কৃষিতে বিপ্লবের আশা

পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষিনির্ভর দক্ষিণের জেলা ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার প্রায় ৫ লাখ কৃষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হবেন।

বিশেষ করে এই অঞ্চলে সবজি চাষের ক্ষেত্রে ও ন্যায্য দাম নিশ্চিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এমনটায় দাবি চাষি ও ব্যবসায়ীদের। তবে কৃষি বিভাগের দাবি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় সম্প্রসারিত হবে কৃষকের বাজার। গতি বাড়বে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে।

ঝিনাইদহ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে জেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ হয়েছিল ২৩৮৫৫ হেক্টর জমিতে। আর এ থেকে সবজি উৎপাদিত হয়েছিল ৫০২৩০০ মেট্রিকটন।

ঝিনাইদহ সদরের ডাকবাংলা এলাকার সবজি ব্যবসায়ী মিয়া জান জানান, প্রতি হাটে কৃষকের কাছ থেকে কেনেন গড়ে দুই ট্রাক সবজি। এসব সবজি পাঠান ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। তবে ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজট, সময়ক্ষেপণ আর হয়রানির কারণে বাড়ে ভোগান্তি। অনেক ক্ষেত্রে ট্রাকেই নষ্ট হয় সবজি। বিক্রি করা যেত না ঢাকার বাজারে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হলে এসব ভোগান্তি একেবারেই কমে আসবে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

সবজি ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, প্রতি হাটে বেগুন, ফুলকপি, চিচিঙ্গা, লাউ, পটলসহ বিভিন্ন সবজি ট্রাকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরি ঘাটের ভোগান্তি ছাড়াই সেতু ব্যবহার করে টাটকা সবজি গন্তব্যে সরবরাহ করতে পারব। এতে গ্রাহক যেমন ভালো মানের সবজি পাবে আমরাও ভালো দাম পাব। সঙ্গে সবজি পচে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে না।

জেলা সদরের সাগান্না এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান জানান, আমার ৭ বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করি। অনেক সময় দেখা যায় ফেরি ঘাটে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকে থাকার কারণে সময় মত গাড়ি পৌঁছাতে পারে না। এসব বিড়ম্বনার কারণে সবজি সরাসরি বাইরের বাজারে পাঠাতে পারি না। এতে আমার মত অনেক চাষির সবজি স্থানীয় ভাবে বিক্রির ফলে মেলে না ন্যায্য দাম। গুনতে হয় লোকসান।

এই কৃষক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ যদি দ্রুত পদ্মা সেতু চালু করে তাহলে খেতের সবজি আমরা যেমন দ্রুত বাজারজাত করতে পারব তেমনি দামও ভালো পাব। তখন ব্যবসায়ীরাও ঘাট অজুহাতে সবজির দাম কম দিতে পারবে না বলেন এ সবজি চাষি।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, আমাদের এ অঞ্চল সবজি প্রধান অঞ্চল। এখান থেকে ঢাকায় ট্রাকে করে পণ্য সরবরাহ করতে হয়। যার ফলে ফেরি ঘাটে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে। এতে সবজি যেমন নষ্ট হয় তেমনি ঢাকার বাজারেও দাম বেড়ে যায় কয়েক গুন। পদ্মা তে চালু হলে সময়মতো পণ্য গন্তব্যে পৌঁছানোর কারণে ঢাকা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন দূরবর্তী স্থানে সবজির দাম কমবে। গ্রাহকেরাও টাটকা সবজি খেতে পারবে। অন্যদিকে কৃষকরাও সবজির ন্যায্য দাম পাবে।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, স্বপ্নের পদ্মাসেতু চালু হলে বাজার ব্যবস্থা যেমন সম্প্রসারিত হবে তেমনি কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বৃদ্ধি পাবে কর্মক্ষেত্রে, বাড়বে মাথাপিছু আয়।