Ajker Patrika

সাংবাদিকের প্রশ্নে ৩ বছর পর শিকলমুক্ত রিফাত

সাইফুল আলম তুহিন, ত্রিশাল
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১৪: ৫৬
Thumbnail image

দীর্ঘ তিন বছর ধরে শিকলবন্দী ছিলেন রিফাত। অবশেষে সেই শিকল খুলে দেওয়া হয়েছে রিফাতের। সাংবাদিকেরা খোঁজ নিতে রিফাতের বাড়ি গেলে কথাবার্তায় তাঁকে কিছুটা স্বাভাবিক মনে হয়। সেখানে সুস্থ ছেলেকে বেঁধে রেখেছেন কেন? এমন প্রশ্নের যুক্তিসংগত উত্তর দিতে না পেরে শিকল খুলে দেন তাঁর বাবা। ত্রিশালের হরিরামপুর ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামে বাড়ি রিফাতের।

সরেজমিনে দেখা যায়, রিফাত যে গোয়াল ঘরে শিকলবন্দী ছিলেন তাঁর সামনে ও পেছনে গরু বাঁধা। গরুকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে মশারি টানানো থাকলেও রিফাতের জন্য তা ছিল না। বিছানার পাশেই খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের জন্য একটি টয়লেট। অথচ রিফাতের বাবা, সৎমা ও সৎ ভাই-বোন যেখানে থাকেন, সেখানে রয়েছে পাকা টয়লেট, গোসলখানা ও সেমিপাকা ঘর। ঘরে রয়েছে সোফাসেটসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর বয়সে একা হয়ে পড়েন রিফাত। প্রবাসে থাকা অবস্থায় বাবা ইদ্রিস আলী নানা অভিযোগে ত্যাগ করেন প্রেম করে বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী ও রিফাতের মা বেদেনা খাতুনকে। পরে অন্যত্র বিয়ে করে তাঁর মা নতুন সংসার বাঁধেন। বছর পাঁচেক পর দেশে ফিরে বাবা বিয়ে করেন দ্বিতীয় স্ত্রী মর্জিনা খাতুনকে। তবে তাঁদের নজর ছিল না রিফাতের প্রতি।

এদিকে এ অবস্থায় দাদির আশ্রয়ে অনেক কষ্টে এইচএসসি পাস করেন রিফাত। এক সময় স্বজনদের চাপে রিফাতকে বিদেশ নিতে প্রবাসী বাবা তাঁর পাসপোর্ট করান। তবে পরে রহস্যজনকভাবে তাঁকে ‘পাগল বানিয়ে’ শিকলে বন্দী করা হয়।

রিফাতের এক নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশী কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কিছুদিন পর সৎ মা রিফাতকে নিয়ে যান তাঁর বাবার বাড়ি। এরপর আবার সেখান থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। পরে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন রিফাত। বার্ধক্যের কারণে একপর্যায়ে দাদিও ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারেননি তাঁর। পরে শুরু হয় তাঁর শিকলবন্দী জীবন। বৃদ্ধ দাদি সবশেষ সম্বল গয়না বিক্রির টাকা দিয়ে চিকিৎসা করান।

তাঁরা আরও জানান, চিকিৎসা পেয়ে অনেকটা সুস্থও হয়ে ওঠে সে। তবে দাদি মারা যাওয়ার পর বন্ধ হয় চিকিৎসা। পরে নানা চাপে আবারও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন রিফাত। পরে ফের শিকলবন্দী হন তিনি।

রিফাতের মামা শামছুদ্দিন বলেন, ‘আমি রিফাতকে নিজ দায়িত্বে কয়েক দিন চিকিৎসা করিয়েছি। নিয়মিত চিকিৎসা ও যত্ন পেলে সে হয়তো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠত।’

এ বিষয়ে রিফাতের বাবা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘সে উত্তেজিত হলে গালিগালাজ করে, অনেক সময় মারধরও করে।’ এ সময় নিজের স্ত্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সৎমা কখনো আপন হয় না, এটা আপনারাও জানেন। তাকে কিছু বললে আমাকে বলে, তুমি রিফাতকে নিয়েই থাকো। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে চলে যাচ্ছি।’

তবে রিফাতের সৎমা মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘আমাকে সহ্য করতে পারে না সে। আমাকে দেখলেই গালিগালাজ করে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা শিশু ও ভবঘুরেদের নিয়ে কাজ করি। রিফাতের বিষয়টি সমাজসেবার আওতায় না পড়লেও আমি জেনেছি, তাঁর সৎমার অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার সে।’

ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত