকদেরও অনেক সময় ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বকেয়া বিল।

হবিগঞ্জ গ্রাহক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম শিবলী খান বলেন, অনেক সময় মিটার ইউনিটের সঙ্গে বিলের ইউনিটের কোনো মিল পাওয়া যায় না। বিষয়টি কর্মকর্তাদের জানালে তাঁরা সমাধান করে দেওয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত দেন না।

এ ছাড়া বর্তমানে যাঁরা প্রি-পেইড গ্রাহক হয়েছেন তাঁদের পোস্ট-পেইড থাকা সময়ের সব বিল পরিশোধ করেই প্রি-পেইড গ্রাহক হতে হয়েছে। অথচ ইদানীং দেখা যাচ্ছে প্রি-পেইড গ্রাহকদের তিন বা চার বছর আগের বকেয়া বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, ‘বকেয়া বিল থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে বিদ্যুৎ বিভাগকে অবৈধ গ্রাহকদের চিহ্নিত করতে হবে। আমার ধারণা, অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে দিলে একটা টাকাও বকেয়া থাকবে না।’

হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসার পর থেকে বকেয়ার পরিমাণ কমে আসছে। এ ছাড়া এখনো যেগুলো বকেয়া রয়েছে সেগুলো উত্তোলনের জন্য আমরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত