Ajker Patrika

খরচই উঠছে না তরমুজচাষির

কামাল হোসেন, কয়রা
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৫: ৩৪
Thumbnail image

খুলনার কয়রা উপজেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা পাইকগাছা থেকে এসে পাটনিখালি বিলে ১১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন আমিরুল ইসলাম। সব মিলিয়ে তাঁর ১১ বিঘায় খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। খরচ বেশি হলেও এবার ফলন ভালো হয়েছে। আশা ছিল তরমুজ চাষে ভালো দাম পাবেন। কিন্তু হঠাৎ দরপতনে তাঁর সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে। লাভ তো দূরের কথা, চাষের খরচই উঠে আসছে না তাঁর।

একই বিলে অজিত সরদার নামের এক কৃষক নিজের সাড়ে তিন বিঘা ও দেড় বিঘা জমি লিজ নিয়ে করেছিলেন তরমুজ চাষ। এই তরমুজ চাষ করতে যেয়ে তাঁর বিক্রি করতে হয়েছে একটি গরু ও ৩০ মণ ধান। গরু ও ধান বিক্রির টাকা দিয়ে তরমুজ চাষ করলেও ভালো ফলন হওয়ায় সে কষ্ট ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তরমুজের দাম শুনে সে কষ্ট আরও বেড়ে গেছে তাঁর।

আমিরুল কিংবা অজিত সরদার নয়, এ রকম শত শত তরমুজচাষির কাঁধে এখন কষ্টের ভার। হঠাৎ দরপতনে তরমুজ বিক্রি না হওয়ায় তরমুজ নিয়ে স্বপ্ন দেখা চাষিদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ দেখা গেছে। চাষিরা এখন খরচের টাকা তোলাটা ছেড়ে দিয়েছেন ভাগ্যের ওপর।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আমাদী, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে এ বছর ৮৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। গত বছর ছিল ৬৫০ হেক্টর। এবার ২০০ হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু তরমুজের খেত থেকে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে।

তরমুজচাষি বিমল সরকার হতাশা ও বিরক্ত হয়ে বলেন, গত বছর আরও একজনকে অংশীদার নিয়ে ২৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ১২ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। আমি পেয়েছিলাম ৬ লাখ টাকা। তাই এ বছর নিজের জমানো টাকা আর এলাকার মানুষের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা সুদে নিয়ে ৩৬ বিঘায় তরমুজ চাষ করেছি। কিন্তু ব্যাপারীরা তরমুজের দাম বলছেন গড়ে ৭ টাকা কেজি। তাতে আমার খরচের অর্ধেকও উঠবে না।

নরেশ ঢালী বলেন, আমি দুটি সমিতি থেকে ৮৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাটনিখালি গ্রামে সাড়ে চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। তবে ব্যাপারীরা বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা বলছেন। জমির হারি ও ক্ষেতের খরচ সব মিলিয়ে ৮৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ব্যাপারীরা খরচের টাকাও দাম বলছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ঈদের পর হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা কৃষকদের অফ সিজনে তরমুজ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত